আল্লাহর দ্বি-চারিতা

-কি ব্যাপার কেমন আছো?
-আলহামদুরিল্লাহ!
-জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো, আর তুমি জবাব দিলে ‘সকল প্রশংসা কেবলি আল্লাহর’- মানে আলহামদুরিল্লাহ? এটা কেমন ভদ্রতা!
-আমাদের মুসলমানদের শিক্ষা হচ্ছে আমাদের সমস্ত মঙ্গল ঘটে আল্লাহ’র ইচ্ছাতে…।
-খারাপ বা মন্দ কাজ আল্লাহ ঘটায় না?
-কখনই নয়। মানুষের সব মন্দ আর খারাপ কাজের দায় মানুষের নিজের।
-তাহলে যে বলা হয় আল্লাহ’র হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না!
-অবশ্যই এটা সত্য। তবে মানুষকে একটা স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে আল্লাহ পাঠিয়েছেন, মানুষ নিজের বিবেক খাটিয়ে ভাল মন্দকে বেছে নিতে পারে।
-তাহলে সুরা লাহাবে যেভাবে আবু লাহাবকে ধ্বংস করার কথা বলা হয়েছে, তাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে, লাহাব যদি তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি আর বিবেক খাটিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলত তাহলে সুরা লাহাব মিথ্যা হয়ে যেতো না? আর সুরা লাহাবকে বাঁচাতে আল্লাহ কিছুতে চাইবেন না সে ইসলাম গ্রহণ করুক- তাই না? তার মানে দেখা যাচ্ছে এখানে আবু লাহাবের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি কিছুতে প্রয়োগ করার সুযোগ আল্লাহ দিতেন না।
-আল্লাহপাক জানত লাহাব কোনদিন ইসলাম গ্রহণ করবে না, নবীর প্রতি ঈমান আনবে না। কুরআনের একটা মিরাকল কি জানো, কুরআন বলেছে লাহাব কোনদিন ঈমান আনবে না- সত্যিই লাহাব ঈমান আনেনি- এতেই প্রমাণ হয় কুরআনের বাণী সত্য!
-আমি যদি একবার ঠিক করে ফেলি তোমাকে কোনদিন দলে টানব না আমি সে চেষ্টাই করব সব সময়। তুমি চেষ্টা করলেও আমি এমন সব কিছু করব যাতে তুমি আমার কাছে না আসো। কারণ আমি আগেই ঘোষণা দিয়েছি তুমি আমার দলে কোনদিনই আসবে না। তুমি আমার দলে আসলে আমার কথা মিথ্যা হয়ে যায়- কাজেই লাহাবকে ইসলামে ঈমান আনার সুযোগ মুহাম্মদ কিছুতেই দিতো না। যাই হোক, এবার আসো তোমার কথার প্রথম অংশ নিয়ে, তোমার কথা অনুসারে ধরে নেই যে লাহাব কোনদিন ঈমান আনত না এটা আল্লাহ জানতেন। এবার তাহলে তুমি আমাকে এটা বুঝাও স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির অধীন মানুষ আগামীকাল কি ঘটাবে সেটা কি করে অগ্রিম জানা যাবে? যদি বল লাহাব দোযগে যাবে এটা আল্লাহই ঠিক করে রেখেছিলেন আগেই- তাহলে তোমার শুরুর কথা মিথ্যা হয়ে যায়। মানুষের মন্দ পরিণতির দায় তাহলে অবশ্যই আল্লাহর।
-দেখো, আল্লাহ সব জানেন। তোমাকে উদাহরণ দিয়ে বুঝালে বুঝবে। একটা ক্লাশের শিক্ষক তার সব ছাত্রদের সম্পর্কে ধারণা রাখেন। কারা ফাস্টক্লাশ পাবে আর কারা পাশই করবে না তিনি কি তার ছাত্রদের সম্পর্কে জানেন না? আল্লাহও ঠিক জানতেন লাহাব পাশ করবে না।
