বি এন পি’র ইতরামী

ডক্টর মোহাম্মদ হান্নানের লেখা “বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ইতিহাস” বইটা পড়ছিলাম আজকে। এই বইটা এক কথায় অসাধারণ। এই বিচারের সময়কালীন ও প্রাসঙ্গিক অনেক অজানা তথ্যে বইটি পরিপূর্ণ। এই বিচারের প্রাথমিক গ্রেফতার, অভিযোগপত্র, তদন্ত, সাক্ষ্য, যুক্তি-তর্ক, আসামীদের স্টেটম্যান্ট সব কিছুই পড়লাম। এসব পড়ে খুব সহজেই বর্তমানে চলতে থাকা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনালের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পুরো বিষয়টি মেলাবার চেষ্টা চালালাম। যদিও অপরাধ আর অপরাধের ধারনা, বিচার ব্যাবস্থা কিংবা ব্যাপ্তির দিক থেকে দুইটি বিচার আলাদা তারপরেও কিছু ব্যাপার হুবুহু একই রকম হয়ে যাওয়াতে বেশ অবাক হলাম।

যেমন যথারীতি আসামী ও তাদের সমর্থকেরা দাবী করছে এই বিচার অবৈধ, এটা রাজনৈতিক প্রহসন। যথারীতি বি এন পি এই বিচার সঠিক হচ্ছে না এবং এই বিচারে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে বলে শুধু বিবৃতি-ই দেয় নি বরং বিচারপতি কাজী গোলাম রসুল যেদিন রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন সেদিন বি এন পি হরতাল দেয়, যথারীতি আসামী ফারুক রহমান, রশীদ সহ অন্যান্যরা আদালতে বলে যে তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ অথচ ওপেন টিভিতে তারা বুক ফুলিয়ে বলেছিলো যে তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, আগারগাঁয়ের এক ভাষনে খুনী ফারুক বলেছিলো “বাংলাদেশে এমন কোনো মায়ের ছেলে নেই যে ফারুকের বিচার করে”, যথারীতি আসামী পক্ষ এক্টার পর একটা পিটিশান দায়ের করে মামলার গতি স্লথ করবার পাঁয়তারা করতে থাকে, আমাদের বিচার ব্যাবস্থার যত দূর্বল দিক গুলো আছে সেটিকে এরা ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করতে থাকে, দেশে বিদেশে প্রচার করতে থাকে যে এই বিচার কতটা অনৈতিক এবং কতটা বাজে ভাবে হচ্ছে। যথারীতি তারা দেশের বাইরে প্রচারণা চালাতে থাকে।

লিবিয়া, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তারা সরকার প্রধানদের চিঠি পাঠাতে থাকে, লিখতে থাকে যাতে করে তারা সরকারকে চাপ দেয়, যাতে করে এই বিচার বন্ধ হয়। এক পর্যায়ে তারা আর কিছুতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ফাঁসীহীন বিচার ব্যাবস্থার দাবী তোলে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে কলংকময় যে আইন সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নিয়ে আসামীদের আইঞ্জীবি খান সাইফুর রহমান ফাজলামি ধরনের যুক্তি তর্কে মেতে উঠে, এই অবৈধ ও ন্যাক্কার জনক প্রভিশনকে তারা বার বার সামনে আনতে থাকে চরম নির্লজ্জতায়। এক পর্যায়ে তারা আর কিছু না করতে পেরে এই মামলার একন আইনজীবি ফজলে নূর তাপসকে বোমা মেরে খুন করবারও পরিকল্পনা করে।

ঠিক একই ব্যাপার ঘটছে আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে। আসামীরা দাবী করছে তারা নির্দোষ, যদিও ওপেনলি তারা ৭১ সালে বক্তব্য দিয়েছে এই দেশের বিরুদ্ধে, এই দেশের মুক্তিকামী মানুষদের বিরুদ্ধে। যথারীতি সেই বি এন পি এদের পক্ষে যুদ্ধ করে যাচ্ছে, জামাতের হরতালে নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে, একের পর এক অদ্ভুত পিটিশান দায়ের করে তারা বিচারকে যতদূর সম্ভব দীর্ঘ করছে, দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে এই বিচারের ব্যাপারে অপঃপ্রচার চালাচ্ছে, পুরো পৃথিবীকে বুঝাতে চাইছে যে এই বিচার অবৈধ, এটি রাজনৈতিক প্রহসন, এই বিচার বান চাল করবার জন্য তারা একের পর এক চাল চালছে, বিচারপতির বাসায় অবৈধ ভাবে গোপন ডিভাইস বসিয়ে ব্যাক্তিগত আলাপ রেকর্ড করে সেগুলোকে নানাবিধ মিথ্যে ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাজারে ছাড়ছে এবং তারাই বলছে যে এই কাজটি সরকার করেছে কেননা সরকারই নাকি বিচার চায় না, এরাও আর কিছুতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সমর্থকদের মত “ফাঁসীহীন” বিচার ব্যাবস্থার পক্ষে সরব হয়ে উঠেছে দেশ বিদেশের সকল সেমিনারে।

