কুরবানী নামক পশুহত্যার উৎসবের আসল কাহিনী

 

কয়দিন পরেই আসছে মুসলমানদের পশুহত্যার উৎসব ” কুরবানী ”।
যেই উৎসবে শুধুমাত্র আল্লাহ নামক এক কল্পিত ঈশ্বরকে খুশি করতে লক্ষ লক্ষ পশু হত্যা করা হবে। যেই আল্লাহ অবলা পশুর রক্তে খুশি হন তিনি কেমন স্রষ্টা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গবেষকদের মতে এভাবে নির্বিচারে পশু হত্যা করতে থাকলে ভবিষ্যতে পোকা মাকড় খেয়ে প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে হবে।

যাই হোক আসল ঘটনায় আসি। মুসলিমরা দাবি করে ইব্রাহিম ইসমাইল কে কুরবানি করতে চেয়েছিল,এবং খ্রিস্টানরা দাবি করে ইব্রাহিমের বড় ছেলে ইসহাককে কুরবানি করতে চেয়েছিল। কে সঠিক? এই কুরবানি নামক হত্যাযজ্ঞটি যে একদমই উর্বর মস্তিস্কের কল্পনা তা আমার এই পোস্টেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

প্রথমে এই আয়াতটি পড়ুনঃ
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন। সূরা আস সাফাত-৩৭:আয়াত ৯৯-১১১

তখন ইব্রাহীম যার বয়স ৮৫ ও সারাহ যখন অতিশয় বৃদ্ধ হয়ে গেছিল কিন্তু সন্তান জন্ম নিচ্ছিল না , তখন সারাহই ইব্রাহীমকে তার দাসী হাজেরার সাথে সহবাস করতে বলে ও সন্তান উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করে। সেখানেও বিয়ের কথা নেই। কিন্তু যখন হাজেরা ইসমাইলকে প্রসব করে তখন সারাহও জান্যতে পারে যে সে নিজেও মা হতে চলেছে বা হবে। তখন সারাহ আর হাজেরাকে সহ্য করতে পারে না। কারন দাসীর গর্ভের এক অবৈধ সন্তান তার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে বা অন্য সব কিছুতে ভাগ বসাবে তা সারাহ মানতে রাজী হয়নি। সেকারনে সে হাজেরাকে বাড়ী থেকে নির্বাসন দেয়ার জন্য ইব্রাহীমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
ঠিক এ প্রচলিত ঘটনাটাকেই ( যা মোহাম্মদের আমলে বাইবেলে লিখিত ও প্রচলিত ছিল) হাদিসে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে- তিনি বলেন যখন ইব্রাহীম ও তাঁহার স্ত্রী (সারাহ) এর যা হইবার তা হইয়া গেল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হইল । অর্থাৎ সারাহ ও ইব্রাহীমের মধ্যে ব্যপক মনোমালিন্যের উদ্ভব ঘটে হাজেরা ও তার সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে। উল্লেখ্য, হাজেরা ইব্রাহীমের বৈধ স্ত্রী হলে সারাহ কখনই এ ধরনের আচরন করতে পারত না , বা হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসন দিতে ইব্রাহীমকে বাধ্য করাতে পারত না। তখন ইব্রাহিম সারাহ এর চাপে পরে হাজেরাকে নির্বাসন দিতে বাধ্য হয় যদিও সে কল্পিত আল্লাহর আদেশের কথা বলে। আল্লাহর তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই হুদাই একজন বাচ্চাসহ মাকে নির্বাসন দিতে বলবে। শুধুমাত্র সারাহ কে খুশি করতেই এই নির্বাসন।

