রসরাজের ফেসবুক পোস্ট রসরাজের নয় ( ডয়েচে ভেল থেকে নেয়া)

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু যুবক রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে যে আপত্তিকর ফেসবুক পোস্টের অভিযোগ তুলে হিন্দুদের ওপর হামলা চলছে, সেই ফেসবুক পোস্ট তার নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা৷ তবে তদন্ত চলছে৷

সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফোর-ফাইভ ক্লাস পাস ঐ যুবকের ফটোশপে কাজ করার মতো দক্ষতা নাই৷ আমরা সরেজমিন তদন্তে ধারণা করছি, নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়ন বাজারের একটি সাইবার ক্যাফে থেকে এ কাজ করা হয়েছে৷”

এদিকে রবিবার নাসিরনগরে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও বলেন, ‘‘রসরাজ দাস ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার ঐ ছবি আপলোড করেনি৷ গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছবিটি ঢাকা থেকে পোস্ট করা হয়েছে৷ কারা এই ছবিটি পোস্ট করেছে, তার তদন্তও চলছে৷ এই ছবিটি এখন ফরেনসিক ল্যাবে আছে৷ নাসিরনগরের দু-চারটা লোক এই ষড়যন্ত্র করছে৷”

রসরাজের বাড়ি নাসিরনগর সদর থেকে ১৬ কিমি. দূরে হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে৷ ২৮শে অক্টোবর তার ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট করা হয়৷ পরদিন ২৯ অক্টোবর বিকেলে স্থানীয়রা তাকে ধরে মারধোরের পর পুলিশে দেয়৷ তবে সেই সময়ই তার ফেসবুক থেকে পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চওয়া হয়৷ স্থানীয় এবং রসরাজের পরিচিতরা জানান, ‘‘রসরাজ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে৷ সে পেশায় একজন জেলে এবং হরিপুর ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক৷”

নাসির নগরের স্থানীয় সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি৷ সোমবার সকালে পুলিশের তদন্তকারীরা আমাকে জানান, তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে রস

Bangladesch Durga Puja (Getty Images/AFP/M. U. Zaman)

রাজ ঐ বিক্রিত পোস্টটি দেননি৷ বরং প্রথম দিন থেকেই সে পোস্ট দেয়ার কথা অস্বীকার করে আসছিল৷ পুলিশ জানিয়েছে যে, কারা রসরাজের ফেসবুক ব্যবহার করে পোস্ট দিয়েছে তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তাদের আটেকের চেষ্টা চলছে৷ তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নাম আপাতত প্রকাশ করছে না৷”

তিনি আরো জানান, ‘‘রসরাজের গ্রামের বাড়ি হরিণবেড়ে তার বাবা-মা ভাই-বোন সবাই ভয়ে অন্যত্র চলে গেছেন৷ কোথায় গেছেন কেউ বলতে পারে না৷ স্থানীয়রা জানান, ঐদিন রসরাজকে বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টের কথা বলে বাড়িতে ডেকে আনা হয়৷ যে সময়ে ফেসবুক পোস্টের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময়ে সে বিলে মাছ ধরছিল৷ তার একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন আছে৷ তবে ফোনটি সে বাড়িতে রেখে মাছ ধরতে গিয়েছিল৷”

আটকের পর রসরাজের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়৷ বিচারপতি মানিক বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্ত না করে রসরাজের বিরুদ্ধে মামলা এবং রিমান্ড আইনসম্মত হয়নি৷ আদালতে তাকে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে দেয়া হয়নি৷ একজন আইনজীবী রসরাজের পক্ষে ওকালতনামা সই করে আদালতে দিলেও, আদালত তার ওকালতনামা গ্রহণ করেননি৷ শতাধিক আইনজীবী হই চই করে যা দাবি করেছেন, আদালত সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন৷ আইনজীবী না থাকলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আদালত তাকে কথা বলার সুযোগ দেন৷ কমপক্ষে জিজ্ঞেস করেন যে, সে দোষী না নির্দোষ৷ আদালত তাও জানতে চায়নি৷ এটা বেআইনি৷ তাই আমরা রসরাজের আটক এবং রিমান্ড হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷”

 ‘তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তারা যে রসরাজ ঐ বিক্রিত পোস্টটি দেননি’

উজ্জ্বল চক্রবর্তী জানান, ‘‘রসরাজের পক্ষে একজন মুসলিম আইনজীবী দাঁড়াতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাকে অন্যান্য আইনজীবীরা বসিয়ে দেন৷ পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে রসরাজের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড আরো কয়েকজনের কাছে আছে৷ আর ক্ষমা চেয়ে যে পোস্টটি দেয়া হয়েছিল, তাও রসরাজ দেয়নি৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে আশুতোষ নামে তার এক আত্মীয় দেয়৷”

তিনি জানান, ‘‘হরিপুর বাজারের যে সাইবার ক্যাফের নাম এসেছে যেখান থেকে রসরাজের ফেসবুকে ছবি আপ করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ তবে পুলিশ সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলেনি৷ সাইবার ক্যাফেটি ঘটনার পর থকে বন্ধ আছে৷”

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘‘২০১২ সালের অক্টোবরে রামুর বৌদ্ধপল্লী এবং মন্দিরে হামলার ব্যাপারে উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ যুবক ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছে বলে গুজব ছাড়ানো হয়েছিল৷ পরে দেখা যায় সে আদৌ কোনো পোস্ট দেয়নি৷ কিন্তু তারপরও গত চার বছর ধরে সেই বৌদ্ধ যুবকের কোনো খোঁজ নাই৷ তার পরিবার জানে না সে কোথায় আছে৷ আমরা তাই রসরাজের নিরপত্তা নিয়েও শঙ্কিত৷ এ কারণেই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি তাকে আইনি সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷”

প্রসঙ্গত, নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর এই হামলার মধ্যেই খাগড়াছড়ি এলকায় ফেসবুক ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের একটি অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় পুলিশ৷ বুধবার রাতে আটক করে নাম সাগর হাসেন (২৫) নামে এক যুবককে৷

সাগর ফটোশপের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন একটি ছবি তৈরি করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি কুনেন্টু চাকমার নামে চালিয়ে দেয় তার ফেসবুকে৷ আটকের পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ৷ এ ঘটনায় সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে৷