একুশে আগস্ট চলে গেল। কয়েকবছর আগে এই দিনে আওয়ামী লীগের ওপর বর্বর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। সে সময়ে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায়, স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন ছিল। হামলার পরে বিএনপি থেকে যখন বলা হলো, আওয়ামী লীগ নিজেই এই বোমা হামলা করিয়েছে, হাসবো না কাঁদবো তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। প্রচুর সংখ্যক বিএনপি জামাত সমর্থক তখন নতুন নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে যাচ্ছে! কীভাবে শেখ হাসিনা নিজেই শাড়ির নিচে গ্রেনেডগুলো নিয়ে এসে জনসভায় সেগুলো মেরেছে! কীভাবে কোন কোন আওয়ামী নেতা নিজেরাই নিজেদের ওপর হামলা করেছে, আইভি রহমান নিজেই নিজেকে গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে!
কারো ওপর হামলা হলে তাদেরকেই দায়ী করার এই মুমিন্সিয় চিন্তাপদ্ধতি অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপক। যেমন ধরুন আহসানুল্লাহ মাস্টার মারা গেছেন। মুমিনগণ নির্দ্বিধায় বলে দেবে আহসানুল্লাহ মাস্টার নিজেই নিজেকে হত্যা করিয়েছে। বা ধরুন কোন মার্কিন সাংবাদিককে জবাই করেছে আইসিসের জিহাদিরা। নির্দ্বিধায় বলে দিতে হবে, ঐ মার্কিন সাংবাদিক নিজেই নিজেকে টাকা দিয়ে হত্যা করিয়েছে। জিহাদিদের আর কী দোষ? ওরা তো নিষ্পাপ! শিশুর মত! সব ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র! বাম মুমিনসগণ আবার কথাটা একটু ভিন্নভাবে বলবে। তারা সকল কিছুর মধ্যে ইসরাইল-ভারত-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আবিষ্কার করতে পারলেই কেল্লা ফতে। যেন কোরানটাও মার্কিনীরা এসে লিখে দিয়ে গেছে।
অসাধারণ এদের যুক্তিবোধ!
কারা এই হামলা করেছিল মনে আছে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সেই ধর্মান্ধ মোল্লাদেরই মন রক্ষায় সদা ব্যস্ত। আল্লামা শফীরা এখন ৩২ কোটি টাকার জমি পায়। জামাত নেতাদের বিচারের কথাও সবাই ভুলে গেছে। জামাত আওয়ামী লীগ এখন অনেক বেশি কাছাকাছি। মাঝে মাঝে কোনটা কে তা বুঝতেও ভুল হয়। সে সময়ে কারা ছিল শেখ হাসিনার পাশে? প্রগতিশীল সেক্যুলার মুক্তমনারা সেসময়ে শেখ হাসিনার পাশে ছিল। যারা তার পাশে ছিল, তারা আজ আর তার কাছে যাবার সুযোগ তো পায়-ই না, বরঞ্চ শেখ হাসিনা এখন নাস্তিক কতলে বদ্ধপরিকর। তিনি মদিনা সনদ বাস্তবায়ন করে দেশ মোল্লাতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে চান। লক্ষ লক্ষ মোল্লা পয়দা করার স্বপ্ন দেখেন। দেশে কি আর্জেস গ্রেনেড ফ্যাক্টরি দেবেন শেখ হাসিনা? নইলে এত লক্ষ লক্ষ মোল্লাদের হাতে তিনি কী তুলে দেবেন? পাঠ্যপুস্তক তো ইতিমধ্যে মোল্লাকরণ হয়েছে, এখন শুধু গ্রেনেড তুলে দেয়াই বাকি আছে।
দেশে আরো হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা বানান, পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে লক্ষ লক্ষ বোধবুদ্ধিহীন, মগজহীন মোল্লা পয়দা করুন। তারা কিছু হলেই দাঁত মুখ খিচিয়ে গ্রেনেড মেরে সব উড়িয়ে দেক, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে সব ফালাফালা করুক। আর মুক্তমনা, সেক্যুলার, অসাম্প্রদায়িক এবং নাস্তিক মানুষদের কতল আন্দোলন চালু রাখুন। কারণ তারাই সব চাইতে ভয়ংকর।