কাবাঘরের উপর শিবকে বসিয়ে ছবি এডিট করেছে একজন মুসলমান। এই মুসলমানরা কোন সম্প্রদায়কে ফাঁসাতে কাবাঘরে আগুন পর্যন্ত লাগাতে দ্বিধা করবে না। রামপুরায় মন্দিরে আগুন লাগানোর উদ্দেশ্যে একদল ধার্মিক মুসলমান কুরআন ছিড়ে তাতে আগুল লাগিয়েছিল বছর খানেক আগে। শিবিরের মেসে কুরআন ছিড়ে ধরা যারা পড়েছিল তারা কেউ ইহুদী বা হিন্দু ছিল না। এমনকি মদিনাতে মসজিদকে ভেঙ্গে মূলমুত্র ত্যাগের স্থান যারা করেছিল তারা স্বয়ং নবীর লোকজন ছিল। শুধুমাত্র ধার্মীকদের পক্ষেই সম্ভব নিজেদের ‘পবিত্র’ জিনিসকে নিজেদের স্বার্থে নিজেরাই পায়ে দলিত করতে। কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি পাচারকারী দলে ধার্মীক হিন্দুর অভাব নেই। কুরআন ছিঁড়ে তাতে আগুন দিলে যে কি কিছু হয় না সেটা মুসলমানদের চেয়ে আর কে বেশি জানে!
নাসিরনগরের জাহাঙ্গীর নামের আল্লার সৈনিক যাকে কাবাঘরে শিবকে বসানোর অভিযোগে ধরা হয়েছে তার বিষয়ে মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া কি? জাহাঙ্গীরের বাড়িঘরে কি হামলা চালানো হবে? বলছি না এটি করা উচিত, কিন্তু বরাবরই দেখে এসেছি মসজিদে বোমা মেরে একদল মুসলমান মুসল্লি মেরে ফেললেও অন্য মুসলমানদের তৌহদী চেতনা ঘুমিয়ে থাকে। সৌদি আরব ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে শত শত মুসলমানকে মেরে ফেললেও বাইতুল মোকাররমে কোন তরঙ্গ উঠে না। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত পাড়াতে ফরিদ উদ্দীন মাসউস কোন হিন্দু শিবসেনাদের ভয়ে নয়, কোন ইহুদীর হুমকিতেও নয়, তার ধর্মীয় ভাইদের ভয়েই ঢাকাতে ঘরে বসেছিলেন। ফরিদউদ্দিন মাসউদরা ভাল করেই জানে ঈদের নামাজ পড়াকে দারুল হার্ব রাষ্ট্রে (যা এখনো ইসলামী শাসনে আসেনি) হারাম বলে মনে করে তাদেরই একদল মুসলমান ভাইরা। তবু রোজ রাতে ইহুদীদের ইসলামের শত্রু, নরকের কীট গালি দিযে এরা ঘুমাতে যায়…।
রসরাজ কাবাঘরকে অবমাননা করেনি এটি জেনেও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের কিছু যায় আসে না। রসরাজের ধর্মীয় পরিচয়টিই তার অপরাধ। জেল থেকে বের হলেও তাই রসরাজের জীবন কোন শান্তিবাদীর চাপাতির আঘাতে নিভে যেতে পারে। তার পরিবার ভয়েতে আগেই দেশ ছেড়েছে। যদি মহামান্য সরকার বাহাদুরের দয়া হয় তাহলে রসরাজের মুক্তি মিললেও এদেশে যে তার ঠাই হবে না সেটা নিশ্চিত। কিন্তু গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীরের কি হবে? কিছুই হবে না। এদেশে মন্দিরে হামলা করে নির্বিচারে মূর্তি যারা ভাঙ্গে তাদের ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে রাষ্ট্রই রেহাই দেয়। আজকেই রাজবাড়ীতে ৫টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ১২টি মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কাবাঘরে শিবের ছবি পোস্টের সময় রসরাজ বিলে মাছ ধরতে গেলেও আমাদের অনুভূতি ৩০০ বাড়ি আর ১৫টি মন্দির মুহূর্তে গুড়িয়ে দিয়েছিল। এখন জাহাঙ্গীর দোষী প্রমাণিত হলেও কিন্তু জেল থেকে ঠিকই বেরিয়ে আসবে এবং তার ভাইদের সঙ্গে মিশে যাবে। কারণ দেশটি জাহাঙ্গীদের। হেফাজত-আহলে সুন্নত, সেলিম ওসমানদের। এমনকি ধর্মীয় পরিচয়ে রোহিঙ্গাদেরও কিন্তু শ্যামলকান্ত্রি, রসরাজদের নয়…।