হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব হয় এই ভারতীয় উপমহাদেশেই। প্রায় ৭ হাজার বছর ধরে এখন পর্যন্তও বিদ্যমান রয়েছে। তাই এই ধর্মের অনুসারীদের সনাতন ধরমালম্বি বলা হয়। ধর্ম যত পুরনো হয় তার মধ্যে কুসংস্কারই বেশি দেখা যায়। তার উপর বর্ণ বৈষম্য আছেই। প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ১৯ শতকে রাজা ত্রাভানকড় নিম্ন বর্ণের মহিলাদের দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গের কাপড় নিশিদ্ধ করেছিলো। আর কেউ যদি পরিধান কড়তে চায় তাকে কড় প্রদান কড়তে হবে যা মুলাককারাম কড় নামে প্রচলিত ছিল।
শিশু বিবাহ এবং বহু বিবাহ এর দুটোরই অনুমোদন আছে হিন্দু ধর্মে । ৯ বছরের মেয়ে শিশু কে দেবী ভাবা হয়। আর ধর্মীয়রীতি অনুযায়ী ওটাই বিয়ের সঠিক বয়স। তাই এখনও বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। শুধু কি তাই, যৌতুক এর বিধান থাকায় অনেক জীবন এবং সম্পর্ক অকালেই শেষ হয়ে গেছে। এখানেই ক্ষান্ত নয়, মেয়েরা পিতার সম্পত্তির কোনও মালিকানা পায়না। এমন কি স্বামী মারা যাবার পর মহিলাদের আজীবন সাদা কাপড় পড়তে হয়, এবং সারাজীবন নিরামিষ ভোজী হয়েই জীবন কাটাতে হয়। পুরুষদের দ্বিতীয় বিবাহে বাধা না থাকলেও মহিলাদের ব্যাপারে বিষয় টি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। এমনকি প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পরও তার দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি নেই।
নিম্নবর্ণের কোন ব্যাক্তি উচ্চ বর্ণের ব্যাক্তির গৃহে প্রবেশ করতে পারবেনা। ভুত প্রেত বিশ্বাস। মন্ত্র ওঝায় এখনও মানুষের বিশ্বাস অনড়। গো মূত্র কে হিন্দুরা খুবি পবিত্র ভাবে। বিশ্বাস করে পানও করে, যদি ব্যাপার টা যতটা হাস্যকর ততটাই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সূর্য গ্রহণ কিংবা চাঁদ গ্রহণ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। গ্রহণের সময় রাহু নামের এক রাক্ষস নাকি চাঁদ সূর্যকে গিলতে যায় এবং এটাকেই হিন্দুরা গ্রহণ বলে জানে। স্বয়ং বিষ্ণু নাকি রাক্ষসের গলা কেটে দিয়েছিল তাই গিলে ফেললেও পেট না থাকায় চাঁদ সূর্য নাকি আবার বেরিয়ে আসে।সব চাইতে আশ্চর্য লেগেছিল যখন হনুমান তার বাহুর বগলে সূর্যকে লুকিয়ে রেখেছিল এই কাহিনী টা জানলাম।
প্রাচীন ভারতীয়দের কাছে সূর্য শুধুই একটি দীপ্তময় বস্তু ছিল। এর আকার আয়তন সম্পর্কে কোনও ধারনা ছিলনা। হিমালয়ের কৈলাস পর্বতকে সকল দেবতার আবাসস্থল হিসাবে উল্লেখ করা থাকলেও মানুষ দেখেছে বাস্তবে সেখানে কিছুই নেই। দেবতার জন্য উৎসর্গের নামে পশু হত্যার বীভৎস আয়োজন অবলা জীবের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন মাত্র। সৃষ্টিকর্তা যদি প্রতিপালক ই হয় তবে তার সন্তুষ্টির জন্য কেন প্রাণী হত্যা করতে হয় এ বিষয় টি একেবারেই অস্পষ্ট। হতভাগ্য পশুর প্রতি ঈশ্বরের কেন যে নিষ্ঠুর হলেন তার যুক্তি দিতে হিন্দু শাস্ত্র ব্যর্থ। হিন্দু ধর্মে বর্ণিত রামায়ণের কাহিনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অয্যোধ্যার রাজা রাম চন্দ্র যাকে ঈশ্বরের অবতার হিসাবে দেখা হয় উনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বিনা অপরাধে বনবাসে প্রেরণ করেন। রামের ছোট ভাই লক্ষণ রাবণের বোন সুপরনখার নাক এবং কান কেটে দেয়।
স্ত্রী জাতীর প্রতি হিন্দু মহাত্মাদের এমন আচরণ খুবি প্রশ্নবিদ্ধ। বাস্তবিক পক্ষে অনেক কুসংস্কার আর অবাস্তবিক রীতি নিয়ে এই হিন্দু ধর্ম । এই ধর্মে পুরুষ আগ্রাধিকার পায়। নারীর অধিকার সম্পর্কে খুবি উদাসীন। ঈশ্বর কেন শুধু পুরুষের প্রতি দয়ালু হবেন তা কেউ বলতে পারেনা। হিন্দুরা দেবতার পূজার বা উপাসনার জন্য ওই দেবতার মূর্তি তৈরি করে। অথচ তাদের বেদে উল্লেখিত আছে যে ঈশ্বর নিরাকার। নিরতাকার ঈশ্বরের মূর্তি হয় কিভাবে তার উপর এক এক দেব দেবী চার থেকে হাজার হাতের সমারোহে বেষ্টিত।
গত দশকেই ভারতের উত্তর প্রদেশে এক মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে গ্রামবাসী জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এখনও ভারতের অনেক স্থানেই নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা চরম নির্যাতন ও অবহেলার শিকার। সামাজিক ভাবে এদের কোন মর্যাদা দেয়া তো দুরের থাক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। যার করনে অনেক নিম্ন বর্ণের হিন্দু স্ব ধর্ম ত্যাগ করে ধর্মান্তরিতও হচ্ছে। হিন্দুরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে। তারা ভাবে আত্মা মৃত্যুর পরও সুরক্ষিত থাকে এবং নতুন শিশুর জন্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসে। আগুন, পানি, বাতাস, সূর্য, চাঁদ, বৃক্ষ সবই দেবতা হিসাবে আরাধনা করা হয়। বাস্তবিকভাবে একজন নাস্তিক হিসাবে মানবিক দিক দিয়ে হিন্দু ধর্মের বিবেচনা করলে দেখা যায় শুধু পুরুষের আধিপত্ততা। নাস্তিকতা কোনও অদৃশ্য শক্তির আরাধনা নয়। নাস্তিকতা মানবতার কথা কথা বলে, লিঙ্গের বৈষম্যতা পদদলিত করে মানবতাকে তথা মানুষকে দিয়েছে সম্মান। অন্ধ ধর্মীয় গোঁড়ামির কুসংস্কারের সংকীর্ণ পথ থেকে সরিয়ে মানুষ কে আলোর পথে নিয়ে আশাই নাস্তিকতার সার্থকতা।