জাওয়াদ নির্ঝর

আজকে তিনটি ঘটনা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গাজি টিভি তাদের ক্রীড়া সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরকে বরখাস্ত করেছে লন্ডন প্রবাসী সিলেটীদের ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে বর্ণবাদী মন্তব্য করায়। দুই, রাকেশ নামের সিলেটের জকিগঞ্জের একজনকে কথিত নবী মুহাম্মদের নামে কটুক্তি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন, রাঙ্গামাটির লংগদুতে আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সংবাদ বাংলাদেশ থেকে ব্লক করার অভিযোগ উঠেছে। বিটিআরসি মেইল করে ইন্টারনেট গেটওয়েকে সিএইচটি নিউজ, পার্বত্য নিউজ এবং ঢাকা টাইমস নিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদ লিংক ব্লক করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডয়চে ভেলের সাংবাদিক নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ থেকে ঐ নিউজগুলোতে এখন আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। কমেন্টস ঘরে এ সংক্রান্ত দুটো ছবি এবং নিউজ লিংক দেয়া হলো।

সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর যখন বছর খানেক আগে আমাদের এক ফেইসবুক বন্ধুকে ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালাগালি করেছিল, গাজি টিভিকে সেকথা জানানোর পরও কোন একশান তারা নেয়নি। গোটা ইংলেন্ডে বাংলাদেশী সিলেটিরা অর্থে ক্ষমতায় প্রভাবশালী। গাজি টিভি তাদের সম্প্রচার সেখানে নিশ্চিত করতেই যে তড়িৎ তাদের সাংবাদিককে বরখাস্ত করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

৭১ টিভিতে সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান তাদের সাংবাদিক দেব চৌধুরীকে ভারতের চর, শালা হিন্দু, এদের ইন্ডিয়ার সাথে কানেকশন আছে’ ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক কথা বলার পরও তার বিরুদ্ধে ক্রিকেটবোর্ড থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জনকন্ঠের সাংবাদিক ফিরোজ মান্না গৌতম বুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করে ফিচার লিখার জন্যও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু দেশের সর্বত্র নবী মুহাম্মদের নামে ‘কটুক্তির’ অভিযোগে রোজই কাউকে না কাউকে গ্রেফতার করা হয়।

এই যে লিখলাম অমুক কারণে তমুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- তার মানে আমি বলতে চাইছি না কোন মন্তব্য করার জন্য কাউকে ধরা হোক। আমি বলতে চাইছি অনুভূতি এখানে শক্তি আর পেশি দেখে জাগ্রত হচ্ছে।

রাঙ্গামাটির লঙদুদে পাহাড়ীদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোর নিউজ মুছে দিতে বাংলাদেশ সরকারের এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য যাতে দেশের মানুষ পাহাড়ে কি ঘটছে তা জানতে না পারে। দেশের মূল মিডিয়া এমনিতে পাহাড়ের মানুষদের অধিকার প্রশ্নে কট্টর জাতীয়তাবাদী। আজকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলে পাহাড়ী জনপদ থেকে নিঃশব্দে আদীবাসীদের নিশ্চিহৃ করে দেয়া কত সহজ হতো…।

৫৭ ধারায় গ্রেফতারকৃত কোন ইসলামিস্টকেও আমি সমর্থন করি তার বাক স্বাধীনতার প্রশ্নে। হিন্দু দেবতা শিবকে ‘গাঁজা খোর’ বলা কিংবা মুহাম্মদকে ‘সন্ত্রাসী’ বলার সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়কে ‘মালাউন’ বলা, মুসলিমদের ঢালাওভাবে ‘সন্ত্রাসী’ বলা, পাহাড়ীদের ‘নাক চ্যাপ্টা’ বলে বিদ্রুপ করা এক জিনিস নয়। কিন্তু আমরা সব কিছু গুলিয়ে ফেলছি…।