-আচ্ছা নাস্তিকরা ঈশ্বরকে দেখা যায় না বলে বিশ্বাস করে না, কিন্তু তারা কি নিশ্চিত যাকে তারা বাবা হিসেবে জানে সেটাই তাদের বাবা? তারা কি সেটা নিজের চোখে দেখেছে যে তাদের বাবার বীর্যেই তাদের জন্ম হয়েছে? এটা তো নিশ্চত না হয়েই দিব্যি বাবাকে বিশ্বাস করছে, তাহলে ঈশ্বরকে না দেখে বিশ্বাস করা যাবে না কেন?
-তুমি ‘ঘোড়ার ডিম’ বিশ্বাস করো?
-না। কারণ ঘোড়া ডিম পারে না, বাচ্চা প্রসব করে।
-ঠিক তেমনি যৌন সম্পর্ক ছাড়া সন্তান জন্ম যেহেতু সম্ভব না সেহেতু আমার যে একজন বাইলোজিক্যাল পিতা আছে সেটা দিনের আলোর মত সত্য। তবে যাকে বাবা বলে জানি তিনিই সেই জন্মদাতা কিনা সেটি জিজ্ঞেস কোন সন্তানই করে না। তুমিও করোনি। এটি সামাজিক একটি সম্পর্ক। এরকম বাস্তব প্রমাণিত সত্যের সঙ্গে ঈশ্বরকে না দেখে বিশ্বাস করার তুলনা হয় না। এটা যুক্তি নয়, কুতর্ক।
-তাহলে তোমার যুক্তি অনুসারেই বলি, ঈশ্বরকে দেখা না গেলেও আমাদের একজন বাইলোজিক্যাল ঈশ্বর আছেন যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।
-না, আমাদের কোন ঈশ্বর সৃষ্টি করেননি। এটা তোমরা ঈশ্বর বিশ্বাসীরাই রোজ ব্যবহারিক জীবনে করে দেখাচ্ছো কিন্তু বুঝতে পারো না।
-কি রকম?
-তুমি তো বিবাহিত, জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়েছো। কনডম ব্যবহার করো না?
-ইয়ে…হ্যাঁ…
-কেন করো? করো কারণ যাতে অনাকাঙ্খিত সন্তান জন্ম না নেয়। অথচ তোমরা বিশ্বাস করো ঈশ্বর বা আল্লাহ পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে সবই তার ইচ্ছায়। তাহলে কেন কনডম ব্যবহার করে জন্মরোধ করতে চাও? আমাদের দাদা-নানাদের ১২-১৩ জন করে সন্তান হতো। এখন দুটোর বেশি সন্তান কেউ নেয় না। আর এটা নিশ্চিত হয় জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অথচ তোমাদের উচিত এসব ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আল্লাহর উপর মানুষ জন্মের ভার ছেড়ে দেয়া। তিনিই তো সব নির্ধারণ করে দিয়েছেন কে জন্মাবে-তাই না?
-আসলে তোমরা চাও ঈশ্বর আকাশ থেকে নেমে এসে দেখা দিক। তাহলেই তোমরা তাকে বিশ্বাস করবে?
– আকাশের কথা তুলে ভাল করেছো, একটা প্রশ্নের উত্তর দেও তো, তোমরা ঈশ্বরকে ডাকতে আকাশের পানে চাও কেন? বল কেনো ‘উপরঅলা’?
-আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ সপ্ত আসমানের উপরে তার আরশে থাকেন।
-তুমি কি জানো আমাদের পায়ের নিচে যে মাটি- তার নিচেও আকাশ?
-এ্যাঁ-হ্যাঁ…
-কিন্তু এসব খুব বেশিদিন আগে মানুষ জানত না। সহজ করে বললে, আমাদের পৃথিবী মহাশূন্যে ভাসমান এক গোলক যার উপর নিচ সবখানেই শূন্যতা- মানে আকাশ। আমেরিকা ঠিক আমাদের পায়ের নিচে, সেখানেও একজন আকাশের দিকে চেয়ে ভাবেন তার মাথার উপরে ঈশ্বর থাকেন!
-এটা দিয়ে কি বুঝানো হলো?