-তুলনাটা ঈশ্বর প্রসঙ্গে খুবই দুর্বল তবু এটাকে ধরেই বলছি, একজন শিক্ষক ক্লাশের সবচেয়ে ভাল ছাত্র সম্পর্কে ধারণা করতেই পারেন সে ফাস্ট ক্লাশ পাবে। কিন্তু সেটা পাওয়া কিন্তু ঐ ছাত্রের জন্য নিশ্চিত না। ছাত্রটির পরীক্ষা খারাপ হতে পারে, অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা ড্রপ করতে পারে। কত ফাস্ট হওয়ার মত ছাত্র ফেল করে বসে। শিক্ষক আপসেট হয়ে পড়েন। বিস্ময়ে বলে উঠেন, আমি ভাবতেই পারিনি অমুক ফেল করে বসবে…! তোমার এই যুক্তি অনুযায়ী আল্লাও কি নিশ্চিত বেহেস্তে যাবার মত যোগ্য বান্দাকে বিস্ময় নিয়ে দেখবেন সে দোযগে যাচ্ছে? তোমার ছাত্র শিক্ষক উদাহরণ তো এই সমস্যায় ফেলে দেয়। এবার তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, একদম সোজা উত্তর দিবে- ইসলাম মতে একমাত্র মুসলমান যারা অর্থ্যাৎ যারা আল্লাহ আর মুহাম্মদকে নবী বলে স্বীকার করে তারা ছাড়া আর কেউ বেহেস্তে যাবে না। এটাই বেহেস্তে যাবার অন্যতম শর্ত। কেবল ভাল কাজ করে বেহেস্তে যাবার কোন পথ নেই, অবশ্যই তাকে ইসলাম বিশ্বাসকারী মুসলমান হতে হবে। আর আমরা সবাই জানি আল্লাহ মানুষের রূহ বা আত্মা পৃথিবী সৃষ্টির আগেই বানিয়ে রেখেছেন। এই রূহ আল্লাহ মায়ের পেটে প্রবেশ করিয়ে দেন। একজন হিন্দু মায়ের পেটের সন্তানের ভেতর রূহ তো আল্লাহই দেন যেহেতু তোমরা দাবী করো আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুত নাই। তার মানে জগতের সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী সন্তানের রূহ আল্লাই দেন। যেমন দেন মুসলমান সন্তানদের। এবার বলো, আল্লাহ যদি নিজেই কে মুসলমান ঘরে জন্মাবে আর কে কাফের ঘরে জন্মাবে নিজেই ঠিক করে দেন তাহলে কেন মানুষ অমুসলমান হবার জন্য দোযগে যাবে? আর কেন কোন আলাদা যোগ্যতা ছাড়াই একটা রূহ মুসলমানের দেহে প্রবেশ করে বেহেস্তে যাবে? এখানে তো রূহের কোন স্বাধীন ইচ্ছার সুযোগ নাই।
-এ্যাঁ… মানে… দেখো, কাফির হয়ে জন্ম নিলেও তাদের কাছে দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া হয়। সেটা গ্রহণ করে সে অবশ্যই বেহেস্তে যাবার সুযোগটা নিতে পারে।
-তুমি আমি জন্মগতভাবে মুসলমানের ঘরে জন্মেছি তাই শত অন্যায় করার পরও এক সময় আল্লাহ আর নবীকে বিশ্বাস করেছি তাই বেহেস্তে যাবোই- আর যে হিন্দুর ঘরে জন্মেছে সে জগতের কল্যাণের জন্য নিজের জীবনটা উজার করে দিলেও ইসলাম গ্রহণ করেনি বলে দোযগে যাবে- এটা অন্যায় নয়? তার রূহটা তো একটা হিন্দুর দেহে আল্লাহই প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। তুমি জন্মগতভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত আর তাকে দাওয়াতের আশায় বসে থাকতে হবে। আবার যেহেতু দাবী করছ মানুষ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির অধিকারী কাজেই ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করার সুযোগ তার জন্য পঞ্চাশ পঞ্চাশ। তাহলে কে তাকে এই অনিশ্চয়তার ফেলে দিয়েছে? অবশ্যই আল্লাহ!
