সমকামিতাকে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের প্রধান ২ই ধর্মগ্রন্থে নিষিদ্ধ বলে গণ্য করে সমাজের মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সকল মানুষদের বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করতে চাইছে। বরাত দিয়ে দিয়ে এই ধর্মগ্রন্থের আয়াত অথবা শ্লোক গুলোকে সামনে এনে বার বার বলে চলেছে সমকামিতা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় গর্হিত। এই জঘন্য পাপ কাজে যারাই লিপ্ত হবে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে। আজকাল নিজেরাই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে খুন পর্যন্ত করে ফেলছে সমকামী মানুষদের। সমকামীদের খুন করলে বিচার হয় না এই দেশে।
বাংলাদেশের লেসবিয়ান, গেই, বাইসেক্সুয়াল ও ট্র্যান্সজেন্ডার (এলজিবিটি) মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বরাবরি নীরব। গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় তাফসীর পরিষদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেছেন, “বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশে ইসলামী শরীয়তে হারাম ও নিষিদ্ধ সমলিঙ্গের বিয়েকে বৈধতা দিতে এবং বাংলাদেশের মত পীর-মাশায়েখ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে সমকামকে বৈধ দিতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক এদেশে কাজ চালাচ্ছে।”
তিনি বলেন, সমকাম ইসলামে অবৈধ ও হারাম। এটাকে পশ্চিমা বিশ্বে বৈধ মনে করলেও মুসলমানরা কখনো তা সমর্থণ করে না। ইসলামের বিরুদ্ধে নতুনভাবে চক্রান্ত করতে পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া হারাম সমকামকে এদেশের মুসলমান সমাজে ছড়িয়ে দিতে যারা এ মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তাদেরকে এদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ বয়কট করবে।
তিনি সমকামীদের ম্যাগাজিন “রূপবান” নিষিদ্ধ এবং যারা সমকামী হিসেবে পরিচয় দেয় তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় এ সকল কুলাঙ্গাররা এদেশের যুব সমাজের চরিত্র নষ্ট করে পশ্চিমাদের অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দিবে বলে বলেন তিনি। আজ বিকেলে জাতীয় তাফসীর পরিষদ বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভায় সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম উপরোক্ত কথা বলেন। ইসলামের মূল সংবিধান,কোরান ও হাদিসে সমকামিতাকে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে ও শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কুরানে সমকামীদের ‘লুতের লোক’ বলা হয়েছে নবী লুতের ঘটনাকে ভিত্তি করে। নবী মুহম্মদ এর শাস্তি নির্ধারন করে গেছেন মৃত্যুদন্ড। (আবু দাউদ ৩৮:৪৪৪৭,তিরমিযি ১:১৫২)মোহাম্মদের পরে খলিফাদের সময়ে আবু বকর ও উমর কিছু সমকামিকে জীবন্ত দগ্ধ করেছিলেন বলে জানা যায়।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার আগে পৃথিবীজুড়ে এমনকি মুসলিম দেশসমুহতেও যেসব নাফরমানী শুরু হবে তার মধ্যে একটি হল এই সমকামিতা। ধর্মগ্রন্থ আল কোরানের বিভিন্ন সুরা-আয়াতে মানুষের সমকামী-প্রবনতার বিরুদ্ধে বিচিত্র সব শাস্তি/গজবের কথা বলা আছে। পাথরবৃষ্টি, ভুমিকম্প, বন্যা………. দিয়ে আল্লা তাৎক্ষনিক ভাবে সমকামীদের মাটিতে পিশে শায়েস্তা করেন, (সুরা ৭:৮০-৮২, ২৬:১৭৩, ২৯:২৮-২৯)।
তবে, মানুষের সমকামিতাকে বৈধতা দানকারী টপ-লিস্টেড চিহ্নিত রাষ্ট্র নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, বেজিয়াম, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ কোন দেশেই পাথর বৃষ্টি বা অনুরুপ কোন শাস্তি কেন আল্লাহার পক্ষে শুরু করা এখনো সম্ভব হয় নি তা ইসলামিক গবেষণার বিষয় হতে পারে।
হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ গুলোতেও সমকামিতার কিছু অদ্ভুত শাস্তি দেয়া হয়েছে। আবার শাস্তির বিচার করলে দেখা যায় মেয়ে-মেয়ে সমকামিতার শাস্তি পুরুষ-পুরুষ সমকামিতার শাস্তির থেকে বেশী। মনুসংহিতার আইনে উল্লেখ আছে –
‘যদি কোন বয়স্কা নারী অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নারীর (কুমারীর) সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে বয়স্কা নারীর মস্তক মুণ্ডন করে দুটি আঙ্গুল কেটে গাধার পিঠে চড়িয়ে ঘোরানো হবে’ (Manu Smriti chapter 8, verse 370.)।
যদি দুই কুমারীর মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাহলে তাদের শাস্তি ছিলো দুইশত মূদ্রা জরিমানা এবং দশটি বেত্রাঘাত (Manu Smriti chapter 8, verse 369.)। সে তুলনায় পুরুষদের মধ্যে সম্পর্কের শাস্তি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বলা হয়েছে – দু’জন পুরুষ অপ্রকৃতিক কার্যে প্রবৃত্ত হলে তাদেরকে জাতিচ্যুত করা হবে (Manu Smriti Chapter 11, Verse 68.) এবং জামা পরে তাকে জলে ডুব দিতে হবে (Manu Smriti Chapter 11, Verse 175.)।
আমার প্রশ্ন ধর্ম যদি মানুষের অস্তিত্ব এবং সৃষ্টি নিয়ে কথা বলে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। যদি সবকিছু ওনার সরস্বতী করা হয়ে থাকে তাহলে উনি সমকামী মানুষদেরও সৃষ্টি করেছেন। তাহলে আমাকেও সৃষ্টি করেছেন। তাহলে যদি ওনার শকল সৃষ্টি পবিত্র হয়ে থাকে তাহলে আমি কেন অপবিত্র? উনি কেন আমাকে সমকামী করে সৃষ্টি করলেন? একটা বাচ্চা যখন জন্মায় তখন সে কি জেনে জন্মায় যে সে সমকামী? আমি তাহলে এমন করে কেন জন্মালাম? আমায় কেন উনি এভাবে সৃষ্টি করলেন? সমাজ বলে অন্যায়ের ফসল আমি। আর সত্যি যদি এ অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে আমায় যারা জন্ম দিয়েছে তাহলে শাস্তি তাদের পাওয়া উচিত আমি কেন বিনা দোষে শাস্তি পাব?