-এটা দিয়ে বুঝানো হলো ঈশ্বর নিজেও ভাবেন তিনি মানুষের মাথার উপর আকাশে বসবাস করেন! আমাদের বুদ্ধি লেভেল তখন যে পর্যন্ত ছিল আমাদের ঈশ্বরদের জগত সম্পর্কে ধারণাও সেরকম ছিল।
-আল্লার কি ঠেকা পরছে তোমাদের বিশ্বাস করাতে!
-আমারও কিন্তু সেই কথা, আমি নিম্মাঙ্গের চুল না কাটলে তার কি ঠেকা? উনি কেন এসবের হিসাব রাখেন? অথচ দেখো তাকে বিশ্বাস না করলে আগুনে পোড়ানোর জন্য বিশাল বিশাল সব চুলা এখনি বেহুদা জ্বালিয়ে বসে আছেন! তার মানে উনার পুরাই ঠেকা আমাদের জন্য!
-চুটুল আলাপ বাদ দাও। সব কিছুরই একটা সৃষ্টিকর্তা আছে। এই যে তোমার হাতের মোবাইলটা এটারও একজন সৃষ্টিকর্তা আছে…
-ভাই দোহাই তোমার, এই পঁচা দুর্গন্ধ কাসুন্দিটা আর ঘেটো না। তোমাদের হুমায়ূন আহমেদও সেটা ঘেটেছিল। এই থিউরীর জন্মদাতার নাম ইউলিয়াম প্যালে। তিনি কিন্তু একজন খ্রিস্টান। তোমাদের ভাষ্যমতে উনি নিশ্চিত দোযগে যাবেন। তো তিনি বলেন, জীবদেহ একটা নিখুঁত ঘড়ির কাঠামোর মত। আর এই নিখুঁত ঘড়িটি নির্মাণে নিশ্চয় কোন বুদ্ধিমান কারিগর আছেন। ডারউনের বিবর্তণবাদ আসার আগে প্যালের এই থিউরী খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু পৃথিবীর জীবজগত ধাপে ধাপে এক সুক্ষ্ম বিবর্তণের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে- এই আবিস্কার ‘একজন নিঁখুত কারিগরকে’ সারসরি নাকোচ করে দেয়। তবু তর্কের খাতিরে বলি, ঈশ্বর সব কিছু সৃষ্টি করলে তাকে কে সৃষ্টি করল?
-হা হা হা… পাগল! তোমরা নাস্তিকদের অজ্ঞানতা দেখলে হাসি পায় জানো! কি প্রশ্ন!
-ভাই, মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন আর চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল বলেই আজকে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো। নইলে এখনো মরুভূমিতে উটের উপর বসে যাতায়াত করতে। আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন উট, ঘোড়া, গাধা এসব বানিয়েছি তোমাদের বোঝা বহন করার জন্য। তোমাদের পথ চলার জন্য। এমনকি মিরাজের বাহনও একটা খচ্চর জাতীয় উদ্ভট জন্তু! কোন সেস্পযান নয়!
-আল্লাহকে কেউ সৃষ্টি করেনি। তিনি সব সময়ই ছিলেন। তিনি আদি ও অনন্ত…।
-এটা তো সম্ভব না। স্থান-কালের সূচনা না হলে তিনি কেমন করে চিরকাল থাকেন। তার মানে ঈশ্বরেরও একটা সূচনা আছে! হিন্দু ধর্ম বলে ঈশ্বর সয়ম্ভূ মানে নিজে নিজেই সৃজিত হয়েছেন। তা ঈশ্বর যদি নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারে তাহলে এই বিশ্বজগত কেন নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারবে না?
-তার মানে ঈশ্বর নাই?
-ঈশ্বর থাকলেও তোমাদের বিশেষ কোন লাভ নেই কিন্তু।
-মানে?
-এসো ধরে নেই ঈশ্বর আছেন। এবার দেখি তোমার সেই ঈশ্বর তোমাকে বাঁচায়, খাওয়ায়, রক্ষা করে কিনা…। এই পৃথিবী একটা লজিকে চলে। এই যে ছোট ইটের টুকরোটা, এটা যদি কোটিবার উপর থেকে শূন্যে ফেলতে থাকি তাহলে কোটিবারই নিচে গিয়ে পড়বে। একবারও কি সেটি উপরে উঠে যাবার বা মাঝখানে থেমে যাবার চান্স আছে?
