“পড়েছি মুঘলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে”- এই প্রবাদের মধ্যেই আছে মুসলমানের হাতে হিন্দুর প্রতারিত হয়ে গরুর মাংস খাওয়ার ইতিহাস। এই প্রবাদটি গড়ে উঠে মূলত মুসলিম শাসনে ব্রাহ্মণ রাজকর্মচারীকে গরুর মাংস খাওয়ানো বা তার ঘ্রাণ নিতে বাধ্য করে জাত মেরে ইসলাম গ্রহণের উপর। এই ধরণের মুসলিমদের বলা হয় ‘পীরালী মুসলমান’। মাওলানা আকরাম খাঁরা ছিলেন এমনই পীরালী মুসলমান। মধ্যযুগের কবি ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ গ্রন্থের দুটো লাইনে তখনকার মুসলিম শাসকদের মনোভাব কি ছিল তার কবিতায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন এভাবে- “আমার বাসনা হয় যত হিন্দু পাই/সুন্নত দেওয়াই আর কলমা পড়াই”। কবিতাটা রচিত সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কালে যখন সেনাপতি মানসিংহ প্রাতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন জাহাঙ্গীরের হয়ে। বুঝা যাচ্ছে ‘মুসলমান’ করার নানা রকম উগ্র বাসনা কতকাল আগে থেকে বহাল তবিয়তে ঐতিহ্য ধরে জারি আছে!
হিন্দুর সঙ্গে দুষ্টুমি করে তাদের গোপনে গরুর মাংস খাইয়ে দেয়া মুসলিমদের উচ্চমার্গের রশিকতা। রশিকতা শেষে মুসলমানের জ্ঞানগর্ব বক্তিমা- গরুর মাংস খাইলে কি মরে যাবি নাকি? তোদের ধর্মে গরু খাওয়া নিষেধ না জানিস? কত হিন্দু গরুর বিরিয়ানী খায় দেখলাম হোটেলে লুকাইয়া লুকাইয়া… ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এইসব ঠাট্টা ইয়ারকি ছাড়া মুসলমানরা কিন্তু অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে কক্ষনো আঘাত করে! নিজের অনুভূতিতে কেউ আঘাত করলেও তাই একদম সহ্য করে না। শুকোর খাওয়ানো দূরের কথা, শুকোর খাও বললেই দাঙ্গা লেগে যেতে পারে। অন্যকে গরুর মাংস খাইয়ে এরাই বিদেশে গেলে “হালাল শপ” খুঁজে যাতে হারাম শুকোরের চর্বি বা মাংস খেতে হয় না! শ্রেষ্ঠ ধর্মের মানুষ বলে কথা!
আগে একবার লিখেছিলাম হিন্দুদের গরুর মাংস নিষিদ্ধ নয়। বাল্মিকি রামায়নে রামের গরুর মাংস খাওয়া কথা লেখা আছে। সেটা বাদ দেন, আজকের যুগে মানুষ কোন খাবার নিয়ে (যা তার আশেপাশে সবাই খায়) তাকে দেখে নাক কুঁচকাবে সেটা কোনভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তার মানে এই বলছি না বুয়েটে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছাত্রদের টার্গেট করে গরুর মাংস খাইয়েছে বলে হিন্দুরা ধেই ধেই করে নাচুক। এই ঘটনায় যে নোংরা সাম্প্রদায়িক দাঁত কেলানো বিদ্বেষটা আছে আমি তার প্রতিবাদ করছি।