মধ্যপ্রাচ্যে তেলের খনি পাবার আগে জঙ্গিরা সব কোথায় ছিল? কুরআন হাদিস তো ১৪০০ বছর ধরেই আছে কই তেলের খনির আগে তো জঙ্গিবাদ দেখা যায় নাই! এবার বুঝছ ব্যাপারটা, সবই আমেরিকার তেলেসমাতি!
-ইসলাম ক্ষমতায় থেকেছে সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত। এই কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত চলা ইসলামী শাসনের পতনের পর ইসলামের তাত্ত্বিক গুরুরা আত্মউপলব্ধি করেন এই বলে যে, নবী মুহাম্মদ ও তার সাহাবীদের ইসলাম ছিল পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ। ইসলামের পতনের কারণ হচ্ছে এই আসল ইসলাম থেকে বিচ্যুতি। এ কথা অবশ্য সত্য ইসলামী শাসনকালে একজন শাসকের ব্যক্তিগত পছন্দ গুরুত্ব পেয়েছে পরবর্তীকালে। অনেকেই ধর্ম থেকে শিল্প সাহিত্য জ্ঞান চর্চার অনুরাগী ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে অনেক শাসন অমুসলিম প্রজাদের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিশীল। যুদ্ধের বদলে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে অমুসলিম শাসকদের সঙ্গে। এমনকি অমুসলিমদের রাজসভায় স্থান পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল যা ছিল সম্পূর্ণ ইসলামী আইন বিরোধী। ইতিহাসে দেখা গেছে ইমাম বা ধর্মীয় গোষ্ঠি এসব কারণে বহু মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। ডেকে এনেছেন অন্য কোন মুসলিম শাসককে হস্তক্ষেপ করতে। মুসলমানরা যখন মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকা ইউরোপ পর্যন্ত তাদের শাসন বিস্তৃত করেছেন তখন মুসলমানদের ‘জিহাদ’ পুরোপুরি মুসলিম সেনাবাহিনীর উপর ন্যাস্ত থাকে। সাধারণ মুসলমান খলিফাকে খাজনা দিয়ে ইসলামী দেশে বসবাস করত মাত্র। কিন্তু যখনই মুসলিম শাসকদের তাদের সালাফ (পূর্ব পুরুষ) থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে বলে মনে করত ইমাম বা ধর্মীয় নেতারা তখনই জিহাদের ডাক আসত তাদের কাছ থেকে। ইতিহাসে এরকম বড় জিহাদের ডাক দিয়েছিলেন ইমাম গাজ্জালির কাছ থেকে। উদারচেতা মুক্তমনা মুতাজিলা মতবাদের বিরুদ্ধে নবী মুহাম্মদের ‘আসল ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার ডাক দেন গাজ্জালি। হাজার হাজার মুতাজিলা কবি, দার্শনিক, লেখক, বিজ্ঞানীর গলা কাটা হতে থাকে। কারাবন্দী থেকে শুরু করে দেশান্তরিন ঘটতে থাকে মুতাজিলাদের।… ইতিহাসে এরকম ছোটবড় আরো জিহাদী আন্দোলন যাকে ‘ইসলামের পূণরুত্থান’ বলে মুসলমানরা অভিহত করে সেরকম খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে সৌদি আরবের আব্দুল ওহাবের সালাফদের (পূর্ব পুরুষদের) ইসলাম প্রতিষ্ঠার ডাক অন্যতম। আজকে তোমরা যাকে ‘সালাফীবাদ’ বলে ডাকো। আর ভারতবর্ষের কথা না বললে তো ইতিহাস অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। ভারতে মুসলমানদের পরাজিত করে ক্ষমতা কেড়ে নেয় ইংরেজরা। এই ক্ষমতা হারানোর আঘাত কাটিয়ে উঠতে এক শতাব্দীকাল কেটে যেতেই আত্মবিশ্লেষণে তিতুমীর, শরিয়তুল্লাহ, দুদু মিয়ারাও একমত হোন নবী মুহাম্মদের আসল ইসলাম থেকে বিচ্যুতিই ছিল মুসলমানদের ক্ষমতা হারানোর অন্যতম কারণ। হজ করতে গিয়ে তারা মক্কা-মদিনার তাত্ত্বিক নেতাদের কাছে ‘সালাফী ইসলামের’ তালিম নিয়ে এসে ভারতবর্ষে ইংরেজ খেদানোর আন্দোলন শুরু করেন যা ছিল তাদের ঈমানী দায়িত্ব ‘জিহাদ’।
-তার মানে বলতে চাইছো তেলের রাজনীতি এখানে নেই?
-থাকবে না কেন, একশবার আছে। যে কোন কিছুর ফয়দা লোটার অনেকগুলো গোষ্ঠিই সজাগ থাকে। মুসলমানদের জিহাদের নগদ ফয়দা লোটার বহু গোষ্ঠিই তৎপর আছে। কিন্তু আমরা আলোচনা করছি কি বিষয়ে? জঙ্গিবাদ হঠাৎ গজানো কিছু কিনা- তাই না? এখন আমরা দেখলাম তথাকথিত জঙ্গিবাদ মাধ্যপ্রাচ্যের তেলের লোভে আসা পশ্চিমাদের আগ্রসানের কারণে মাথাচাড়া দিয়েছে- এই সরলীকরণ অসম্পূর্ণ, অর্ধসত্য এবং কখনো কখনো সম্পূর্ণ মিথ্যা। তথাকথিত জঙ্গিবাদ ইসলামের সঙ্গেই ছিল। যখন ইসলাম ক্ষমতায় ছিল তখন জিহাদে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। আচ্ছা, একটা কথার জবাব দাও তো, সারা পৃথিবীতেই নানা জাতি, সম্প্রদায় নিপীড়িত হচ্ছে- তার জবাবে তারা লড়াইও করছে। কিন্তু কেবল মুসলমানদেরকেই ‘জঙ্গি’ হতে দেখা যায় কেন?
-কেন?
-কারণ তুমি কখনো শুনেছো পৃথিবীতে কোন ধর্ম শাসন করেছে প্রায় অর্ধেকটা? ইসলামের সাম্রাজ্য এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপ আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। এই সাম্রাজ্য বিছানোর কাজটার পুরোটাই ইসলামের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটেছিল। ইসলাম কেবল নামাজ-রোজা পালন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ধর্ম নয়, ইসলাম বলে তার জন্য কাফেরদের দেশগুলো দখল করে সেখানে আল্লাহর শাসন কায়েম করতে। এটা তুমি খ্রিস্টান বা ইহুদী ধর্মে পাবে না। ভারতবর্ষের হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মেও নেই। এই দিক দিয়ে ইসলাম অন্য ধর্ম থেকে একদমই অনন্য। ইসলামের সমস্যাও তাই অনন্য!…