-না।
-কারণ কি? মধ্যাকর্ষণ শক্তি। এটি একটি নিয়ম। এই নিয়মেই পৃথিবীর গায়ে আমার লেগে আছি। মহাশূন্যে ছিটকে পড়ছি না। তো, এই মহাকর্ষ বিধানটির ক্রেডিট আসো ঈশ্বরকে দেই। তিনিই বুদ্ধি করে আঠার মত লেগে থাকা মধ্যাকর্ষণ শক্তি দিয়েছেন। এখন বলো তো, এই বিধান কি ঈশ্বরের লঙ্ঘন করার কোন জো আছে? তিনি কি সেটা করতে পারেন? এ কারণেই বিজ্ঞানের জগতে বলা হয় ‘ঈশ্বর’ তার নিজের নিয়মেরই বন্দি। নিউটনের তিনটি সূত্র জগতকে বুঝতে আমাদের সাহায্য করেছে। এ পর্যন্ত জগতের প্রতিদিনের দিনরাত্রীর নেপথ্যে যেসব কারণ জানা গেছে তার সবকটিই একটি নিয়ম। সেই নিয়ম ভেঙ্গে তোমাকে কিছুতে তোমার ঈশ্বর সাহায্য করতে পারবেন না। ধরো তোমার শত্রু তোমাকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। তোমার কোন দোষ নেই, তোমাকে বাঁচাতে দ্বিতীয় কোন লোক নেই, তুমি ধাক্কা খেয়ে নিউটনের সূত্রকে নিপূণভাবে মান্য করে নিচে পতিত হতে থাকলে, আর চিৎকার করে পরম করুণাময় একজন ঈশ্বর আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকলে, তিনি কি সব নিয়ম ভেঙ্গে, মধ্যাকর্ষণ আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে তোমাকে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখবেন? রাখবেন না। তোমার প্রতি শত করুণা থাকার পরও বেচারার কিছু করার নেই। তো এরকম একজন অর্থব ঈশ্বর তোমার থাকলেই কি আর না থাকলেই কি?
-মিরাকল বলতেও তো কিছু আছে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া। যেমন ধরো, চারতলা থেকে পড়েও একটা ছোট বাচ্চা বেঁচে গিয়েছিল। পত্রিকায় পড়েছিলাম।
-আমিও সেই নিউজ পড়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাইশজন গ্রামবাসীকে লাইনে দাঁড় করে ব্রাশ ফায়ার করা হয়েছিল। একুশজনই মারা গিয়েছিল কেবল আমার এক নানা লাইনে থেকেও বেঁচে গিয়েছিলেন। সারা জীবন তিনি এটাকে ভাবতেন আল্লাহতালার বিশেষ রহমত তার উপর। এই যে উনার মনে হওয়া এটাকে তো তিনি অলৌকিক, মিরাকল ভাবতেই পারেন। কিন্তু এই ঘটনায় কি কোথাও জগতের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে? নানার গায়ে গুলি লাগেনি তাই বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে পৃথিবীর কোন সূত্র লঙ্ঘিত হয়নি। তাই চারতলা থেকে নিচের টিনের চালায় পড়ে একটা বাচ্চা বেঁচে থাকলেও একইভাবে কোন সূত্র লঙ্ঘিত হয় না। তবে হ্যাঁ, এখানে ‘নিয়মের মধ্যে থেকে’ ঈশ্বরের একটা বিশেষ কৃপা করার সুযোগ থেকে যায় বৈকী!
-মানছ তাহলে?
