আবারো মুহম্মদ আবারো ধর্ম অবমাননার ইস্যু এবং আবারো যথারীতি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ময়াউৎসব। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায় সম্প্রতি। ফেইসবুকে হযরত মুহাম্মদকে নিয়ে কথিত কটুক্তির অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। একই অভিযোগে এর আগেও বাংলাদেশের কয়েক জায়গায় হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। এই প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। এরকম ঘটনা আরো ঘটবে বাংলাদেশে। কেন? কারণ অবাধ ধর্মের চাষ করছি আমরা। জঙ্গি দমন করছি কিন্তু জঙ্গিদের সূতিকাগারে জল সিঞ্চন করে যাচ্ছি। ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাতেই ইসলামীতকরণ করে ফেলছি। শরীয়া আইনের আদলে ৫৭ ধারার মত আইনকে কঠিন করে তুলছি। ধর্মের বিষদাঁত ভেঙ্গে ফেলার বদল সেই দাঁতকে মুজবুত করে তুলছি। আখেরে এসব আমাদের কি দিবে? বৌদ্ধ মন্দির, হিন্দু মন্দির একের পর এক হযরত মুহাম্মদের প্রতি ‘কটুক্তিতে’ তার ভক্তরা হামলে পরবে। ধর্মের এই বিষদাঁত ভেঙ্গে না দিলে এই ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে। আমাদের ঈমানী জোশ দিনকে দিন এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে তখন মুহাম্মদ লাগবে না, শফিকে কটাক্ষর অভিযোগেই হামলা হতে শুরু করবে। তারপর পাড়া মহল্লার ইমাম-মুয়াজ্জিনকে কটুক্তির অভিযোগেও পুড়ে যেতে পারে কোন জনপদ…।
কেন বার বার হিন্দু আর অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর হযরত মুহাম্মদকে কটুক্তির অভিযোগে হামলা হচ্ছে? পাকিস্তানে খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘুদের উপর ঠিক একই কায়দায় ‘হযরত মুহাম্মদের প্রতি কটুক্তির’ অভিযোগ আনা হয় শরীয়া আইনে ।এই অভিযোগে শিশু বালক পর্যন্ত রেহাই পায়নি।পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হয়ত এখন অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে দেখতে হবে।একই রকম পরিস্থিতি শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।অনলাইনে একটা আওয়াজ তোলা হচ্ছে, “ওরা নাস্তিক না, ওরা ইসলাম বিদ্বেষী “ছুপা হিন্দু”! ফেইসবুকে ব্লগে যারা ইসলামকে সমালোচনা করে লেখে তারা আসলে “ইসলাম বিদ্বেষী ছুপা হিন্দু”- এই আবিষ্কার কিন্তু শুধু ফারাবী গংরাই করে না অধুনা উৎপন্ন “মডারেট নাস্তিক” পর্যন্ত এ ব্যাপারে একমত! মানে হিন্দুত্ব লুকিয়ে অনলাইনে ইসলামের নবী ও আল্লাকে হেয় করছে কিছু হিন্দু! তাহলে এ কথা বলা যায়, কুমিল্লায় যে অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলো তাকে সমর্থন করা না করার আগে সবাই একমত যে এটা কোন হিন্দুর কাজ হতেই পারে?
মুসলিম মাত্রই সব সাম্প্রদায়িক আর হিন্দু বিদ্বেষী জেহাদী এ রকম মনে করাটাই অসুস্থতা। বৌদ্ধ মন্দির আর হিন্দু মন্দির ও তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করলে তারা সবাই খুশি হন না। কিন্তু কোনভাবে এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে যে ‘এই হিন্দুগুলি অনলাইনে ইসলামের নবীকে নিয়ে কটুক্তি করে’ তাহলে এই সিম্পিথিটা আর থাকবে না। আর তখনই “সুধাংশু তুই পালা” পরিস্থিতি অনেক সহজতর হয়ে যাবে। শতভাগ “মুসলিম বাংলা” যাদের স্বপ্ন তাদের এখন প্রথম ও একমাত্র টার্গেট হিন্দু খেদাও! তাই উদার মুসলিমদের মনোভাবও হিন্দু বিরোধী করতে একের পর এক কথিত হযরত মুহাম্মদের বিরুদ্ধে কটুক্তির অভিযোগ আসতে থাকবে। আর এভাবেই একের পর এক হিন্দু অধ্যুষিত জনপদ পুড়তে থাকবে…।
এই ইসলামের বিষ দাঁত শুধু হিন্দু না শেষ পর্যন্ত মুসলিমদেরও কামড়াবে। এই বিষাক্ত কামড় থেকে কেউ রক্ষা পাবে না। আজ “ছুপা হিন্দু” যারা খুঁজছেন (কেন শুধু ইসলামকে সমালোচনা করা হয় এই শোকে কাতর “ছুপা নাস্তিকরা”) তারা শতভাগ “মুসলিম বাংলায়” তখন আর কোন অজুহাত খুঁজে পাবে না। পাকিস্তানে শরীয়ার বিষাক্ত কামড় খাচ্ছে নিরহ মুসলিমরাও। পাকিস্তানে সংখ্যালঘু শূন্য করে তো শেষ রক্ষা হয়নি। আজ ইসলামের বিষ দাঁত মুসলিমদেরই কামড়ে ধরছে। আমরা সে সর্বনাশা পরিণতির দিকেই এগুচ্ছি। এরচেয়ে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে ! সুধাংশুদের তাড়িয়ে আপনি আমি কেউ এই বিষ থেকে মুক্ত হবো না…। ধর্মের বিষ দাঁত ভেঙ্গে না দিলে সে একদিন দংশন করবেই।তা সে বিধর্মীই হোক আর স্বধর্মীই হোক…।