আজও শিউরে ওঠে মানুষ

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বর্বর জঙ্গি হামলার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ভয়াবহ ওই ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারীসহ চারজন নিহত হন। কিন্তু গত এক বছরেও শেষ হয়নি মামলার তদন্ত কাজ। সে দিনের ঘটনা মনে করে আজও শিউরে ওঠে এলাকার মানুষ।

গত বছরের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজ শুরুর আগে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে। জঙ্গিদের চাপাতির কোপে পুলিশের দুই কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম মারা যান। আহত হন ১২ পুলিশ সদস্য। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। উভয় পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক। আটক করা হয় জঙ্গি শফিউল ও স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম ওরফে তানিমকে। ৪ আগস্ট ময়মনসিংহের নান্দাইলে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শফিউল নিহত হন।

ঘটনার তিন দিন পর ১০ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করে। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় জাহিদুল ইসলাম ওরফে তানিম ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে আটক জঙ্গি শফিউলের আশ্রয়দাতা আনোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জের কারাগারে আছেন। স্থানীয় নীরেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, শোলাকিয়ায় হামলাস্থলের অনেক বাড়ির দেয়ালে এখনো রয়েছে বুলেট ও গ্রেনেডের আঘাতের চিহ্ন; যা দেখে এলাকার মানুষ এখনো শিওরে ওঠে।

শোলাকিয়া হামলা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান বলেন, এ হামলায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নব্য জেএমবির নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। তিনি হামলার অস্ত্র ও মদদদাতার তথ্য দিয়েছেন। এদের শনাক্ত করা ও আসামিদের ডিএনএ প্রোফাইলের পুরো প্রতিবেদন পাওয়া গেলে দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

মাকে হারানোর স্মৃতি তাড়া করে শুভদেবকে

হামলার সময় গোলাগুলিতেনিহত স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের পরিবারকে এখনো তাড়া করছে দুঃসহ সেই স্মৃতি। ঝর্ণা রাণীর ছোট ছেলে শুভদেব (১১) গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে বলে, এখনো মায়ের আঁচলের চাবির আওয়াজ তার কানে বাজে। নিজ ঘরের দেয়ালে মায়ের ছবি এবং গুলির চিহ্ন দেখে সারাক্ষণ কান্না করে শুভদেব।

নিহত ঝর্ণা রাণীর স্বামী গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক স্থানীয় বিড়ি কারখানায় কাজ করেন। তাঁদের বড় ছেলে ঢাকায় একটি কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক। গৌরাঙ্গ নাথ বলেন, তখন বড় ছেলের চাকরিসহ অনেক কিছুর আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।