বাংলাদেশে হিজাব মহামারি খুব নতুন এবং সংক্রামক একটা রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানি হিজাব, ইরানি হিজাব, মিশরীয় হিজাব, আরো কত ধরণের যে হিজাব বাজারে চলে তার কোনো হিসাব নাই। গত দশকের মাঝামাঝিও এই অবস্থা ছিলো না৷ হঠাৎ করে হিজাবের বেড়ে যাওয়া সমাজবিজ্ঞানীরা বুঝেন কি না, বা ভাবেন কি না, বা ভাবার প্রয়োজন মনে করেন কি না আমি জানি না। তবে সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি দেখি, ভাবি।
হিজাব মহামারি বিএনপি জামাত শাসনামলেও ছিল না৷ ২০০৭ এর পরে হঠাৎ করে হিজাব বেড়ে গেল, এর পরে হিজাব অনেক বেড়ে গেল। ইসলামে নারীর চুল তার যৌনাঙ্গের মর্যাদা পায়।
গ্রামাঞ্চলে বোরকার প্রচলন ছিল আগে। নারীরা বস্তাবন্দি হয়ে রাস্তায় বের হতেন। চোখ পর্যন্ত দেখা যেত না তখন। অবস্থাসম্পন্নরা কালো পাতলা কাপড়ের বোরকা বানাতেন। দরিদ্ররা শাড়ীর কাপড়, বা গজ কাপড়ে বোরকা বানাতেন। দরিদ্রদের যখন দেখতাম এক রঙা কাপড়ে বা শাড়ীর কাপড়ে বোরকা বানাচ্ছেন, বয়সের ভারে ন্যুজ্ব মহিলারাও নিজেদের ঢেকে চলছেন তখন খুব খারাপ লাগতো। তারা এই বোরকার টাকা দিয়ে কী কী করতে পারতেন, সেটা ভাবতাম আমি।
সেখান থেকে হিজাবে নেমে আসাটা অনেকের কাছেই উন্নতি মনে হতে পারে। আসলে কিন্তু তা না। হিজাব জিনিসটা ধর্মীয় গোড়ামীকে মূলধারায় আর লিঙ্গবৈষম্যেকে স্টাইল স্টেটমেন্ট বানিয়ে দিয়েছে। হিজাব ফ্যাশনের দোকান চালু হয়েছে এখন। উটের কুঁজের মত হিজাব থেকে শুরু করে জাতীয় পতাকার হিজাবও এখন বাজারে পাওয়া যায়। আমি ভাবি শাড়ীর কাপড়ে বোরকা বানানো নারীদের সামনে স্টাইল স্টেটমেন্টে পরা হিজাবিরা কি জবাব দেবে?
হিজাব ইজ মাই চয়েস বুলি আওড়ানো মানুষেরা কী জানেন না যে হিজাবের চয়েস এনেছে মুহাম্মদ? তারা কি জানেন মুহাম্মদের কাছে নারী ছিল একটা পণ্য? যুদ্ধের পর সে বন্দী নারীদের পণ্যের মত বন্টন করতো? হিজাব মানুষকে মুক্তি দেয় যারা বলেন, তারা কি জানেন মুহাম্মদ কত স্বাধীন নারীকে দাস বানাতে বাধ্য করেছে? তারা জানলে কী হিজাব পরতেন?
তো, যা বলতে চাচ্ছিলাম। হিজাব একটা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। একটা সার্কেলের একজন হিজাব শুরু করলে পুরো সার্কেলে তার অনুকরণে অনেকে হিজাব শুরু করেন। কারণ ফ্যাশনেবল হতে হবে তো! বন্ধুদের মত হয়ে চলতে হবে। এভাবেই এই মহামারি ছড়ায়। এখন বোরকা খুব কমই দেখা যায়। সব হিজাব।
তবে আশার কথা হিজাব এখনো সংসদে মেইনস্ট্রিম হয় নি। কতদিন সংসদের বাইরের ফুটপাতে থাকবে সেটাই দেখার বিষয়।