মুসলমানরা দাবী করে তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন স্বয়ং আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছ থেকেএসেছে। এবং এটি দেড় হাজার বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় আছে। তারা কোন প্রমাণ ছাড়াই অন্ধেরমতো বিশ্বাস করে যে কুরআনের প্রতিটা কথা আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। এইপর্বটিতে কুরআনের প্রতিটি বাক্যকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে এর গঠন শৈলী বা এর অন্তর্নিহীতকথাগুলো মানুষের দ্বারা লেখা সম্ভব নাকি এটি একমাত্র কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তাই লিখতে পারে।মোট কথা কুরআনের বাক্যগুলোর অর্থ বিশ্লেষণ করে বা ব্যাখ্যা করে দেখা যে কুরআন আসলে কিবলেছে এবং এর বাস্তব তাৎপর্যই বা কি? বাস্তবতার নিরীখে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখাটাই এইপর্বটির উদ্দেশ্য। এই পর্বে সমগ্র কুরআন পর্যায়ক্রমে বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।
আয়াত ৮
আর মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিবসের উপরঈমান এনেছি, অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়।
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতে মোনাফেকদের কথা বলা হয়েছে। যারা মুহাম্মদ নবী হবার পরে মুসলমানহয়েছিল এবং মুহাম্মদকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। ফলে তারা বাকী অন্ধবিশ্বাসীদের মতোঈমানদার ছিল না। উল্লেখ্য এখানে ঈমানদার বলতে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে যারা কোন প্রমাণছাড়াই মুহাম্মদকে এবং মুহাম্মদের রচনা করা কুরআনের বাণীগুলোকে অন্ধের মতই আরবীয়সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু দেখা গেছে অনেকে মুহাম্মদের কথায় এবংচাটুকারীতায় আবেগ বশত ইসলাম গ্রহন করেছিল। কিন্তু পরক্ষনেই মুহাম্মদের নবুওয়ত্ব নিয়ে সংশয়দেখা দিয়েছিল তাদের মনে। ফলে তারা মুহাম্মদকে পুরোপুরি অবিশ্বাসও করতে পারতো না আবারতাকে নবিও মনে হতো না। ফলে তারা প্রকৃত অন্ধবিশ্বাসী মুসলমানদের মতো ঈমানদার ছিল না।বুদ্ধিমান মুহাম্মদ এসব ব্যাপার বুঝতে পারতো। ফলে তাদেরকে সতর্ক করার জন্য এবং তারা যাতেতাকে (মুহাম্মদকে) নবী হিসেবে সত্যই বুঝতে পারে সেজন্য এই আয়াতগুলো নাযিল করেছিল। যাতেমুনাফেকদেরকে বুঝাতে পারে যে তাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কুরআনের আয়াত নাযিল করাহয়েছে ফলে কুরআন আল্লাহর বাণী না হয়ে যায়ই না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা মুহাম্মদের চালাকী কিছুটা অনুমান করতে পারে কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিতহতে পারে না। আর তাই তারা মুহাম্মদকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারতো না আবার সেটা প্রকাশকরতেও পারতো না।
আরেক প্রকার মুনাফিক আছে যারা তরোবারির ভয়ে ইসলাম গ্রহন করেছিল কিন্তু মনে প্রাণে গ্রহনকরেনি। কারণ হলো ইসলামের দ্বিতীয় ধাপে মুহাম্মদের বাহিনী তরোয়ারের জোরে মানুষকে ইসলামগ্রহনে বাধ্য করে। ফলে তারা জীবন বাঁচাতেই ইসলাম গ্রহন করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ইসলাম গ্রহনকরেনি। তাদেরকেও মুনাফিক বলে গালী দেওয়া হয়েছে। এবং তাদেরকে বুঝাতেই এই আয়াতটিমুহাম্মদ নাযেল করেছে।