আওয়ামীলীগের প্রতি যাদের প্রকট এলার্জি রয়েছে তারা মানুন আর না মানুন বাংলাদেশের ইতিহাসে দুইটি বড় বিচার এই দলটির হাত ধরেই হয়েছে ও হচ্ছে। এটি অস্বীকার করবার আসলেই কোনো রাস্তা নেই। সবচাইতে আশ্চর্য হয়েছি বঙ্গবন্ধুর বিচারের সময় সরকার এতো লিনিয়েন্ট আচরণ করেছে আসামীদের প্রতি এবং একজন আইনজীবি হিসেবে বলতে পারি যে, এই বিচারের ক্ষেত্রে সরকার অনেক ছাড় দিয়েছে যাতে করে ভবিষ্যতে কেউ এটি নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে পারে। আর সরকারের এই লিনিয়েন্ট এপ্রোচকে অনেকেই দূর্বলতা হিসেবে নিয়েছিলো। এই সুযোগেই তারা সরকারকে কয়েক হাত দেখে নেবার চেষ্টা করেছিলো সে সময়। আজকে এই ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রেও সেই চেষ্টা চলছে।

আমার সহজ আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর অবজার্ভেশন হচ্ছে,

১) বাংলাদেশের একজন অপরাধী অপরাধ করে প্রথমেই যেই কাজটি করে সেটি হচ্ছে এরা একটি রাজনৈতিক দল খুলে বসে (একাত্তরের খুনীরা খুলেছে জামাত আর বঙ্গবন্ধুর খুনীরা ফ্রিডম পার্টি আর উভয় পার্টিই সংসদে গেছে) এবং এদের বিচার করতে নিলেই এরা বলে এই বিচার রাজনৈতিক প্রহসন।

২) এইসব অপরাধীদের খুব পছন্দের বিষয় ও মূল আরাধনার ক্ষেত্র হচ্ছে সাদা চামড়া। এরা কিছু হলেই এসব দেশে চলে যায় তাদের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এবং বাংলাদেশের বিচার যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন তা প্রমাণ করবার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।

৩) বাংলাদেশের সকল মুক্তবুদ্ধি, মুক্তপ্রাণ, মুক্তচিন্তা এসব সবকিছুতেই বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খুব আনন্দ পায় বি এন পি। বাংলাদেশের সকল মানুষের আকাঙ্খাতে এই দলটি প্রতিটি সময়ে বাগড়া দিয়েছে এবং শুধু মাত্র আওয়ামীলীগকে বিরোধিতা করতে হবে শুধু সে কারনেই তারা সব সময় হাত মিলিয়েছে এন্টি আওয়ামীলীগার কিংবা আওয়ামীলীগ পছন্দ করেনা এমন ব্যাক্তি, সংঘের সাথে। এবার হোক তা দেশের জন্য খারাপ কিংবা চরম আকারের ভয়াবহ। তাদের মূল এজেন্ডা হচ্ছে আওয়ামী বিরোধীতা। এই বিরোধিতার জন্য তারা নিজের মা’কে পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে পারে নির্দ্বিধায়।

৪) বাংলা সিনেমা কিংবা হিন্দী সিনেমায় অথবা হলিউডের সিনেমায় আমরা যে ভিলেনের চরিত্র দেখি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বি এন পি হচ্ছে একটা ভিলেন। এমন কোনো উদাহরন নেই, এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই যেখানে দেখানো যায় বি এন পি বাংলাদেশের কোনো প্রগতীশীল আন্দোলনে একাত্ন হয়েছে। ডানপন্থীদের নানাবিধ শাখা-প্রশাখা নিয়ে এই দল প্রতিটি সময় বাংলাদেশের সকল আশা আর ইচ্ছের মধ্যে আগুন লাগিয়েছে প্রতিনিয়ত।

৫) বাংলাদেশের সকল অপঃশক্তির মূল উত্থান হয়েছে বি এন পি’র হাত ধরে।