পার্বত্য চট্রগ্রাম, শান্তিবাহিনী, সেটেলার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এইসব ইস্যুগুলো সব সময় আমার জন্য কৌতূহলের। এইসব কৌতূহল মেটাতে বাজারে এইসব বিষয়ের উপর মোটামুটি সব বই আমি কিনেছি এবং পড়ে দেখেছি। আমি নিশ্চিত পুঁথিগত আমার এই জানাশোনা বা বিদ্যা এগুলো কোনোটিই আসলে এই অঞ্চলের সমস্যাকে বুঝবার জন্য যথেষ্ঠ নয়।
জনসংহতি বা ইউ পি ডি এফ এর নানাবিধ দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে আমার যেমন বিরুদ্ধচারণ রয়েছে তেমনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ে সাধারণ যে অধিবাসীদের উপর নিপীড়ন করে সেটি নিয়েও রয়েছে আমার প্রবল আপত্তি ও ঘৃণা। এই অঞ্চল বিষয়ক যে কোনো লেখা পড়লেই অনুধাবন করা যায় যে সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে কিভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ সেনাকে এই অঞ্চলে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নির্যাতনের জন্য এর থেকে দুঃখের আর কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক পর্বে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও পাহাড়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে আসলে পার্থক্য কোথায়? পাহাড়ের সাধারণ মানুষেরা “অসাধারণ” শব্দটির প্রতিনিধিত্ব করে আসলে। তাঁদের জীবন যাপন, খাদ্য, সংস্কৃতি প্রত্যেকটি বিষয় অদ্ভুত সুন্দর এবং আমাদের এই সমতলের “ভদ্রলোক” দের জন্য শিক্ষনীয়। পাহাড়ী এলিট, রাজনৈতিক উচ্চাকাংখী বাটপার আর সেনাবাহিনী এই তিন প্রজাতি মিলে এইখানকার সাধারণ মানুষের জীবনকে সঙ্গীন করে তুলেছে।
পাহাড়ের সরল সাধারণ মানুষদের ধরে ধরে সেনাবাহিনী গুম করে ফেলে, মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষন করে, ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এইসব প্রত্যেকটি জিনিস পাকিস্তানী আর্মিদের কর্মকান্ডের সাথে মিলে যায়। জনসংহতি কিংবা ইউ পি ডি এফ এই দুইটি দলের মধ্যে পড়ে পাহাড়ের মানুষের অধিকারের প্রশগুলো হারিয়ে গেছে। এই অঞ্চলের মানুষ কেন এত পিছিয়ে? এসবের কোনো জবাব নেই। মাঝখান দিয়ে ভূমিহীন সেটেলারদের এই অঞ্চলে ঢুকিয়ে দিয়ে অযথা কেওয়াজ তৈরী করে রাখা হয়েছে সেই ১৯৭৬ সাল থেকেই।
আজকে পত্রিকার রিপোর্টে পড়লাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশে কি কি ব্যবসার সাথে জড়িত। আটা ময়দা সুজি সিমেন্ট এমন কোনো ব্যবসা নেই যে এই সেনাবাহিনী করে না। সাড়ে চার লাখ সৈনিক বসিয়ে রাখা, হাজার হাজার কোটি টাকা এদের পেছনে বরাদ্দ দিয়ে একটি সরকারকে হয়ত টিকিয়ে রাখা যায় কিন্তু এতে করে বাংলাদেশের কি লাভ হয়? সীমান্তে প্রতিদিন ভারত কত বাংলাদেশীকে খুন করে কিন্তু ব্যারাকে অলস বুক ডন দেয় সেনাবাহিনী আর পাহাড়ে নিরীহ পাহাড়ী হত্যা করে এই তালপাতার সেপাইরা।
অসংখ্য অন্যায় চোখ বুঁজে সহ্য করতে হয় প্রতিদিন। সেনাবাহিনী এতই নির্মম যে এদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি এই বাংলাদেশে বসে করা যায়না। মগের মুল্লুকের একটা শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে এই দেশ বেঁচে আছে।