সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতার কথা বাদ দিলাম। কেউ কি চাইলেই আমার অনুমতি ছাড়া আমার বিয়ের ভিডিও (!!!) অনলাইনে ছেড়ে দিতে পারে?
চটি ভিত্তিক হিটখোর সংবাদ মাধ্যমগুলোর মত আনইথিকাল এই কাজটাই বারবার করছে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো। একবার নয় দুই-দুইবার তাদের দুটো নিউজে একজন মানুষের বিয়ের ভিডিও প্রকাশ করেছে।
একজন মানুষের বিয়ে হয়েছিল সেটা প্রমাণ করতে বিয়ের ভিডিও কেন প্রকাশ করতে হবে? যদি সত্য বের করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে সেই মেয়ের সাবেক স্বামী ছিলেন, সেই মেয়ের গার্জিয়ান ছিলেন, উকিল বাবা ছিলেন, কাজী সাহেব ছিলেন, বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা ছিলেন আর বিয়ের দলিলপত্র তো আছেই। এই দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন মানুষ প্রকাশ্যে একটা বিয়ে করলে সেটা সহজে গোপন করে ফেলতে পারে না। এই বিয়ের সত্য উদ্ঘাটন করার জন্য কারো ব্যাক্তিগত বিয়ের ভিডিও প্রকাশ করে দেয়া কেমন নৈতিকতা?
আসল কথা হচ্ছে শুকনা ছবি দিয়ে পোষাচ্ছিল না, এই মেয়েটাকে “গাও গেরামের মাইয়া” কিংবা “ফ্যাট ভার্সেস সেক্সি” ইত্যাদি বানাতে এই ভিডিওটা ভালো ভূমিকা রাখবে।
এই সো-কল্ড “বিউটি আর বিস্ট কনসেপ্ট” প্রশ্ন সাপেক্ষ আলোচনা। হয়তো মফস্বল থেকে এসে মোটা থেকে জিরো ফিগারের সেক্সি হয়ে যাওয়া কোন মেয়ের চাইতে অন্য কোন মেয়ে গ্রাম থেকে এসে গার্মেন্টসে কাজ করে পড়ালেখা করে ডাক্তার হয়ে যাওয়ার গল্প অনেক বেশি প্রেরণাদায়ক, এবং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই আলোচনা আলাদা আলোচনা। যা কিছুই হোক কথা হচ্ছে এই প্রথম আলো পত্রিকাটির বারবার এই মেয়েটির বিয়ের ভিডিও লিঙ্ক সমেত নিউজ প্রকাশ করা একটা ন্যাক্কারজনক কাজ। আর এও বিষয়টা আমাদের নজরেও আসছে না। আমার মনে হয় মেয়েটির উচিত হবে পত্রিকাটিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার।
‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা’; এই মুহূর্তে মানব সভ্যতায় এর চাইতে অপমানজনক আর কোন প্রতিযোগিতা হতে পারে কি না আমার জানা নাই। চামড়ার সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা করার চাইতে হারিকুরি করার প্রতিযোগিতা করাও তো শ্রেয়। কে কত সুনিপুণ ভাবে মরতে পারে! তাতেও তো যে মরবে তার কিছু নৈপুণ্য প্রদর্শনের সুযোগ থাকে।
বিরাট বিরাট আলো ঝলকানো ফ্ল্যাড লাইট জ্বালিয়ে, বড়বড় সুশীল মানুষদের উপস্থিত করে, লাইভ টেলিকাস্ট করে, করতালি দিলে আর নিউজ হেডিং করলেই কি অসভ্য বর্বর একটা প্রতিযোগিতা জাস্টিফাই হয়ে যাবে?
২০১৭ সালে এসে পৃথিবীর মানুষ “চামড়া” দেখে সৌন্দর্য নির্ধারণ করছে!! আর মানুষ সেটাতে অংশগ্রহণ করা আর জয়ী হওয়াকে আবার সম্মানজনকও মনে করছে!!
গোটা ধরণীর দ্বিধা হয়ে-
নিজের ভেতরে নিজের ঢুকে যাওয়া উচিত!!!
লজ্জায়… অপমানে… .