জেগে উঠবে ভূমিপুত্ররা

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলোর নাম শুনলেই বুঝা যায় এই নামগুলো রেখেছিল এই অঞ্চলে বসবাস করা জাতিগুলো তাদের ভাষাতে। থানচি, লামা, রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশরী, ঘুমধুম, দোছড়ী…। সাঙ্ঘু নামের একটি নদী আছে। চেঙ্গি, থ্যাগা, হরিণা, কাসালং, সুবলং, চিংগ্রী, রেনখিয়াং… ।

আমেরিকারও মাত্র একটি রাজ্য বাদে সবগুলো রাজ্যের নাম তাদের আদিবাসীদের ভাষায় রাখা। সম্পদ আর শিকারের লোভে একদিন এখানে ইউরোপীয়ানদের আগমন ঘটেছিল। স্থানীয় অধিবাসীদের ঝাড়ে নির্বংশ করে গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। তারপরের ইতিহাসটা খুব মজার। রেড ইন্ডিয়ানদের নির্মুল করে সেই ভাগ্যান্বেষী সাদারাই ব্রিটিশ উপনিবেশকে খাজনা দিতে অস্বীকার করে স্বাধীনতার লড়াই করে পৃথিবীর ইতিহাসে গ্রেট আমেরিকান জাতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে…

আমরাও এক মহান জাতি। প্রথমে আমরা হিন্দুদের খেদিয়ে পাকিস্তান করেছিলাম। তারপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা এক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান এক জাতিতে পরিণত হই। সঙ্গে চলতে থাকে বিদুৎ উৎপাদনের নামে শত শত আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত করা। পর্যটনের নামে জমি কেড়ে নেয়া। একই সঙ্গে চলতে থাকে ধর্মীয় পরিচয়ে দেশ ত্যাগ করতে সরকারী-বেসরকারী প্রচেষ্টা। এরমেধ্য দেশ স্বাধীন করার এক মহান সংগ্রামে আমরা লিপ্ত হই। পৃথিবীর মহান জাতিদের মত আমরাও অনেক ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীনতা অর্জন করি। একই সঙ্গে অব্যাহত রালি আদিবাসী, ধর্মীয় পরিচয়ে সংখ্যালঘু বিতাড়ণ। গবেষকরা বলছেন এইদেশে একসময় হিন্দুসহ ধর্মীয় পরিচয়ের জনগোষ্ঠি, জাতিগত জনগোষ্ঠিরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে…। আমেরিকার রাজ্যগুলোর মতই হয়ত তখন গোপালগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, শিবপুর, দুর্গাপুর… থানচি, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি… কেবলই ভূমিপুত্রদের স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে? নাকি জেগে উঠবে ভূমিপুত্ররা?

আমরা দিনকে দিন এক মহান জাতিতে পরিণত হচ্ছি। আমাদের উন্নয়ণ নিযে বিশ্ববাসী এখন কথা বলছে। একদিন এদেশের মানুষ মধ্যম আয়ের দেশের অধিবাসী হবে…। ততদিনে আমরাও রক্তের দাগ মুছে ফেলব পৃথিবীর সব গ্রেট জাতিদের মত। বিশ্ববাসী জানবে, বাংলাদেশের মুসলমানরা এক মহান জাতি, উন্নয়নের রোল মডেল…। ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি তখন পালন করারও প্রয়োজন হবে না…।

…নাকি জেগে উঠবে ভূমিপুত্ররা?