এখন আসুন এই হাদিসটি পড়িঃ
ইবনে আব্বাস বর্নিত: তিনি বলেন যখন ইব্রাহীম ও তাঁহার স্ত্রী( সারাহ) এর যা হইবার তা হইয়া গেল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হইল, তখন ইব্রাহীম শিশুপূত্র ইসমাইল ও ইসমাইলের মাতা হাজেরাকে লইয়া বাহির হইয়া গেলেন। তাহাদের সাথে একটি মশক ছিল আর তাতে পানি ছিল। ইসমাইলের মাতা মশক হইতে পানি পান করিতেন আর শিশুপূত্রের জন্য তাহার দুগ্ধে প্রাচুর্য আসিত। শেষ পর্যন্ত ইব্রাহীম মক্কায় আসিয়া গেলেন এবং হাজেরাকে তার শিশুপূত্র সহ একটি বৃক্ষমূলে বসাইয়া রাখিলেন। তারপর তিনি তার নিজ স্ত্রী সারাহ এর নিকট ফিরিয়া চলিলেন। তখন ইসমাইলের মাতা তাহাকে অনুসরণ করিয়া কিছুদুর গেলেন ও ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসা করিলেন- হে ইব্রাহীম আমাদিগকে কাহার নিকট রাখিয়া যাইতেছেন? ইব্রাহীম বলিলেন- আল্লাহর নিকট। হাজেরা বলিলেন- আমি আল্লাহর নিকট থাকিতেই রাজি।
ইবনে আব্বাস বলেন, জুরহুম গোত্রের একদল লোক প্রান্তরের মধ্য দিয়া পথ অতিক্রম করিতেছিল, হঠাৎ তাহারা দেখিল, একদল পাখী উড়িতেছে। তাহারা যেন তাহা বিশ্বাসই করিতে পারিতেছিল না।তাহারা বলিল, যেখানে পানি থাকে সেখানেই তো এইসব পাখি উড়িতে দেখা যায়। তখন তাহারা পাখী উড়িবার স্থলে তাহাদের একজন লোক পাঠাইল। সে তথায় গিয়া দেখিল সেখানে পানি মৌজুদ আছে। তখন সে দলের লোকদের নিকট ফিরিয়া আসিয়া তাহাদিগকে পানির খবর দিল। তারপর তহারা সকলেই হাজেরার নিকট আসিল এবং তাহাকে বলিল, হে ইসমাইল জননী! আপনি কি আমাদিগকে আপনার প্রতিবেশী হওয়ার বা আপনার সাথে বসবাস করিবার অনুমতি দিবেন ? হাজেরা তাহাদিগকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এইভাবে অনেক দিন চলিয়া গেল। তারপর হাজেরার শিশুপূত্র প্রাপ্ত বয়স্ক হইলেন, তখন তিনি জুরহুম গোত্রেরই এক কন্যাকে বিবাহ করিলেন। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর নির্বাসিত পরিজনের কথা ইব্রাহীম এর মনে উদয় হইল। তিনি তাহার স্ত্রী সারাহ কে বলিলেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিজনের কথা জানিতে চাই। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর ইব্রাহীম তাহাদের নিকট আসিলেন এবং সালাম দিলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন- ইসমাইল কোথায় ?ইসমাইলের স্ত্রী বলিল- তিনি শিকারে গিয়াছেন।————— সহী বুখারী, বই-৫৫, হাদিস নং-৫৮৪

তার মানে হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসন দেয়ার পর থেকে ইব্রাহিম ও ইসমাইলের দেখা হয় অনেক পরে যখন ইসমাইল ইতিমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ও বিয়ে করে ফেলছে। এর আগে তাদের মধ্যে কোন দেখা সাক্ষাত হয়নি। এবং তখন ইসহাকই ছিল ইব্রাহিমের সবচেয়ে প্রিয় যেহেতু তার নিজের স্ত্রীর সন্তান এবং তাকেই কুরবানি দেয়ার কথা, ইসমাইলকে না।

এতদিন ধরে মূর্খ মুসলিমরা শুধু একটি কাল্পনিক গল্পকে সত্যি মনে করে লক্ষ লক্ষ পশু হত্যা করে যাচ্ছে। সেই পশুর দামই যদিও তাদের কাছে মুখ্য, একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সমগ্র মুসলিম জাতি। এই ভন্ডামির শেষ কোথায়?