-শোন, এসব বুঝার মত জ্ঞান আল্লাহতালা মানুষকে দেননি। এসব রহস্য একমাত্র আল্লাহতালাই গোপন রেখেছেন। আমাদের উচিত নয় এসব নিয়ে চিন্তা করা বুঝেছো।
-হা হা এইসব চিন্তা বা প্রশ্ন যে ঈমানকে চিচিং ফাঁক করে ফেলতে পারে এটা স্বয়ং প্রফেট ভালই বুঝতেন। আবু হুরাইয়া একটা হাদিস বর্ণনা করেছেন যেখানে তিনি বলেছেন, একবার তারা তাকদির (ভাগ্য লিখন) নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হলে নবীজি প্রবেশ করে তাদের আলোচনা শুনতে পেয়ে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের উপর রেগে যান। তিনি বলেন, “তোমাদেরকে কি এ বিষয়ে হুকুম করা হয়েছে, না কি আমি এ নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ বিষয়ে বির্তকে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তোমাদেরকে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে কখনো যেন বিতর্কে লিপ্ত না হও”।(তিরমিযী হা/২১৩৩; মিশকাত হা/৯৮, সনদ হাসান।)। বিপদটা ভালই টের পেয়েছিলেন নবীজি- কি বলো?
-কি বলব, তোমরা নাস্তিকদের সঙ্গে মেজাজ ঠান্ডা রাখাই কঠিন! সহজ জিনিসটাই বুঝো না!
-আজ পর্যন্ত কেউ বুঝাতে পারল না বন্ধু! তোমরাই বলো আল্লাহর ইশারা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, আবার বলছ মানুষকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছে। আবার কে মুসলমান হয়ে জন্মাবে কে কাফের সেটা তিনিই ঠিক করে দিয়ে বেহেস্ত দোযগ নির্ধারণ করে দিচ্ছেন! এত গন্ডগোল কেন বন্ধু? যে মার পেটে নবী জন্ম নিলেন তার জন্য দোয়া করা যাবে না কারণ সে কাফের- তাহলে কাফের নারীর পেটে কেন নবীকে জন্ম নিতে হলো?
-তোমরা নাস্তিকরা চরম মিথ্যাবাদী! নবীর বাবা-মা একেশ্ববাদী ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তারা কাফের ছিলেন না।
-এই নাও বন্ধু সহি ইসলামী সোর্স কি বলছে দেখো- আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, আমি নবীকে বলতে শুনেছি- আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা ভিক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম কিন্তু তিনি তা মঞ্জুর করেন নি। আমি তার কবর জিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম এবং তিনি তা মঞ্জুর করেছেন। সহি মুসলিম, বই-৪, হাদিস-২১২৯।
-আসলে তোমরা নাস্তিকরা কাফেরদের চাইতেও জঘন্য- পাপিষ্ঠ!… আল্লাহ তোমার হেদায়াত করুন আমিন…
-সুরা ইউনুস কি বলছে দেখো- তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি ‎কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে?(ইউনুস:৯৯)।‎ এসবের অর্থ কি বন্ধু? ধর্ম প্রচার বিষয়টাই কি তাহলে হাস্যকর হয়ে যায় না? ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে তলোয়ার হাতে জিহাদ করাটাও স্ববিরোধী হয়ে যায় না?
-তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না! তুমি ফেরাউন, কাফের, মালাউন নাস্তিক…! তোমাদের উচিত এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী আইনে বিচার করা!
-হা হা হা… এতক্ষণে আসল দ্বিনে ফিরে এসেছো বন্ধু…