আমি যতদূর জানি বাংলাদেশের অতি রক্ষণশীল ঘরানার মুসলমানদের মধ্যে কাসেম বিন আবু বাকারকে নিয়া আপত্তি আছে। কারন তার লেখায় প্রেম ও যৌনতার উপস্থিতি। তাদের মতে লেখক কাসেম সঠিক ইসলামি আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন না, বরং ইসলামের মোড়কে প্রেম ও যৌন সুরসুরি বিক্রি করেন। সাহিত্যে প্রেম ও যৌনতার উপস্থিতির বিরুদ্ধে অতি রক্ষণশীল ঘরানার মুসলমানদের আপত্তি সম্বন্ধে জানতাম। কিন্তু বাংলাদেশের প্রগতিশীল সেকুলারদের মধ্যেও যে কেউ কেউ সাহিত্যে প্রেম ও যৌনতার উপস্থিতির বিরুদ্ধে নৈতিকতার পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারেন তা জানা ছিল না।
মুসলিম কালচারে তো প্রেম, সেক্স ট্যাবু ছিল না। প্রেমকে দেখা হইছে আল্লাহর নেয়ামত হিসাবে। প্রেমের মরাকে দেখা হইছে শহীদ হিসাবে। প্রেম আর কামের এই ধরণের রিপ্রেজেন্টেশনের দিক থেকে শেখ সাদির মতো পপ কবি, রুমির মতো সুফি কবি কিংবা ইবনে হাজমের মতো ওলামার মধ্যেও পার্থক্য পাওয়া যায় না তেমন। প্রাক-আধুনিক মুসলমানদের সাহিত্যে ইরোটিকা ছিল কেন্দ্রিয় বিষয়, স্ট্রেইট এবং হোমো সেক্সুয়াল উভয়ই। প্রেম, সেক্স ইত্যাদিকে ট্যাবু বানাইছে কলোনিয়ালিজম প্রভাবিত ভিক্টোরিয়ান মুসলমানরা। আর এখন রানী ভিক্টোরিয়ার দেশের ইংলিশ পত্রিকা বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে কনজারভেটিভ হিসাবে তুলে ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের উপন্যাসের জনপ্রিয় কনজারভেটিভ!
মুসলিম লেখকের অস্তিত্ব এমনভাবে তুলে ধরে যেনো এইটা খুবি অস্বাভাবিক ব্যাপার। সেই পুরাতন কলোনিয়াল চোখ আর কি। এরা যখন প্রথম মুসলিম দুনিয়ায় আসলো, তখন তাদের রক্ষণশীল চোখে মুসলিম দুনিয়ার কালচারে প্রেম ও যৌনতার ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত কম রক্ষণশীলতাকে বেলাল্লাপানা বলে মনে হয়েছিল। আর এখন তাদের কাছে মুসলমানরা রক্ষণশীল, আর সেই রক্ষণশীল কালচারের প্রেমের উপন্যাস লেখকদেরকে অস্বাভাবিক অসাধারণ কিছু বলে মনে হয়।
ইংলিশ পত্রিকায় নাম আসার বহু আগে থেকেই কাশেম বিন আবু বকর বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের একজন। খুব সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের পরেই জনপ্রিয়তার দিক থেকে তার অবস্থান। বাংলাদেশে জনপ্রিয় লেখকের সংখ্যা খুব বেশি না। ওনাদেরকে বাদ দিয়ে যাদের নাম আসবে তারা হলেন রকিব হাসান, কাজী আনোয়ার হোসেইন, ইমদাদুল হক মিলন ইত্যাদি। তাদের সবাইকেই বাজারি লেখকের গালি খেতে হয়েছে। তারা বাজারি লেখক বটে। তবে বইতো বাজারেই বিক্রি হয়। আমাদের বইয়ের বাজারের অবস্থা ভালো না। ভালো করার জন্যে বাজারি লেখক আরো বেশি দরকার।
আহমদ ছফা ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো উচু মানের উপন্যাস লেখক বাংলাদেশে জীবিত কেউ নাই। কাশেম বিন আবু বকরকে নিয়ে যারা হাসি তামাসা করেন, তারা না লিখতে পারছেন মান সাহিত্য না পারছেন জনপ্রিয় হইতে। তাই তাদের পেটে খালি হিংসা।