বিচারপতি সিনহা ইস্যু

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে অপসারনকে শুধু বিচারবিভাগের সাথে পার্লামেন্টের সমস্যা হিসেবে ভেবে দেখলে সমস্যা হতে পারে। এটাকে দেখতে হবে অন্য আলোয়।  সিনহার কাছ থেকে আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুর ভীরুতা আশা করেছিলো। জাতিতে মনিপুরি ধর্মে হিন্দু- হাত কচলে আওয়ামী লীগের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে আর ধর্মনিরপেক্ষতার জয়ধ্বনি দিবে। সিনহা সাহেবের কাছে এমনটাই আশা করেছিলো আওয়ামী লীগ। কর্তা যেমন রায় চান তা অনুমাণ করতে হবে। সেই মোতাবেক রায় লিখতে হবে। এমনটা যে আওয়ামী লীগ ভাবে সেটা তাদের নেতা-নেত্রীদের কথাতে প্রকাশিত হয়েছে। হিন্দু নেতাদের সিনহা সাহেবের প্রতি আক্রশ থেকে প্রমাণিত হয়েছে এদেশের হিন্দুদের সংখ্যাগুরুরা কি রকম চেহারায় দেখতে চায় সুবিধাবাদী হিন্দু নেতাদের সেটা মুখস্ত। কিন্তু প্রধান বিচারপতি তার সততা, বিচার বিভাগের প্রতি কমিটমেন্ট তাকে সরকারের ইশারা দেখেও না দেখে থাকতে বাধ্য করেছে। তিনি একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে এবং এই রায় দেয়ার সমস্ত দায় তাকে একা বহন করতে হচ্ছে। এর জেরে দেশ থেকে রহস্যজনকভাবে বিদায় নিচ্ছেন। তার বিদেশ গমনের মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুনীর্তি, নৈতিক স্খলন ইত্যাদি অভিযোগ তুলে ‘সুপ্রিম কোর্ট’ বিবৃত দিয়েছে গণমাধ্যমের কাছে।

সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আজকের প্রধানমন্ত্রীর মামলা লড়ার জন্য কোন আওয়ামী লীগের উকিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্ষিয়ান নির্ভিক রফিকুল হক মামলা লড়তে রাজি না হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হয়ে আদালতে কথা বলার কেউ থাকত না। বিচার বিভাগ কি সেসময় সেনা শাসনের কঠিন পরিস্থিতিতে একটু হলেও জনগণের বিচার পাবার অধিকারকে বাঁচায়নি? নেতারা কি শেষ আশ্রয় স্থল হিসেবে এখানেই ন্যায্য বিচার আশা করেননি? দিন যে এরকমই সব সময় থাকবে তা তো নয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সিনহার সঙ্গে সরকার যে আচরণ করলো, বিচার বিভাগকে যেভাবে হস্তক্ষেপ করল তাতে যে নজির সৃষ্টি হলো- তাতে ভবিষ্যতে আজকের ক্ষমতাধর নেতা-নেত্রী এই বিচার বিভাগের উপর কিভাবে আস্থা রাখবে? বিচার বিভাগে যে রাজনীতিকরণ হয়ে গেলো, ক্ষমতার পালাবদলে এখানেও তখন সরাসরি রঙ লাগবে। আদালতের সিঁড়ি মাড়িয়ে ন্যায় বিচার না পেয়ে তখন এরা কাকে দুষবে? যে গর্ত আজ খোড়া হলো ভবিষ্যতে সেখানেই তাদের পড়তে হবে।

একটা পদ্মা সেতু আর কয়েকটা উড়াল সেতু এই জাতিকে কোন ভবিষ্যতে নিয়ে যাবে? দেশের বিচার বিভাগ ধ্বংস হবার দাড়প্রান্তে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রভাব বিস্তার, সরকারের আন্তর্জাতিকভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ততা আগামীদিনের বাংলাদেশের একটা ছবি যেন স্পষ্ট দেখা যায়। এই দায় কি বর্তমান সরকার এড়াতে পারবে ইতিহাস থেকে? এদেশের নিউক্লিয়াসে যে বড় ধরণের গন্ডগোল বাধানো হলো তার দায় বর্তমান নেতানেত্রীরা নিবে না?

জাতীয় শিক্ষাক্রম সাজানো হয়েছে এই সরকারের সময়। এ পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, ইসলামী মৌলবাদী মানসিকতার পাঠক্রম প্রাইমেরি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো দায় আওয়ামী লীগের একার। নবম-দশম শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা বইতে সরাসরি জিহাদের চ্যাপ্টার পড়ানো হচ্ছে। একদিকে সরকার প্রধান জঙ্গিবাদ নির্মূল করার কথা বলেন সব সময় অন্যদিকে মুসলমানদের কেন জিহাদ করা ফরজ তা স্কুলে পড়ানো হয়। মেয়েদের গাহস্থ বিজ্ঞান পড়ানোর নামে শরীয়া মোতাবেক মেয়েদের ঘরই তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ও নিরাপদ- এইরকম ইসলামী মাইন্ড জোর করে শিক্ষাক্রমে প্রবেশ সরকারের চোখ এড়িয়ে হয়েছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এইরকম জঘন্য সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা টানা বড় ধরণের ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে। একটি জাতিকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করে সংখ্যাগুরুদের কাছে সংখ্যালঘুদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া, এদেশে অর্ধেক মানবসম্পদের নারীদেরকে অবদমিত করে রাখার চেষ্টা জাতিগত নির্মূলের একটি নিবর কার্যক্রম।