বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, আওয়ামীলীগের পিতা না৷

বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের কাছে আওয়ামীলীগের গ্রহণযোগ্যতা সবসময়েই বেশি ছিল। বিকল্পদের তুলনায় তো অবশ্যই বেশি ছিল। আওয়ামীলীগ বহুশ্রেণীর পাক্কা রাজনৈতিক দল। ক্ষমতায় থেকে আওয়ামিলীগ জন্মায় নি, রাজপথে, আন্দোলনে আওয়ামীলীগ জন্মেছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আওয়ামীলীগ।

৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয় ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি বাঙালিদের টেস্টামেন্ট। মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আওয়ামীলীগের জাতীয় ঐক্য প্রজেক্টের ফলাফল ছিল।

স্বাধীনতার পরবর্তীতে  আওয়ামীলীগ প্রণিত ৭২ এর সংবিধান ছিল পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যবস্থা৷ সেক্যুলার, সোশ্যালিস্ট, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক দেশ হবে বাংলাদেশ। এটাই ছিল বাঙালির স্বপ্ন। স্বপ্নের সোনার বাংলা।

কিন্তু ৭৩ সালের নির্বাচনে অতি উৎসাহী লীগ তাদের নৈতিক উচ্চাবস্থা হারালো। নির্বাচনে কারচুপি করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না আওয়ামীলীগের। বঙ্গবন্ধুর ছবিই তাদের নৌকা পার করতে পারতো, কিন্তু নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বা জনপ্রিয়তা দেখাতে লীগের অনেকে চুরি করলো ভোটে।

এই স্পেসিফিক ইতিহাস তোলার পেছনে একটা কারণ আছে। ৭৩ এর নির্বাচনের আওয়ামিলীগ আর বর্তমান আওয়ামীলীগ একই রূপে আছে৷ তখনও প্রভাব বিস্তার ছিল নির্বাচনে জেতার মূল প্রভাবক। এখনো তাই৷ তখনো শেখ মুজিবের আশেপাশের শকুনেরা তাকে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল, এখনো তাই। তখনও আওয়ামীলীগকে অপরাজেয় মনে হয়েছিল, এখনো তাই…

আওয়ামীলীগ একটা ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক দল হবার কথা ছিল। আওয়ামীলীগ তা হয়নি। ২০২০ সাল মুজিববর্ষ৷ সে মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে উদযাপন করবে আওয়ামিলীগ। তবে খুব সন্তর্পণে তার কম্যুনিজম প্রীতিকে এড়িয়ে গিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে এড়িয়ে গিয়ে। বরং, ইজতেমার জমি দেয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বানানো, হজ্জ্বের সুবিধা আদায় ইত্যাদি আলোচ্য হবে। তার ধর্মনিরপেক্ষতা আর থাকবে না। মুজিব এখন শুধু মুসলমান বাঙালির জাতির জনক।

অথচ মুজিবকে যারা হত্যা করেছে তারা এই ধর্মনিরপেক্ষতা, এই সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করেই হত্যা করেছে। আওয়ামীলীগ যখন সমাজতান্ত্রিক মুজিব, ধর্মনিরপেক্ষ মুজিবকে লুকিয়ে মুসলমান মুজিবকে সামনে নিয়ে আসে, তখন জিতে যায় মুজিবের খুনিরাই৷ পার্থক্য হচ্ছে এখন তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে মুজিবের কন্যা নিজেই।

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর আলোচনায় একবারও সমাজতন্ত্র শব্দটি ব্যবহার করেনি আওয়ামীলীগ। মুজিববর্ষ চলে যাবে। তবে বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটা অংশ লুকানোর অধিকার আওয়ামিলীগের নেই৷ বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, আওয়ামীলীগের পিতা না৷ আওয়ামীলীগের পিতা ভাসানি৷