-আগে সবটা বলি শোন। মাত্র ৫০ বছর আগে এদেশে ছোট ছোট শিশুরা কলেরায় মারা পড়ত। পেটের অসুখে বিনা চিকিৎসায় বাবা-মার চোখের সামনে সন্তান মারা যেতো। পৃথিবীতে এই ধরণের মহামারী কত হাজার বছর পর্যন্ত ছিল তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু এই সেদিন খাওয়ার স্যালাইন আবিষ্কার করার ফলে এখন খোদ বাংলাদেশেই শিশু মৃত্যুর হার একদমই কমে গেছে। আমার মায়ের কাছে শোনা তাদের ছোটবেলার ঘটনা শোন। তাদের আশেপাশের সাত-আট ঘরের সবাই বসন্ত রোগে মারা গেলেও ‘আল্লার অশেষ রহমতে’ তাদের কোন ভাই-বোনের শরীরে একটা গোটাও উঠেনি। আল্লাহর সম্ভবত সবার জন্য রহমত বর্ষণ করার সুযোগ নেই কি বল? তাই মাঝে মাঝে খুবই রহস্যজনকভাবে বিশেষ কাউকে কাউকে রহমত করে ফেলেন। অথচ দেখো, বিজ্ঞান আজকে বসন্ত নামের একদা ভয়ংকর একটি রোগকে পৃথিবী থেকেই বিদায় করে দিয়েছে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে কোটি কোটি মানুষ অকালে মারা পড়ত সেই মৃত্যুটা রোধ করা গেছে। কি বুঝলে এখান থেকে?
-কি বুঝব?
-তোমার ঈশ্বরের ক্ষমতা।
-আল্লাহতালাই রোগই দিয়েছেন, আল্লাহতালাই তার ঔষধ বাতলে দিয়েছেন।
-ভাল বলেছো। আলোচনাটা এবার সমাপ্তির দিকে টেনে এনেছো। ধরো বসন্তের টিকা যে ঈশ্বর মানুষকে বাতলে দিয়েছেন উনি কি তোমাদের ঈশ্বর, মানে তোমাদের মুসলমানদের আল্লাহ?
-অবশ্যই! আল্লাহ একজনই। তিনিই সব কিছু করেন। ইহুদী-খ্রিস্টানরা তার অবাধ্য হওয়াতে তারা এখন বিপথগামী। আল্লাহর সর্বশেষ মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম…।
-বেশ, তাই মেনে নিলাম। এবার দেখো গুটি বসন্তের আবিস্কারক কে- এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার। উনি ১৭৯৬ সালে এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত বিশ্ববাসীর জন্য বসন্ত ছিল এক মৃত্যুদূত। ভারতবর্ষে তো এই রোগকে কেন্দ্র করে একজন দেবীকে পূজা দিয়ে খুশি করা হতো যাতে মানুষের উপর ক্ষতিটা কম হয়।
-এতে কি প্রমাণ হলো?
-এতে প্রমাণ হলো তুমি যদি দাবী করো তোমাদের আল্লাহ একজন মুসলমান বা তোদের কথাই শোনেন- তাহলে তোমার দাবীর যদি সামান্যতম সম্ভাবনা থেকে থাকে তাহলে তাতে মনে হয় ঈশ্বর একজন ইহুদী বা খ্রিস্টান! এ পর্যন্ত মৌলিক আবিস্কারের জন্য নোবেল প্রাইজের যে তালিক দেখি, সেখানে কিন্তু ঐ ধর্ম সম্প্রদায়েরই জয় জয়াকার। কারণটা কি বল তো?
-এতে কিছু প্রমাণ হয় না!
