মোডারেট মুসলিম ধর্মকে আড়াল করে কৌশলে

মোডারেট মুসলিমদের কথা ভাবতে গেলে আমই ভাবি এরা আরও অদ্ভহুত প্রকারের মানুষ। এরা সব দেখবে বুঝবে এবং বলবে এগুলো আসলেই যা লেখা আছে এগুলো কোন ভাবেই আজকালকার সমাজের সাথে খাপ খায় না। এভহেবে চলতে গেলে আজকালকার সমাজের সাথে খাপ খাওয়ান যায় না। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড এ চলাই যাবে না। কজের ক্ষেত্রে, অফিস আদালতে, অনেক বিদেশিদের সাথে চলতে হয়। এরা যদি আমাদের এই ধর্মের অন্ধকার দিক গুলোকে কখনো ক্ষতিয়ে দেখতে চায় তাহলে মান সম্মান আর বোধ হয় থাকবে না। কি এক অসহ্য টানাপোড়নের মধ্যে পরে যান সবাই। সত্যি ব্যাপারগুলো আসলেই মান হানি কর।

মধ্যপন্থী মুসলিমরা সাধারণত কুরআনের অমুসলিমবিদ্বেষী আয়াত সমূহ দেখে বিব্রতবোধ করেন। কুরআনের অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা, তাদেরকে নিয়ে কটুক্তি করা, গালি দেওয়া তারা মেনে নিতে পারেন না। এটা তাদের মধ্যে থাকা প্রচলিত ভুল ধারণার বিরুদ্ধে যায়। তারা নিজেদের মনকে বুঝ দিতে দাবি করেন, ‘এসকল আয়াতে সকল অমুসলিমদের নির্দেশ করে কিছু বলা হয়নি, বরং কেবল তাদের নির্দেশ করা হয়েছে যারা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিল’। তাছাড়াও তাদের বহুল প্রচলিত অভিযোগ, ‘ইসলামের সমালোচকরা আসলে কোন আয়াত কোন সময়ে কোন প্রসঙ্গে কোন প্রেক্ষাপটে কেন নাজিল হয়েছিল তা জানে না বা এড়িয়ে যায়’। আমার মুসলিম ভাই-বোনদের বুঝতে হবে যে, যখন কাউকে কেবল অমুসলিম হওয়ার জন্য নির্বোধ কিংবা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব বলা হবে তখন প্রসঙ্গ বা প্রেক্ষাপটের কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি যদি কেবল মুসলিম হওয়ার কারণে কাউকে নির্বোধ বা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব বলি, তাহলে এটা বুঝতে অন্তত মুসলিমদের অসুবিধা হবে না যে আমি পৃথিবীর সকল মুসলিমকেই নির্বোধ বা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব বলেছি।

কুরআনের যে আয়াতে অমুসলিমদের বধির, বোবা এবং অন্ধ বলা হয়েছে সেই আয়াত থেকে দেখা যায় যে, কেবলমাত্র অমুসলিম হওয়া বা ইসলামের প্রতি বিশ্বাস না থাকার কারণেই তাদেরকে এমনটা বলা হয়েছে। যে আয়াতে তাদেরকে জালিম বলা হয়েছে সেই আয়াত থেকে দেখা যায়, কেবলমাত্র কাফির হওয়াই তাদের ‘জালিম’ উপাধি পাওয়ার কারণ। যে আয়াতে তাদেরকে সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব বলা হয়েছে সেই আয়াত থেকে দেখা যায়, কেবলমাত্র কাফির হওয়ার কারণেই তাদেরকে এমনটা বলা হয়েছে। যারা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেই কেবল এসব শব্দ সমূহ প্রয়োগ করা হয়েছে এমন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসিরের তাফসীর থেকে আমরা এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাইনি যে, অমুসলিমদের মধ্যে যারা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিল কেবল তাদেরকেই নির্বোধ বা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব বলা হয়েছে।

যদি ধরেও নিই যে, সত্যিকার অর্থেই কুরআনে নির্বোধ বা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব কেবল সেইসব অমুসলিমদেরকেই নির্দেশ করে বলা হয়েছে যারা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিল, তারপরও একটা সমস্যা থেকে যায়। আমি ইসলামের সমালোচনা করি বলে কয়েকজন মুসলিম এসে যদি আমার ওপর হামলা চালায় আর আমি যদি প্রাণে বেঁচে গিয়ে পরবর্তীতে ঘৃণা প্রকাশ করে বলি, “মুসলিমরা সন্ত্রাস” বা “মুসলিমরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব”, তাহলে কি কাজটা ভালো হবে? অবশ্যই সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটা কাজ হবে। তাই কয়েকজন কাফের/মুশরিকের অপরাধের জন্য “অমুসলিমরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব” বা এজাতীয় কথা বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।

তথাকথিত শান্তির ধর্মের শিক্ষা কি জঘন্য! ইসলাম ১৪০০ বছর ধরে মুসলিমদেরকে এই শিক্ষাই দিয়ে এসেছে যে, অমুসলিমরা পশুর মতো, অমুসলিমরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব। কুরআন অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী একজন মানুষ নিজের রক্ত দিয়ে কোনো মুসলিমের জীবন বাঁচালেও সে পশুর চেয়ে অধম, সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব। কুরআন অনুযায়ী, খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী একজন মানুষ সকল নির্যাতিত মুসলিমের পক্ষে লড়াই করলেও সে পশুর চেয়ে অধম, সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব। কারণ, তারা ইসলামে বিশ্বাস করে না। কুরআন অনুযায়ী, কেবলমাত্র, কাফের হওয়ার কারণে তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব, নর্দমার কীটও তাদের চেয়ে ভালো। কুরআন একজন মুসলিমকে তার প্রতিবেশী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের ভালবাসতে শেখায় না, তাদের শ্রদ্ধা করতে শেখায় না, শেখায় তাদেরকে ঘৃণা করতে। কুরআন একজন মুসলিমকে তার অমুসলিম প্রতিবেশীদের ‘নর্দমার কীটের চেয়েও নীচু স্তরের প্রাণী’ ভাবতে শেখায়। দেশের অসংখ্য মাদ্রাসা থেকে অসংখ্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থী অমুসলিমদের প্রতি এমন ঘৃণা নিয়েই বেড়ে ওঠে। সত্যিকারের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা। এমন দেশকে আমরা কিভাবেই বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলবো যে দেশে এমন শিক্ষাব্যবস্থার অস্তিত্ব আছে যে শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ধর্মের মানুষদের সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব ভেবে ঘৃণা করতে শেখায়?

নাহ আমই যতই এই নিয়ে কথা বলই না কেন, সব কিছু আপনারা বুঝবেন, পরবেন, তারপর বলবেন না তাল গাছটা আমারই। পূর্বপুরুষের ধর্ম আর যাই হক, এভাবে ফেলে দিতে তো পারি না। নিজের মতো নিজের সুবিধা মতো  কাঁটা চেরা করে একরকম জরা তালি দিয়ে পালন করলেই হল। আমাদের মতো আরও ১০ জন তো এভাবেই করে দিন আনে দিন খাচ্ছে। সমাজে টিকে থাকতে হলে এরকম একটু আদতু করতে হয় বৈকি। আমরা এর বাইরে যাই কি করে বলুন। আমরা সবই বুঝি কিন্তু সত্য কথা স্বীকার করি না। যার যেখানে ফায়দা ঠিক ততটুকুই বুঝি বাকি কিছুই বুঝি না বা বুঝতে চাইও না আমারা।