আয়াত ৯
তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে, প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সঙ্গেপ্রতারণা করে না, অথচ তারা এ সম্বন্ধে বোধই রাখে না।
ব্যাখ্যাঃ যারা মুহাম্মদকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি কিন্তু মুখে ইসলাম কবুল করেছি বলেছিল তারাস্বাভাবিক ভাবেই অন্ধবিশ্বাসী মুসলমানদের কাছে মনের প্রকৃত কথা বলতো না। তাই তারা মুহাম্মদএবং অন্ধবিশ্বাসী মুহাম্মদের অনুসারীদের সাথে প্রকৃত কথা গোপন করতে হতো। এজন্য মুহাম্মদসতর্ক করে বলছে যে তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে কিন্তু তারা আসলে নিজেদেরসাথেই প্রতারণা করে। তারা সেটা নিজেই বুঝতে পারে না।
আসলে মুহাম্মদ নিজের নবীয়ত্ব বুঝানোর জন্য তার নিজের অনুমান থেকে এই কথাগুলো লিখেছেযাতে তারা তাকে বিশ্বাস করে সে এবং তার রচিত আয়াতগুলো আল্লাহর কাছ থেকেই আসে, যারাসম্পূর্ণ রুপে মুহাম্মদকে বিশ্বাস করেনি। এই আয়াতগুলো কৌশল মুলক আয়াত যাতে মুহাম্মদ তারঅনুমানের উপর ভরসা করে কিছু আয়াত লিখেছে যাতে তাদের মধ্যে যদি কোন অল্প বিশ্বাসী বাঅবিশ্বাসী থেকে থাকে তারা যেন দ্বিধান্বিত হয়ে যায় যে মুহাম্মদ আল্লাহর মাধ্যমে তাদের সম্পর্কেজেনে গেছে। আর তাই তাদের আর কোন দ্বিধা না থাকে যে মুহাম্মদ আল্লাহর নবী এবং সে যেআয়াতগুলো সাহাবীদের কাছে বর্ণনা করে সেগুলো আল্লাহরই বাণী। মুহাম্মদ তাদের বুঝানোর জন্যবলছে, যারা এভাবে মুহাম্মদ এবং তার অন্ধ অনুসারীদের সাথে প্রতারণা করে তারা আসলে নিজেদেরসাথেই প্রতারণা করে কিন্তু তারা সেটা বুঝে না। তাই এই আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহ (আসলেমুহাম্মদ) ও মুমিনদের (মুহাম্মদকে অন্ধের মতো বিশ্বাসকারী) সাথে প্রতারণা করে প্রকৃতপক্ষেনিজেদের সাথেই প্রতারণা করে।
আয়াত ১০
তাদের অন্তরে ব্যাধি (রোগ) রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন এবংতাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো।
ব্যাখ্যাঃ কিছু লোক মুহাম্মদকে নবী বলে বিশ্বাস করলো না। এবং কিছু মানুষ তার নবুওয়ের ব্যাপারেপূর্ণ বিশ্বাস রাখতো না বলে তারা মুহাম্মদকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছিলো না। কিন্তু তারামুহাম্মদকে নবী বলে মেনে নিয়েছিল। তারা প্রথমে ভেবেছিল যে হয়তো মুহাম্মদ সত্য সত্যই কোনসৃষ্টিকর্তার নির্বাচিত কেউ। কিন্তু তারা মুসলমান হবার পরে তাদের মনে মুহাম্মদের নবুওয়েরব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয়। ফলে তারা মুহাম্মদকে যেমন অস্বীকার করতে পারছিল না ঠিক তেমনিতাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতেও পারছিলো না। তাদেরকে মুহাম্মদ ধিক্কার দিয়ে এই আয়াতটি নাযিলকরেছে। তাদের প্রতি মুহাম্মদের প্রতিহিংসা জন্ম নেয়। কিন্তু কে প্রকৃত মুমিন আর কে মুনাফিক সেটামুহাম্মদের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে বিশ্বাস দেবারজন্য প্রথমে তাদেরকে বুঝানোর জন্য এই আয়াতের পূর্বের আয়াতগুলো নাযিল করেছে। এবং যারাএর পরেও তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করলো না তাদেরকে গালাগালি দিয়ে এই আয়াতটি নাযিল করেছে।