দুঃখিত, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য সমর্থন করতে পারছি না

সাম্প্রতিক সময়ে একাত্তরের ঘাতক মীর কাশেমের মামলার চূড়ান্ত যুক্তি তর্ক আপীলেট ডিভিশানের বিজ্ঞ বিচারপতিদের একটি বেঞ্চের সামনে শেষ হয়। এই মামলার বেঞ্চে অন্যান্য বিচারপতিদের মধ্যে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একজন। গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারী বুধবার (২০১৬) এই মামলার চূড়ান্ত যুক্তি তর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য হয় ৮-ই মার্চ ২০১৬।

মামলার চূড়ান্ত যুক্তি তর্ক চলাকালীন সময়ে প্রধান বিচারপতি এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য দেন যেগুলো ওইদিন নানা অনলাইন মিডিয়াতে এবং পরের দিন নানাবিধ দৈনিকে প্রকাশিত হয়। মোটামুটি যতগুলো মিডিয়াতে মাননীয় প্রধান বিচারপতির এই সকল বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে আমি চেষ্টা করেছি তার সবগুলোই মন দিয়ে পড়তে ও বুঝতে। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এক এক পত্রিকায় একেক রকম করে এসেছে, প্রকাশিত হয়েছে। পুরো ব্যাপারটাই আসলে বিভ্রান্তির এবং এটা বের করা খুবই কষ্ট সাধ্য যে প্রধান বিচারপতি এটর্নী জেনারেলের উদ্দেশ্যে কি বলেছেন আসলে।

এত সব বিভ্রান্তির মাঝেও প্রত্যেকটা নিউজ পেপার পড়ে যা বুঝেছি বা বলা যেতে পারে যে বুঝবার চেষ্টা করেছি সেটি হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবিদের উপর বেশ চটেছেন। তাঁর এই চটবার কারন ও তার প্রেক্ষিতে বলা বক্তব্যগুলোও আমি অত্যন্ত গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছি এবং সে অনুযায়ী কয়েকটি কথা বলতে আগ্রহী হচ্ছি।

এই বিচারিক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অবজার্ভেশনের একটা অভ্যাস আমার গত ৬ বছর ধরে তৈরী হয়েছে। আমি হয়ত এই বিচারের ক্ষেত্রে যে আইন ও প্রসিজিওর সেটি কোনোভাবেই এই মামলাগুলোর প্রসিকিউটর কিংবা বিচারপতিদের থেকে বেশী ভালো বুঝিনা তবে বিজ্ঞ আইনজীবি ও বিজ্ঞ বিচারপতিদের পর্যবেক্ষন করে এই পর্যন্ত যা বুঝতে পেরেছি বা শিখতে পেরেছি সেই আলোকেও আগামী ৮-ই মার্চের যে রায়টি হবে সেখানে কোনো দূর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাবার আগেই আমি এই পাব্লিক পোস্টের মাধ্যমে আমার নিজের ভাবনা তুলে ধরতে চাই। এর ফলে অন্তত পক্ষে সাধারণ মানুষ এই সুনির্দিষ্ট মীর কাশেম আলীর বিচারের ব্যাপারে কিছুটা জানবেন এবং প্রধান বিচারপতির বলা বক্তব্য কতটা যৌক্তিক সেটিও হয়ত তাঁরা বিচার করতে পারবেন।

স্বাভাবিকভাবেই আমার লেখার শিরোনাম দেখেই পাঠক কিংবা পাঠিকারা বুঝতে পারছেন আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে সমর্থন করতে পারিনি। শুধু যে বক্তব্য সমর্থন করতে পারিনি তা নয় বরং তাঁর বক্তব্যের এপ্রোচ, ইনার মিনিং, যা বলতে চাচ্ছেন সেটি সম্পর্কিত কোন যুক্তি-ই আমার কাছে যথোপযুক্ত মনে হয়নি।

কিছুদিন আগেও প্রধান বিচারপতি অবসরের পরে যে রায় লেখা যাবেনা জাতীয় মন্তব্য করেছেন আমি সেই বক্তব্যেরও তীব্র বিরুদ্ধচারন করছি। সূপ্রীম কোর্টের আপীলেট ডিভিশানে বিচারপতির সংখ্যা কয়জন আর সেখানে আগত বা রয়েছে বা চলমান, এমন মামলা কয়টি? এইগুলোর সংখ্যা আর প্রতি বিচারপতির উপর কাজের ভার কতটুকু এসব বিবেচনায় আনলে তাঁর বক্তব্যকে আমার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে হয়। একজন বিচারপতি যে বেঞ্চে বসে মামলা শুনেছেন দিনের পর দিন, যেখানে তিনি প্রতিটি নথি-পত্র দেখেছেন, সেগুলোর প্রেক্ষিতে যুক্তি শুনেছেন, বক্তব্য শুনেছেন সেই বিচারপতির অবসর নেবার সময় যদি ওই মামলার শুনানী শেষ হবার কিছুদিন পর হয় তবে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন আসতেই পারে যে ঐ মামলার রায়টি কে লিখবেন? আমাদের আপীলেট ডিভিশানের এই বিষয়ে গাইড লাইন কি? বাস্তবতা কি? প্রধান বিচারপতি কি এসব বিবেচনা করে তাঁর বক্তব্য দিয়েছেন? তিনি অবসরে যাবার আগে কি পারবেন তাঁর হাতে থাকা সকল মামলার রায় লিখে যেতে? তাঁর পক্ষে কি সেটা সম্ভব হবে?

বিখ্যাত মাজদার হোসেন মামলার রায়ও বিচারপতি মোস্তফা কামালের অবসরের পর লেখা হয়েছিলো যেখানে বিচার বিভাগের থেকে এক্সিকিউটিভ বিভাগ আলাদা করার সু-স্পস্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। প্রধান বিচারপতি এই মামলার রায় নিয়েই বা কি বলবেন? কি বক্তব্য তাঁর?

এসব ছাপিয়েও প্রধান বিচারপতি যেসব পার্টিকুলার ইস্যুতে কথা বলেছেন তার একটি হচ্ছে সুপোরিওর রেসপন্সিবিলিটি বা কমান্ড রেস্পন্সিবিলিটি। আমাদের সময় পত্রিকা তাঁর উদ্বৃতি দিয়ে বলছেন যে- মুক্তিযুদ্ধের সময় যার হাতে রাইফেল ছিলো সেই ব্যাক্তি-ই নাকি কমান্ডার, সে সময় আইন আদালত ছিলোনা সুতরাং কমান্ড রেন্সপন্সিবিলিটির প্রশ্নই আসেনা। অথচ এই বিচারপতির বেঞ্চেই মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