-হয় বন্ধু! এতে প্রমাণ হয় উহারা জ্ঞানের চর্চা করেন। আমাদের মত ধর্মচর্চা করেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীরা বুঝেছিল ঈশ্বর হয় মরে গেছেন নয়ত তিনি কোনদিনই ছিলেন না। তাই ওরা লেখাপড়া আর জ্ঞান অর্জনে মনোযোগ দিয়েছিল। ধর্মকর্ম থেকে মনটা প্রগতির দিকে ফিরিয়েছিল।
-মুসলমানরাও একসময় জ্ঞানবিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছিল। তারাও অনেক কিছু আবিষ্কার করেছিল।
-করেছিল কারণ তখন মুতাজিলা নামের একটা ইসলাম সংস্কারক গোষ্ঠির জন্ম হয়েছিল বাগদাদকে কেন্দ্র করে। স্বয়ং বাদশা হারুনুর রশীদ ছিলেন মুতাজিলা মতবাদে বিশ্বাসী। এই মুতাজিলারা ছিল এক প্রকারের সংশয়বাদী। এরা কুরআন-হাদিস চর্চা থেকে পৃথিবীর বিজ্ঞান, সাহিত্য শিল্প নিয়ে চর্চাকে উন্নতির মূল চাবিকাঠি বলে জানত। এ কারণেই তখনকার যুগে কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর দার্শনিকের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু মূলধারার মোল্লাদের হস্তক্ষেপে সেই মুক্তচিন্তার আন্দোলনের অবসান ঘটে। ইমাম গাজ্জালি হচ্ছে সেরকমই একজন ইসলাম সংস্কারক যিনি বাগদাদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বদলে ফের কুরআন-হাদিসের শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ে আসেন এবং মুক্তচিন্তক মুতাজিলাদের হত্যা করেন…।
-যাও এত কচকচানি করো না। যুক্তি দিয়ে দুনিয়াতে সব মেলে না। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর…।
-এই এতক্ষণে তুমি একটা খাঁটি অবস্থান নিলা। এটাই বিশ্বাসীদের মূল ধিউরী। যুক্তি মানেই মুক্তি। বিশ্বাস কখনও যুক্তি দিয়ে খাড়া থাকে না। বিশ্বাস করতে হয় অন্ধভাবে। তুমি শুরুতে যেটা করেছিলে সেটা ছিল যুক্তি। সেই যুক্তি যে কতটা ভঙ্গুর তোমার বিশ্বাসের জন্য এবার ভেবে দেখো। এরপর ধর্ম নিয়ে অকারণে যুক্তিকে টেনে এনো না। স্রেফ একটা মাঁমদোভূত কিংবা শাকচূন্নিকে বিশ্বাস করতে কোন যুক্তি লাগে না। এমনকি জীবনে একবারও এদের সাক্ষাৎ না পেয়েও মানুষ এদের কথা ভেবে রাতে একা বাথরুমে যেতে ভয় পায়।
-আচ্ছা, তোমরা গুটি কয়েক নাস্তিক যুক্তি দিয়ে সব বাতিল করে দিচ্ছো। অথচ দেখো, কোটি কোটি মানুষ এসবকে মান্য করছে। রোজ সারা দুনিয়াতে কোটি কোটি মানুষ আজান শুনে পাঁচবার করে নামাজ পড়ছে। কিছুই যদি না থাকবে তাহলে এত মানুষ মানছে কেন? হজের সময় কত লোক সমবেত হয় একসঙ্গে জানো?
-মুম্ভমেলার নাম শুনেছো? হিন্দুদের এই মেলায় ২০১৩ সালের হিসাব অনুসারে ১০ কোটি হিন্দু তীর্থস্নান করতে সমবেত হয়েছিল। অথচ একজন মুসলিম হিসেবে তো তোমার কাছে কুম্ভস্নান পুরোটাই ভুয়া তাই না? কাজেই কোটি কোটি অন্ধবিশ্বাসী রোজ কোন একটি কাজ সারা দুনিয়াতে একসঙ্গে করলেই তার সত্যতা প্রমাণিত হয় না। পৃথিবী একটা মহিষের দুই শিংয়ের উপর- এরকম বিশ্বাস এক সময় পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করত- তাতে কি কিছু প্রমাণিত হয়েছে? একটা ভেড়ার পালে অনেকগুলো ভেড়া থাকে, কিন্তু তাদের চালায় একটা মাত্র রাখাল। তোমাদের বুদ্ধু বানিয়েছে ঐ রাখালটাই!…
-দেখো, এ কারণেই আমাদের আল্লাহপাক বলেছেন যেখানে দেখবে দ্বিনের বিরুদ্ধে কথা হচ্ছে দ্রুত স্থান ত্যাগ করবে। আসলে তোমাদের দিলে মোহর আঁটা আছে, আল্লাহ নিজে তোমাদের হেদায়েত না দিলে তো হবে না। আল্লাহ তোমার হেদায়াত দিক, আমিন…।
-বুঝছি এবার তোমার স্থান ত্যাগের সময় হয়েছে…।