এই আয়াতটির মাধ্যমে অবিশ্বাসী (কাফের) এবং অর্থ অবিশ্বাসীদেরকে (মুনাফিকদেরকে) মুহাম্মদঅন্তরে ব্যাধি আছে বলে গালাগালি দিয়েছে। এমনকি তাদেরকে ভয় দেখাতে এই আয়াতটিতে তাদেরজন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে বলে হুমকি দিয়েছে। মুলত নানা চাটুকারিতার মাধ্যমে সবাইকে তাকে নবীহিসেবে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের জন্য নানা কৌশলমুলক আয়াত নাযিল করেছে এবং যারা তারপরেওতাকে নবী হিসেবে অন্ধের মতো বিশ্বাস না করবে তাদেরকে গালাগালি দেবার মাধ্যমে এবং শাস্তিরহুমকি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে।
আয়াত ১১ ও ১২
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না তখন তারা বলে আমরা তো শুধু সংশোধনকারী।
সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতটি চরম কৌশলী আয়াত। এই আয়াতের মাধ্যমে কুরআনের রচয়িতা (মুহাম্মদ) অবিশ্বাসীদেরকে অশান্তি সৃষ্টিকারী বলেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আরবে নতুন একটি ধর্ম তৈরি করে মুহাম্মদই চরম অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। মুহাম্মদ মক্কায় শান্তিপ্রিয় ভাবে ধর্ম প্রচার করেছিল ১০ বছর। কিন্তু ধর্ম প্রচাকর হিসেবে চরম ভাবে ব্যার্থ হয়েছিল মুহাম্মদ। কারণ ১০ বছরে মাত্র ১২০ থেকে ১৩০ জন অনুসারী যোগাড় করতে পেরেছিল মাত্র। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ। মক্কায় মানুষের কাছে মুহাম্মদ নিজেকে নবী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল চরম ভাবে। ফলে যখন সে মদীনায় গেল এবং প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তলোয়ার হাতে তুলে হত্যা, ডাকাতি, লুটতরাজ শুরু করলো এবং মানুষকে তার ধর্ম পালন করতে বাধ্য করলো, তাদের কাছ থেকে জোর করে জিজিয়া কর (চাঁদাবাজী) আদায় করলো, মানুষকে বাহুবলে কৃতদাস বানালো ইত্যাদি ইত্যাদি নানবিধ অপরাধ করে আরবে অশান্তি বাড়িয়ে তুললো। আর তার অনুসারীদেরকে ভ্রমগ্রন্থ রাখার জন্য অবিশ্বাসীদেরকে (যারা শান্তিতে বসবাস করছিল তাদেরকে) অশান্তিসৃষ্টিকারী বলে গালাগালি করে কুরআনের আয়াত নাযিল করলো। এতে তার অন্ধ অনুসারীদেরকে আরও ভ্রান্তিতে রাখা গেল। প্রকৃতপক্ষে মক্কার প্যাগান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যখন মুহাম্মদ তার সৃষ্টি করা নিজের ধর্ম প্রচার করতো তখন মক্কার মানুষজন মুহাম্মদকেই অশান্তিসৃষ্টিকারী হিসেবে দেখেছিল। সব ধর্মের অনুসারীরাই আরবে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করছিল। কিন্তু মুহাম্মদ তার নিজের তৈরি করা ধর্ম যখন মক্কাবাসীদের কাছে বারবার প্রচার করে বিরক্ত করতে থাকলো তখন তারা মুহাম্মদের উপর রেগে গিয়ে তাকেই অশান্তি সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখতে থাকলো। আবার মুহাম্মদ মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করার পর প্রতিহিংসার দরুন হত্যাযজ্ঞ শুরু করলো তখন মদীনার মানুষ এবং মক্কার মানুষ চরম অশান্তিতে ছিল মুহাম্মদের কারণে। তাই প্রকৃত অশান্তিকারী ছিল মুহাম্মদ নিজে। কিন্তু মুহাম্মদ তার অনুসারীদেরকে অন্ধ করে রাখতেই এই আয়াতটি নাযিল করেছে এবং তাকে নবী হিসেবে না মানা মানুষদেরকে অশান্তি সৃষ্টিকারী বলে গালি দিচ্ছে কুরআনের আয়াত