তসলিমা বিষয়ক

আমার বদ্ধমূল ধারণা, যারা তসলিমার লেখার এমন সমালোচনা করে তারা কোনদিন তসলিমার কোন বই উলটেও দেখেছে কিনা! তসলিমার সমালোচনা করার কারণ একটাই, তিনি একজন নারীকে ধর্ষিত হবার পরে সতীত্ব হারানোর লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যা করতে, নিদেন পক্ষে কান্নায় ভেঙ্গে পরতেও নিষেধ করেছেন। উলটো সেই ধর্ষক পুরুষের লিঙ্গটি কেটে দিতে বলেছেন। লোকে তাকে বেশ্যা বলবে, লোকে তাকে কুলটা বলবে, বলুক? লোকের থোরাই পরোয়া। তসলিমা সতীত্বের প্রথাগত ধারণাকেই আক্রমণ করেছেন। পুরুষের সতীত্ব বলে যেখানে কিছু নেই, সেখানে সতীত্বকে নারীর জীবনের একমাত্র সম্পদ বানিয়ে পুজো করার কী অর্থ?

তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে, ধর্ম অবমাননা। ধর্মবিদ্বেষ। বেগম রোকেয়া এ সময়ে জন্মালে তাকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হতো। রোকেয়া তার সময়ের চাইতে অনেক অগ্রসর ছিলেন, তসলিমা আছেন নিজের সময়ের চাইতে এগিয়ে। রোকেয়াকে হজম করতে এক’শ বছর লেগে গেছে, তসলিমাকে হজম করতে হয়তো দু’শো বছর লেগে যেতে পারে। যেই সমাজে এখনো “মেয়েছেলে হয়ে পুরুষের মুখে মুখে কথা!” বলে নারীকে ধমক দেয়া হয়, সেই সমাজে তসলিমা এক আতংক সৃষ্টি করা নামই বটে। উনি থাকলে মেয়েরা পুরুষের মুখে মুখে কথা বলতে সাহস করবে, প্রয়োজনে কষে লাথিও মারবে। তাই সব কিছুই সহ্য করা যাবে, তসলিমাকে একদমই সহ্য করা সম্ভব নয়!

তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে ভারতের সম্ভবত বিহারে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি হয়েছে তার একটি টুইটের কারণে। তসলিমা তার টুইটারে লিখেছিলেন, “মুমিনেরা স্বর্গে গিয়ে যৌনতার জন্য নাকি ৭২ টা ভার্জিন বেশ্যা পাবে। আর একজন পুণ্যবতী নারী পাবে তার সেই পুরনো হাবড়া স্বামীকেই। তাই সমতা বিধানের জন্য সকল মুসলিম নারীর উচিত, পৃথিবীতেই ৭২ জন ভার্জিন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে স্বর্গে যাওয়া।” এই টুইটের জন্য তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা হয়। কিন্তু আমি এই টুইটে কোন সমস্যা দেখতে পাই নি।

ধর্মবিদ্বেষে সমস্যা কোথায় আমি বুঝে উঠতে পারি না। ধর্ম আমাকে শেখাচ্ছে নারীরা হচ্ছে শস্যক্ষেত্র, পুরুষ যখন যেভাবে খুশি সেখানে প্রবেশ করতে পারবে। ধর্ম আমাকে শেখাচ্ছে স্বামীর বাধ্যগত না থাকলে স্বামী তার স্ত্রীকে প্রহার করতে পারবে। ধর্ম আমাকে শেখাচ্ছে বিধর্মীরা সব নরকের জ্বালানি, তাদের আল্লাহ ঘৃণা করে। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে, তাদের অপমান অপদস্থ করতে হবে। মাথা নিচু করে জিজিয়া কর না দেয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে জোড়ায় জোড়ায় কাটতে হবে। তাদের স্ত্রী পুত্রদের দাস বানাতে হবে, গণিমতের মাল বানিয়ে ভোগ করতে হবে। আল্লাহ পাক কোরানে বিধর্মীদের কী নোংরা ভাষাতেই না গালাগালি করেছেন। অথচ এমন সাম্প্রদায়িক, বর্বর, অত্যন্ত হাস্যকর ব্যবস্থাকে আমাদের সকলের সম্মান করতে হবে। কেন? কারণ তারা সংখ্যাগুরু। এবং তারা কল্লা কাটতে সদা প্রস্তুত। ইসলাম একটি বিধর্মীফোবিক, নাস্তিকফোবিক, নারীফোবিক, ভালবাসাফোবিক, শিল্প-সাহিত্য-চিত্রকলা-সংগীতফোবিক ধর্ম। ইসলামিস্টরা যখন তাই ইসলামফোবিয়ার অভিযোগ দায়ের করে, তখন কী বলবো বুঝে উঠতে পারি না।

সেদিন একজন মন্তব্য করলেন, “ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। ইসলামে রক্তপাত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন অবস্থাতেই একজন প্রকৃত মুসলমান কাউকে হত্যা বা আক্রমণ করতে পারে না। আর ইসলামের সমালোচনা করার কারণে আপনাকে হত্যা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ হয়ে গেছে। আপনাকে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই আল্লাহর নামে জবাই দেয়া হবে। নাড়ায়ে তাকবীর, আল্লাহো আকবর!”