২০১৩ সালে যখন প্রথমবার হেফাজত ঢাকায় এসেছিল তখন তাদের দাবি ছিল মূলত নাস্তিকদের ফাঁসি। ১৩ দফার বাকিগুলো যেন-তেন, নাস্তিকদের ফাঁসির দাবিই যেন তাদের মূল দাবি। এর পেছনে বিএনপি-জামাতের ইন্ধন কারোই অজানা নয়। তারা চেয়েছিল এমন একটা সমাবেশ থেকে সরকার ফেলে দেবে।
আওয়ামীলীগ তখন হার্ড লাইনে গিয়েছিল। রাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সরিয়ে তারা ঢাকাকে মুক্ত করে ফেলেছিল। সেটা কতোটা তাদের দলীয় মূলনীতি সমুন্নত রাখতে করেছিল, আর কতোটা পিঠ বাঁচাতে সেটা নিয়ে এখনো প্রগতিশীল মহলে প্রশ্নবিদ্ধ৷ তবে আওয়ামিলীগ প্রতিহত করেছিল সেটা ইতিহাসলব্ধ ফ্যাক্ট।
তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক মৌলবাদের উত্থান ভালোভাবেই হয়েছে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় তখন। এর আগে ইসলামী মৌলবাদ ছিল, এখন মৌলবাদী রাজনৈতিক ইসলাম এসেছে বাজারে। জামায়াত নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ময়দানে নামে নি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তারা তাদের ঘৃণ্য আদর্শকে নিয়ে ধীরে ধীরে আগাচ্ছিল। এক পা এগুলো দুই পা পেছানো লেগেছে তাদের। তাদের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ের সাথে আপোষ করতে হয়েছে। তবে পুরোটা সময় জুড়েই তাদের উদ্দেশ্যে পৌছানো ছিল তাদের দৃঢ় লক্ষ্য। গণতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল তাদের।
হেফাজত এই মুদ্রাই অন্য পিঠ। তাদের কোনো পথঘাট জানা নেই। তারা সোজা লক্ষ্যে পৌছাতে চায়। এতে যদি তাদের রক্ত দেয়া লাগে বা রক্তপাত করানো লাগে তাতে কোনো সমস্যা দেখে নি তারা। জামায়াতের সাথে তাদের পার্থক্য হচ্ছে জনবলে। কওমী মাদ্রাসার দরিদ্র আর এতিমদের তারা চট করে মাঠে নামিয়ে দিতে পেরেছে।
২০১৩র পরে লীগের স্ট্যান্স বদলাতে শুরু করলো। তারা ভাবলো হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা কমাবে। কিছু ইসলামিস্ট ভোট লাভ করবে। কিন্তু সাপ যে রূপেই আসুক, সাপ তো সাপই। সাপের মণি হচ্ছে মুহাম্মদের প্রচারিত ধর্মটা।
২০১৪ সালের পর লীগ হেফাজতকে আত্মীকরণ করতে সফল হলো। আত্মীকরণ কে কাকে করলো সেটা আজ পরিষ্কার। তৎকালীন বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নিজেকে হেফাজতের আমীর আল্লামা শফীর ঘনিষ্টজন হিসাবে নিজেকে প্রচার করলেন। নির্বাচনের পরে আল্লামা শফীর দোয়া নিতে চলে গেলেন হাটহাজারী। সেক্যুলার দেশের কিং মেকার তখন আল্লামা শফী।
আল্লামা শফী মারা যাবার আগে তার দাবি সব প্রায় আদায় করে গেছেন। আওয়ামিলীগের লাভ বলতে ক্ষমতায় নতজানু হওয়া ছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান লাভ দেখি না আমি।
সেক্যুলার সমাজ ভয়ে তটস্থ এখন। মার্ক অফ বিষ্ণুর মুহাম্মদী সাপ যদি লীগকে গিলে খায়, তবে যে দেশ সিরিয়া আর ইরাকের চেয়ে আলাদা হবে না।