তৈরি করার মাধ্যমে। যারা মুহাম্মদকে পুরোপুরি নবী হিসেবে বিশ্বাস করতে পারছিল না কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ করতে পারেনি মুহাম্মদের ভয়ে এবং লোক লজ্জার ভয়ে তারাও অশান্তি সৃষ্টিকারী ছিল না। বরং তারা অশান্তির (মুহাম্মদের) হাত থেকে বাঁচার জন্যই তাদের মনের অবিশ্বাস প্রকাশ করছিল না। কিন্তু তাদেরকে মুহাম্মদ অশান্তি সৃষ্টিকারী বলে গালি দিয়ে কুরআনের আয়াত নাযিল করার মাধ্যমে মুহাম্মদের অন্ধ অনুসারীদেরকে আরও ভ্রান্তিতে রেখেছে। মুহাম্মদ তার অনুসারীদেরকে ভ্রান্তিতে রাখতে বলেছে অবিশ্বাসীদেরকে (কাফির) এবং অর্ধবিশ্বাসীদেরকে (মুনাফিক) যদি বলা হয় তখন তারা অস্বীকার করে বলে তারা অশান্তি সৃষ্টিকারী নয় বরং তারা সংশোধনকারী। কিন্তু যখন অবিশ্বাসকারীরা মুহাম্মদের করা আরোপ অস্বীকার করে বললো, তারা অশান্তি সৃষ্টিকারী নয় বরং মুহাম্মদই অশান্তি সৃষ্টিকারী তখন মুহাম্মদ তার অন্ধ অনুসারীদেরকে ভ্রান্তিতে রাখার জন্য বলেছে, তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকো কারণ তারাই প্রকৃত অশান্তি সৃষ্টিকারী কিন্তু তারা সেটা বুঝতে পারে না।
এখন কথা হলো কে প্রকৃত অশান্তি সৃষ্টিকারী। মোটামুটি শান্তিতে থাকা আরববাসীরা নাকি নতুন ধর্মসৃষ্টি করে তা সবার কাছে বারবার প্রচার করে তাদেরকে বিরক্ত করে মানুষকে অতিষ্ট করা, মানুষখুন করে ডাকাতি করা, তলোয়ালের ভয় দেখিয়ে- হত্যা করে- বলপূর্বক ধর্ম চাপিয়ে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করা মুহাম্মদই। আর যখন আরবের মানুষ মুহাম্মদকে ডাকাত, খুনি হত্যাকারী সর্বপরী আরবেঅশান্তি সৃষ্টিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঠিক তখনই মুহাম্মদ তার অনুসারীদেরকে বোঁকা বানিয়েরাখার জন্য কুরআনের আয়াত সৃষ্টি করে অবিশ্বাসীদেরকে এবং সংশোকারীদেরকে অশান্তি সৃষ্টিকারীহিসেবে উল্লেখ করছে। যাতে তার অনুসারীরা ভ্রান্তির মধ্যে থাকে এবং মুহাম্মদই যে প্রকৃত অশান্তিসৃষ্টিকারী সেটা বুঝতে না পারে। আর যখন মোটামুটি শান্তিকামী মানুষদের বলছে তারা অশান্তিসৃষ্টিকারী কিন্তু তারা তা বুঝে না; প্রকৃত সত্য হলো মুহাম্মদই অশান্তি সৃষ্টিকারী কিন্তু তার অন্ধঅনুসারীরা তা বুঝে না। কারণ তারা অন্ধবিশ্বাসী এবং মুহাম্মদের অন্ধ অনুসারী। প্রকৃতপক্ষে মুহাম্মদতার অন্ধ অনুসারীদেরকে আরো ভ্রান্তিতে রাখার জন্যই এই কৌশলময় আয়াতটির অবতারনাকরেছে।
আয়াত ১৩
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরুপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরুপ ঈমান আন; তখনতারা বলেঃ নির্বোধেরা যেরুপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরুপ ঈমান আনবো? সাবধান! নিশ্চয়ইতারাই নির্বোধ কিন্তু তারা অবগত নয়।
ব্যাখ্যাঃ স্বভাবতই কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সব সমাজেই কম বেশী থাকে। ফলে তারা খুব সহজেইজাদু টুনা, অতিপ্রাকৃতিক কুসংস্কার, এবং হুজুর-পীর-ফকির-ওঝা এসব অন্ধবিশ্বাসে নিমঘ্ন থাকে।ফলে যখন কোন ভন্ড প্রতারক এসে ভেলকি (কৌশল বা মেজিক) দেখায় তখন খুব সহজেই এই শ্রেণীরমানুষগুলো এসব ভন্ড প্রতারককে বিশ্বাস করে ফেলে। এবং তারা এসব ভন্ড প্রতারকদের হাতেরমুঠোয় চলে আসে। কিন্তু সমাজে শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান আরেকটি অংশ থাকে যারা এসব ভন্ডামী এবংপ্রতারণা খুব সহজেই ধরে ফেলে। ফলে সমাজে শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান মানুষগুলোকে উদ্দেশ্য করে ওইসব ভন্ড প্রতারকরা নানা রকমের চাটুকারিতামুলক বাক্য বলে থাকে। যেমন- “ধ্বংস হয়ে যাবিরে মূর্খ।“ অর্থাৎ তাদেরকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করলেই কেউ মূর্খ হয়ে গেলো।
