সিদ্দিকের একটা ছবি আছে। ফেসবুকেই দেখেছিলাম। কালো একটা সানগ্লাস পড়ে হাসপাতালের বেডে কোথায় যেন তাকিয়ে আছে। ওর চোখের দৃষ্টি থাকলে একে আমরা শূন্য দৃষ্টি নাম দিতে পারতাম।
আফসোস, রাষ্ট্রের অন্ধ করে দেয়া চোখের সেই দৃষ্টির আর নাম হবে না কখনো। যেখানে চোখই নেই, সেখানে আবার দৃষ্টি…
রাষ্ট্রের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী অন্ধ করে দিয়েছে সিদ্দিককে। প্রতিবাদী সিদ্দিক আজ অন্ধ। অন্ধ সিদ্দিকের পরিণাম দেখে অসংখ্য সিদ্দিক আর কোনোদিন প্রতিবাদ করবে না। সিদ্দিক ছিলো ঝি, সম্ভাব্য প্রতিবাদকারীদের অবস্থান ছিলো বউয়ের মত। ঝি’কে মেরে বউকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এই রাষ্ট্র প্রতিবাদ পছন্দ করেনা। তারা পছন্দ করে মোসাহেবি, চাটুকারিতা, অন্ধ দলাদলি। কেউ একজন প্রতিবাদ করেছে তো তাকে যেতে হয় লাশ কাটা ঘরে কিংবা একটি সুসজ্জিত ঘরে। যেখানে তাকে চা খাওয়ানো হয়, বিস্কিট খাওয়ানো হয়,প্রশ্ন করা হয়, আপ্যায়ন করা হয়।
ঠিক বহু বছর আগে আমার বন্ধু রাশেদ সে ঘরে গিয়েছিলেন। আমরা জানতাম রাশেদ একজন মানসিক রোগী। কল্পনায় তার ব্যাপক প্রতিভা। তার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই বাছাই না করেই আমরা রাশেদের গল্প শুনেছিলাম সব বন্ধুরা মিলে।
তার বয়ানের একটা গল্পের একটা অংশ শোনাই আপনাদের।
” সেই সুসজ্জিত ঘরের মূল দেবতা খানিকটা ঝুঁকে এসে প্রশ্ন করেন, “রাশেদ সাহেব, এই দেশে ক্যাঙারুর চাষ করলে কেমন হয়?”
রাশেদ মনে মনে বলে, দেশটাই তো ক্যাঙ্গারুদের। কিন্তু সে কথা বলতে রাশেদের সাহস হয়না। খানিকটা কায়দা করে বলে, “স্যার ক্যাঙারুরা বড় বড় লাফ দেয়, দেখতে ভালো দেখায়না। দেখা যাবে লাফ দিয়ে ধুম করে আপনাদের মাথায় এসে বসেছে। দেবতারা খুব সম্ভবত রসিকতা বুঝতে পারেন না। দেবতাকে খানিকটা গম্ভীর মনে হোলো”
এই কথা বলে রাশেদ হো হো করে হাসতে থাকে।
হাসি সংক্রামক। আমরাও হাসতে থাকি। সেদিন বিকেলে আমরা প্রচুর হেসেছিলাম। ভয়াবহ সে হাসি…অট্ট, হিহি, হোহো, হিহি, হাহা ইত্যাদি…
আবার ফিরে আসি সিদ্দিকের কথায়।
সিদ্দিকের কথায় ফিরে এসেই দেখি, সিদ্দিককে নিয়ে আর কিছু বলবার নেই আমার। সিদ্দিক এখন অন্ধ। মহামান্য রাষ্ট্র এই কেড়ে নেয়া চোখ ফিরিয়ে দেবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেন নি।
এই যে চোখটা কেড়ে নিয়ে আবার ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা রাষ্ট্র করেছে, আমরা একে সাধুবাদ জানাই। আমি রাষ্ট্রের নামে একটি নোবেল পুরষ্কার বরাদ্দেরও দাবী জানাই।
রাষ্ট্র এইসব সকল পুরষ্কারের যোগ্য।
[ উপরের লেখাটি একটি গল্প। এগুলো সব কল্পিত লেখা। গল্পের নাম “সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একজন খারাপ লোক”]