অনলাইনে প্রায়শই অনেক ধর্মবিশ্বাসীদের সাথে বাতচিতের এক পর্যায়ে তারা নাস্তিকদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তসলিমা নাসরিনকে সামনে তুলে ধরে এনে বলে- “দেশে নাস্তিক বেশি হলে সমাজে অশ্লীল কাজ বেড়ে যাবে!”
এর পক্ষে যুক্তি দেখাতে বললে তারা যা বলে তা হলো- নাস্তিকদের মধ্যে পরকালে বিচারের বিশ্বাস না থাকায় তারা দুনিয়াতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয়না। ফলে ধর্মের উপযোগিতা অবশ্যই আছে। ধর্ম না থাকলে এ সমাজ অন্যায়-অনাচারে ভরে যাবে। যে যার মতো করে চলবে বলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাবে।
কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই কি তাই??
এর উত্তর জানতে আপনাকে আগে জানতে হবে নৈতিকতা কী? আর এর মানদণ্ডই বা কী??
নৈতিকতাঃ নৈতিকতাকে সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায়- যা সমাজের প্রেক্ষিতে প্রচলিত ভালো কাজ করতে অনুপ্রেরণা দেয় তাই নৈতিকতা।
নৈতিকতার মানদণ্ডঃ এখানেই আসল প্রশ্নটা এসে যায়! নৈতিকতার মানদণ্ড কে তৈরি করেছে?? ধর্ম নাকি সমাজ?? কল্পিত সৃষ্টিকর্তা নাকি মানুষ??
যদি ধর্মই নৈতিকতার মানদণ্ড তৈরি করে থাকে তাহলে সবগুলো ধর্মই কি করে প্রায় একই ধরণের বিষয়সমূহকে নৈতিক কিংবা অনৈতিক সার্টিফিকেড দেয়?? এমন কোন ধর্ম আছে কি যেখানে সত্য কথা না বলতে বলা হয়েছে?? চুরি-ডাকাতিকে ভালো কাজ বলা হয়েছে??
– উত্তর হবে- না…
– তার মানে কী দাঁড়ালো??
– মানে দাঁড়ালো, সকল ধর্মের স্রষ্টা একই স্বত্ত্বা।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি সকল ধর্মই সঠিক?? আল্লাহ, ভগবান, গড – সব এক??
– এর উত্তরও হবে- না… কারণ কোন ধর্মই অপর ধর্মকে জাস্টিফায়েড করে না। এ বলে আমি ঠিক, ও বলে আমি ঠিক! জাকির নায়েক তো কুরান বনাম বাইবেল শো করে বাইবেলকে নিচে নামাচ্ছেন আর ইসলামকে উপরে তুলছেন। এদিকে তার ব্যাংক-ব্যালান্সও উপরেই উঠছে। জাযাকাল্লাহ খায়ের। সেদিন তো দেখলাম চব্বিশ হাজার টাকা মূল্যের “পিস মোবাইল” -ও বাজারজাত করা হয়েছে…
যাহোক, তার মানে নৈতিকতার মানদণ্ড কোনো আল্লাহ বা ভগবান বা গড কর্তৃক তৈরি হয়নি। হয়েছে অন্য স্বত্ত্বা দ্বারা। আর এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষ ছাড়া আর কোনো স্বত্ত্বার অতটা ধীশক্তি নাই নৈতিকতার মানদণ্ড তৈরি করার মতো। মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট মানদণ্ড সমাজে চালু রাখা নিশ্চয়ই মানুষের পক্ষে অসম্ভব নয়। তাছাড়া বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী “টিকে থাকা”র স্বার্থেই মানুষকে নৈতিকতার চর্চা করতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। কারণ বিশৃঙ্খল সমাজ টিকে থাকার অন্তরায়। এই একই কারণে প্রাণীকুলেও কিন্তু তেমন একটা বিশৃঙ্খলা দেখা যায় না। আর যে প্রজাতির প্রাণীতে এ নৈতিকতাবোধ যত কম তাদের বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি।
আসুন নৈতিকতা বিষয়টির তুলনামূলক পর্যালোচনা করি-
আপনি বলবেন- একজন আস্তিক পরকালের শাস্তির ভয়ে কিংবা পুরষ্কারের আশায় ইভ-টিজিং হতে বিরত থাকবে।
আমি বলবো- আস্তিকের ইভ-টিজিং না করা এক্ষেত্রে “মনুষ্যত্ববোধ” এর পরিচায়ক নয়। কারণ, সে “লোভ” কিংবা “ভয়” এর কারণে উক্ত গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকবে। সে “ইভ-টিজিং না করা” কে মনে নেবে (ধারণ করবে) না বরং মেনে নেবে। ফলশ্রুতিতে, যদি কোনভাবে তার লোভ কিংবা ভয় তার রিপুর কাছে পরাজিত হয় তাহলে সে এ অপরাধটি করে বসবে। আর নাস্তিক যদি ইভ-টিজিং না করে তবে সে তা করবে না স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে।
একটা সমাজে সবাই আস্তিক থাকলেও সে কারণেই সে সমাজে অপরাধ সংঘঠিত হয়।
সুতরাং নাস্তিকদের মধ্যে পরকালে বিচারের বিশ্বাস না থাকায় তারা দুনিয়াতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হবেনা কথাটি মোটেও সঠিক নয়।