মুহাম্মদও কুরআনে এমন বাক্যই নাযিল করেছে। যারা তাকে বিশ্বাস করেছে তাদেরকেই জ্ঞানী এবংবুদ্ধিমান বলে উল্লেখ করেছে যাতে বোঁকা অন্ধবিশ্বাসীগুলো মনে করে যে মুহাম্মদকে বিশ্বাস করেতারা ভুল করেনি। আসলে এসব কৌশলগত বাক্য সমাজের অশিক্ষিত মূর্খ এবং কুসংস্কারাচ্ছন্নমানুষগুলো ধরতে পারে না বলে তারা এসব বাক্যকে আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে বলে মনে করেছে।কিন্তু যেকোন লেখকেরই যে অনেক অনেক লিখনি কৌশল থাকে সেটা সেই সময়ের আরবেরমানুষগুলো বুঝতে পারতো না। আসলে সেটা বুঝা তাদের জন্য সহজ ব্যাপার ছিল না। ফলে মুহাম্মদসেসব অন্ধবিশ্বাসী বোঁকা মানুষগুলোকে সান্তনা দিতেই এই আয়াতের অবতারনা করেছে। সে বলেছেযারা অবিশ্বাসী বা যুক্তিবাদী এবং সংশয়বাদী তাদেরকে অন্ধবিশ্বাসীদের মতো অন্ধবিশ্বাস করতেবললে তারা সেটা করতে চায় না। কারণ স্বভাবতই তারা যুক্তিবাদী এবং সংশয়বাদী, তাই তারাঅন্ধবিশ্বাসী হতে চায় না। কিন্তু মুহাম্মদ এসব যুক্তিবাদী বা সংশয়বাদী মানুষদেরকেই নির্বোধ বলেসম্বোধন করেছে। যাতে তাকে বিশ্বাস করা বোঁকা অন্ধবিশ্বাসীরা শান্তনা পায় যে তারা মুহাম্মদকেনবী হিসেবে মানেনি কারণ তারা নির্বোধ। এই বোধটা তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেই মুহাম্মদ এইকৌশলমুলক আয়াতটি নাযিল করেছে।
আয়াত ১৪ এবং ১৫
এবং যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলেঃ আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন তারানিজেদের দলপতি ও দুষ্ট নেতাদের সাথে নির্জনে মিলিত হয়, তখন বলেঃ আমরা তোমাদের সঙ্গেইআছি, আমরা তো শুধু ঠাট্টা বিদ্রুপ করে থাকি।
আল্লাহ তাদের সঙ্গে ঠাট্টা বিদ্রুপ করছেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তহয়ে ফিরার জন্য ঢিল দেন।
ব্যাখ্যাঃ মানুষ প্রতারণা করে এটা মানুষের একটা স্বাধারণ মানবীয় স্বভাব। কিন্তু তাই বলে আল্লাহযে কিনা মুসলমানদের সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা সে কি করে মূর্খ মানুষের সাথে প্রতারণা বাঠাট্টা বিদ্রুপ করে? আল্লাহ কি মানুষের মতই নাকি! নাকি আল্লাহ আসলে মুহাম্মদই যে হিংসাত্বকমনোভাব প্রকাশ করে যখন তাকে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করে এবং ঠাট্টা বিদ্রুপ করে? মুলত এইআয়াতটিতে মুহাম্মদই তার মনের কথা ব্যাক্ত করেছে। কারণ যখন কিছু মানুষ বাদে বাকী সবাইতাকে নিয়ে হাসি তামাশা করলো এবং তাকে অবিশ্বাস করলো তখন সে হিংসাত্বক হয়ে উঠলো। কিন্তুযেহুতু মক্কায় মুহাম্মদের তখন ক্ষমতা শুন্যের কাছাকাছি তখন সে নিজে প্রতিশোধ নিতে পারছিল নাবলে কুরআনে জ্বালাময়ী আয়াত নাযিল করার মাধ্যমে তার জ্বালা কমানোর চেষ্টা করলো এবং বোঁকাঅন্ধবিশ্বাসীদের শান্তনা স্বরুপ এই আয়াতগুলো নাযিল করলো।
