সহি ইসলাম কবে পদক্ষেপ নিবে?

বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে অনেক আগে। তবে সেটা ব্যক্তিগত ইসলাম। প্রাতিষ্ঠানিক ইসলাম এসেছে মোঘলদের হাত ধরে। এই অঞ্চলে হিন্দু-বৌদ্ধদের আকৃষ্ট করতে ইসলাম অনেক মধ্যমপন্থার ধর্ম হিসেবে আসছে। সূফীবাদী ইসলাম, গান, ছবি কবিতা, মানব প্রেমে অধ্যুষিত আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি ছিল সে ইসলামের মূল।

তবে তখনও ইসলামের কট্টরবাদ ছিল। বৃটিশরা আসার পরে কট্টরবাদীদের স্থান দিল সামাজিক প্রতিষ্ঠানে। তাদের রাজনৈতিক কূটচালের একটা ধাপ ছিল এটা। হক্কানী আলেমরা তখন রাজনীতির ময়দানের খেলোয়াড়। মাদ্রাসা ছাত্রদের ঐক্যে তাদের মেরুদণ্ড এখন শক্ত।

বৃটিশরা যাওয়ার পর উত্তর ভারতীয় মুসলিমদের ষড়যন্ত্রে বিশ্বের প্রথম ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের জন্ম হলো। মুসলিম সংখ্যাগুরুদের দেশ কতোটা খারাপ হতে পারে তার প্রথম ঝলক দেখলো বিশ্ব ১৯৭১ সালে। ইসলাম কোনো সাম্যবাদী ধর্ম না যে সেটার দেখা পেল সবাই। বাঙালিরা পাকিস্তানিদের মতো পিওর মুসলিম না, তারা হিন্দুয়ানি। এই ধারণায় ৩০ লাখ লোক হত্যা করতে, ২-৪ লাখ নারী ধর্ষণে তাদের গায়ে বাধলো না।

তারা একে গাজওয়ায়ে হিন্দের অংশ বলে চালিয়ে দিল। হিন্দুস্তানকে হারিয়ে পৃথিবীতে খেলাফত কায়েমের প্রথম ধাপ নিলো তারা। অবশ্য হেরে গেলো। তবে গাজওয়ার লক্ষ্যে করা কোনো পাপই পাপ না। গাজওয়ার যুদ্ধে যারা গেছে সবাই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের বলা হলো, আরে এই ইসলাম তো আসল ইসলাম না! পাকিস্তান বললেই হলো? অথচ একই কাজের উদাহরণ নবীর জীবনে আছে।

আবারো, আমাদের দেখানো হলো মুসলিম হয়েও উগ্রবাদী না হলেও চলে। গান লিখো, ছবি আঁকো। জিয়ার আমলে গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে দেশে উদারপন্থী ইসলামের উদাহরণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু বিষাক্ত সাপের ছোবল জোরেই দিক, আর আস্তেই দিক, বিষ তো লাগবেই।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে জঙ্গিবাদীদের মাথাচাড়া শুরু হলো। কারণ আর যাই হোক, তারা আওয়ামীলীগকে সহ্য করতে পারে না৷ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ইসলামিস্টরা থাকলে তাদের তৎপরতার প্রয়োজন নাই, কিন্তু সেক্যুলাররা থাকলে টিকে থাকার দায়ে তারা জঙ্গিবাদ চালানোকে বেছে নিল।

বিএনপি জামায়াতের আমলে শায়খুল হাদিস আজিজুল হকের পেয়ারের খেলাফতের তালেবানি প্রশিক্ষণ পাওয়া যোদ্ধারা বাংলাদেশে আক্রমণ শুরু করলো। তখন আমরা দেখলাম আরেক ধরণের ইসলাম। তখনো আমাদের বলা হলো, আসল ইসলাম এমন না! আসল ইসলাম কেমন, এটাও আমাদের কেউ বলে নাই তখন।

জঙ্গিবাদের কবলে যখন দেশ পুরোপুরি চলে আসছে তখন তাদের নিষিদ্ধ করে আর নেতাদের হত্যা করে নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। কিন্তু গাছ না কাটলে যে ফল ধরা বন্ধ হবে না! গাছ কাটার সাহস নাই কারোই।

এর পরে সালাফী টেরোরিস্টদের দেখলাম আমরা আইসিসের হামলার মাধ্যমে। খুব বেশি সময় লাগলো না তাদের আমাদের ভূখণ্ডে আসতে৷ তখনও আমাদের বলা হলো এই ইসলাম আসল ইসলাম না৷

আরে ভাই আসল ইসলাম কোনটা তাইলে? হামলা করলে ইসলাম না, গান লিখলেও না। গলা কাটলে ইসলাম না, ছবি আঁকলেও না। বোমা ফুটালে ইসলাম না, আধ্যাত্মিকতায়কও ইসলাম নাই। সালাফিরা ভুল, দেওবন্দীরা ভুল, ওহাবিরা ভুল, সুন্নিরা ভুল, মাজারবাদীরা ভুল, পীর পন্থীরা ভুল, হেযবুত তওহীদ ভুল।

শিয়ারা বলে সুন্নীরা ভুল, সুন্নি বলে শিয়ারা। এরা দুই দলেই একমত কাদিয়ানীরা ভুল। মাজহাব চারটা, আরেকদল বলে কোনো মাজহাবই নাই৷ ৭৩ ফেরকার মধ্য ৭২টাই যারা পথভ্রষ্ট হবে, তারা অন্যদের জীবন ধারণ শিখায়। তাদের কথা না মানলে মেরে ফেলে! কী বিপদ, কী আজিব।