কোন ঐতিহাসিক চরিত্র, বা ধর্মীয় পুরাণ, মিথলোজির চরিত্রগুলোর প্রচলিত কাহিনীর ভিত্তিতে চরিত্রগুলো সম্পর্কে এ্কটি সিদ্ধান্তে আসাটা যে কোন মানুষের বাক স্বাধীনতার অংশ। তাতে কে আঘাত পেলো আর কে রেগে গেলো কিছু যায় আসে না। কিন্তু কাহিনীতে নেই এমন কিছুর উপর ভিত্তি করে কোন মন্তব্য করাটা হবে বস্তুনিষ্ঠহীন। কালো কুৎসিত অসুর আসলে ভারতবর্ষের আদিবাসী যারা আর্যদের শ্রেণী বৈষম্যের শিকার হয়ে নমশূদ্রের মত হীন শ্রেণীতে পরেছে, দুর্গা আর্যদের হয়ে সেই স্থানীয় জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে বিনাশে নেমেছিলো।
আর্য আর অনার্য হাজার হাজার বছরের ব্যবধানে নিজেদের ধর্ম, সংস্কৃতিকে এমনভাবে মিশিয়ে একাকার করে ফেলেছে যে আজকের দিনে তথাকথিত নিচু জাতের হিন্দু ধার্মীকও রাবন, অসুরকে অশুভ শক্তি বলে ঘৃণা করছে। একদা রাবন-অসুরই ছিলো তাদের পূর্ব পুরুষদের রাজা। আর্য কবিদের কাছে স্থানীয় শক্তিশালী রাজারা কখনো হয়েছে রাক্ষস, দানব, অসুর…। সাধারণ প্রজারা বানর কিংবা হনুমান…। মজাটা হচ্ছে কুচকুচে কালো এলোকেশি কালি একদমই অনার্য আদিবাসীদের নিজস্ব দেবী। সেই দেবীও কালের বিবর্তণে আর্য ব্রাহ্মণদের হাতে পুজিত হয়ে আসছে।
মিথলজি অনুযায়ী দুর্গাকে যৌনকর্মী বলা আমার জানা মতে কোন সুযোগ নেই। দুর্গা পুজাতে পতিতালয়ের মাটি ব্যবহার করা শাস্ত্র অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে বিবিসিতে শাস্ত্রজ্ঞ দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য একবার বলেছিলেন, ‘এটাকে আমরা দুদিক থেকে ব্যাখ্যা করতে পারি। প্রথমটা ধর্মীয় দিক। যখন কোনও পুরুষ যৌনপল্লীতে যান, তখন তিনি বারবণিতার বাড়ির সামনে দরজায় ধর্মকে রেখে যান। অর্থাৎ তিনি যে মহিলাকে উপভোগ করতে গেলেন, সেটাকে ধর্ম স্বীকৃতি দিল না – অনৈতিক বলে আখ্যা দিল। আর যেহেতু ধর্মের অবস্থান বারবণিতার দরজায়, তাই সেই জায়গাটা পবিত্র বলে মনে করা হয়। অথচ, ব্রাহ্মণের বাড়ির মাটি কিন্তু ব্যবহার করা হয় না – যে ব্রাহ্মণরা হিন্দু ধর্মের নিয়ন্ত্রক’।
এক সময় দুর্গা পুজার দশমীতে পতিতাদের নাচ গান ছিলো এই উৎসবের অন্যতম অংশ। দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেছেন, এটা না করলে দেবী সাংঘাতিক অভিশাপ দিবেন- এটা শাস্ত্রে লেখা আছে। চন্ডী হচ্ছে দুর্গার উপর ধর্মীয় আকর গ্রন্থ। দুর্গা চরিত্রটি আসলে নারী হলেও আশ্চর্যজনকভাবে এর মধ্যে পুরুষতন্ত্রে ক্ষমতায়কে পাকাপোক্ত করা হয়েছে। দুর্গা পুজাতে পতিতালয়ের মাটি প্রয়োজন এই যুক্তিতে যে, পুরুষরা তাদের বীর্য ফেলে আসে সেখানে। তাই সেখানকার মাটিতে পুরুষের সমস্ত গুণ রয়েছে। দুর্গার মধ্যে পুরুষের সমস্ত পৌরুষীয় গুণ রাখতেই পতিতালয়ের মাটি প্রয়োজন। নারীত্বকে এতটা হীন করে আবার নারী মুর্তিতে তাকে পুজিত করাটা একমাত্র হিন্দু ধর্মেই সম্ভব।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভগবান ইন্দ্র একজন ধর্ষকও বটে! একথা মিথলোজি অনুযায়ীই বলা চলে। দেবরাজ ইন্দ্র গৌতম মুনির স্ত্রী অহল্যাকে ধর্ষণ করেছিলো। কিন্তু মিথলজি অনুযায়ী দেবী দুর্গাকে যৌনকর্মী বলার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু এতে হিন্দুদের ক্ষেপে যাওয়াটার ধরণে মুসলমানদের ছায়া দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছুকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি ভারতে মুসলমানদের নবী অনুভূতির ভাইরাস হিন্দুদেরও গ্রাস করেছে । বিজেপির রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে হিন্দু অনুভূতি যে বেশ শক্তিশালী তা অস্বীকার করা যাবে না। হিন্দুরা সম্ভবত ইসলামকে দেখে ভেবেছে তাদের বিশ্বব্যাপী রণমূর্তিই বুঝি টিকে থাকার পন্থা। এটি মারাত্মক আত্মঘাতী বিশ্বাস। আসলে ইসলামের বর্তমান যে যুদ্ধংদেহী চেহারা এটি তার ধ্বংসের আগমনী বার্তা মাত্র। ইসলামের দিন ফুরিয়ে আসছে।
আমার অনেক লেখা হিন্দু ধার্মীক সাইটে অনুমতি ছাড়াই প্রকাশিত হয় কারণ সেখানে ইসলাম ধর্মের সমালোচনা থাকে। এই লেখাটিও কোন ইসলামী সাইটে শেয়ার হতে পারে কারণ এখানে হিন্দু ধর্মের সমালোচনা আছে। আগেভাগেই তাই বলছি, মুসলমানদের দাঁত কেলিয়ে হাসার কোন কারণ নেই। ইসলামে হেরেম নামের নারীদের পোষার যে বিধান সেটিকে মিনি পতিতালয় বললে বেশি বলা হবে না। দাসীবাঁদীদের রাখার হেরেম ধনী মুসলমানদের শাস্ত্র সম্মত। এছাড়া ইসলামের প্রাথমিক যুগে কেবল মাত্র যৌনকর্ম করার জন্য ক্ষণিকের জন্য বিয়ের চল ছিলো যাকে বলা হতো মুতা বিয়ে। এই বিয়েতে কোন মেয়েকে অর্থের বিনিময়ে কয়েক ঘন্টার জন্য বিয়ে করে তারপর ভোগ করেই তালাক দিলেই সব চুকেবুকে যেতো। সম্ভবত পৃথিবীতে এটিই ছিল ধর্মীয়ভাবে পতিতাবৃত্তিকে জায়েজ করার প্রথম ঘটনা। পুরুষতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অন্যায় হচ্ছে নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে দেহদানে বাধ্য করা। ইসলাম তাকে নানা মারপ্যাচে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর সেই পেশাকে টিকে থাকতে হবে মহান সানাতন হিন্দু ধর্মের দেবীর পুজা করতে। ধর্মের কি মহিমা!…