আসলে মুহাম্মদ নবী দাবী করার পর কিছু মানুষ ছিল যারা আগে থেকেই মুহাম্মদকে চিনতো। আসলেনবীওত্বের আগ পর্যন্ত মুহাম্মদ শান্ত শীষ্ট এতিম ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। অনেকটা নিমাইসাধুদের মতো। সমাজের অবহেলিত তুচ্ছ মানুষ হিসেবে কিছু করার ক্ষমতা মুহাম্মদের কখনই ছিলনা। তাই তাকে সবাই ভালো ছেলে হিসেবেই জানতো। এজন্য অনেকে তার নবুয়তের ব্যাপারে নিশ্চিতহবার জন্য এবং তার ভেতরের খবর বের করার জন্য তাকে মুখে নবী হিসেবে মানলেও মন থেকেনবী হিসেবে মানেনি। কারণ সে এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি যাতে তারা বুঝতে পারে যে সেনবী। শুধু কুরআনের কৌশলী আয়াত নাযিল করা ছাড়া মুহাম্মদ নবুওয়ের পাঁকা পুক্ত কোন প্রমাণদেখাতে পারেনি। শুধু মুখের কথাতে সবার মন গলাতে চেষ্টা করেছে। তাই কিছু মানুষ যেমন বুঝতেপেরেছিল যে মুহাম্মদ নবী হবার যোগ্য নয় ঠিক তেমনি কিছু মানুষ নিশ্চিত ছিল না যে সে আসলেইনবী কিনা। ফলে তাদের মধ্য থেকে অনেকে মুহাম্মদকে নবী বলে মুখে মানলো কিন্তু প্রমাণহীনতারজন্য অন্তর থেকে মানতে পারলো না। কিন্তু যেহেতু তারা একবার মুখ থেকে উচ্চারণ করে তাকে নবীবলে সীকৃতি দিয়ে ফেলেছে তাই সেই কথা ফিরিয়ে নিতে পারছিল না। ফলে যখন মুহাম্মদের অন্ধঅনুসারীরা জিঙ্গেস করতো তখন তারা স্বীকার করতো যে তারা মুহাম্মদের অনুসারী। কিন্তু যখনবুদ্ধিমান আরবের মানুষগুলোর সাথে তাদের দেখা হত তখন তারা তাদেরকে মনের সত্যি কথাটিবলে দিতো। এবং মুহাম্মদকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো। এটা মুহাম্মদের কানে গেলে নিরুপায়মুহাম্মদ তাদেরকে সাবধান করার জন্য প্রথমে হুমকি ধামকি মুলক আয়াত নাযিল করে। এবং পরেতারা মুহাম্মদকে নিয়ে ঠাট্টা করে বলে তাদেরকে বুঝানোর জন্য কুরআনে আয়াত নাযিলের মাধ্যমেবলে যে যারা মুহাম্মদকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে তাদেরকে নিয়ে আল্লাহও ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। আসলেমুহাম্মদ মক্কায় ক্ষমতাহীন ছিল বলে তাদের ঠাট্টা বিদ্রুপের পাঁকা জবাব দিতে অক্ষম ছিল। কিন্তু তারমনের জ্বলতে থাকা প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে থাকতো। ফলে সে কুরআনের আয়াত নাযিলেরমাধ্যমে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করতো। এবং এরকম কৌশলী আয়াত নাযিল করার মাধ্যমেযেমন নিজের মনকে শান্তনা দিত ঠিক একই ভাবে তার অন্ধবিশ্বাসী অনুসারীরা যেন মনে সংশয় নাতৈরি করে সেজন্য কুরআনে আয়াত নাযিলের মাধ্যমে উল্টাপাল্টা বুঝ দিয়ে রাখতো। যারামুহাম্মদকে নিয়ে ঠাট্টা করে তাদের উপর আল্লাহর গজব না নেবে এলেও (যেমন পূর্ববর্তী নবীদেরকেঅমান্যকারীদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হতো) তাদেরকে নিয়ে আল্লাহ ঠাট্টা বিদ্রুপ করে এমনএকটি শান্তনা যাতে মুহাম্মদের অন্ধবিশ্বাসীদের মধ্য তৈরী হয় এজন্যই এই কৌশলী আয়াতের আমদানীকরণ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই পর্বগুলোতে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কুরআনকে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।বাস্তববাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে কুরআনকে বাস্তবতার ও বিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে বিচার করলেকুরআন যে রুপ ধারণ করবে এই পর্বগুলোতে সেটাই পর্যালোচনা করা হচ্ছে।