কিছু রমজান ফ্যাক্টস… রমজান মাস সংযমের নাকি উৎসবের?

আর দুইদিন পর শুরু হচ্ছে মুসলমানদের রোজা রাখার উৎসব রমজান।

কিছু রমজান ফ্যাক্টসঃ

*সারাদিন কিছু না খেলেও ইফতারীতে ভরপুর খাওয়া দাওয়া। ছোলা, বুট, মুড়ি থেকে শুরু করে কাবাব, মুরগির রোস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও শোনা যায়, নবী মোহাম্মাদ শুধু পানি আর খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। এক্ষেত্রে সুন্নাত পালন করতে মুসলমানদের দেখা যায় না। ভরপেট খেয়ে পেট ফুলিয়ে অনেককেই তারাবীর নামাজ পড়তে অনাগ্রহী দেখা যায়।

* যেখানে রমজানকে সংযমের মাস বলা হয়, সংযম তো পরের ব্যাপার। কে ইফতারীতে কত আইটেম যোগ করতে পারে তাই নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলে। ফেসবুকে ইফতারির আইটেমের ছবি না দিলেই নয়। শুধু এই রমজান মাসে কত খাবার অপচয় হয় তা বলাই বাহুল্য। আর এই মাসে খাদ্যদ্রব্যের বিক্রি থাকে সারা বছরের চেয়েও বেশি।

*মুসলমানদের এই মাসেই বেশি ধর্মপ্রাণ হতে দেখা যায়। সারাদিন না খেয়ে থাকলেও ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে অনেককেই দেখা যায় না। তবে শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে জায়গা হয় না।

*সারাদিন না খেয়ে ইফতারীতে পেট ভরে তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে অনেকেই তারাবীর নামাজে মসজিদ দুর্গন্ধময় করে ফেলেন। এই মাসেই অনেকে বিভিন্ন পাকস্থলী সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এই মাসে মুসলমানদের মুখ থেকে উৎকট গন্ধ এলেও তাকে বেহেস্তের সুগন্ধি বলে প্রচার করা হয়।

*এই মাসেই রাস্তায় রাস্তায় মসজিদে ডোনেশনের নামে ভিক্ষাবৃত্তি, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইফতারির আগে ডিজিটাল ভিক্ষাবৃত্তি চলতে থাকে। সব টেলিভিশন চ্যানেলে নারী উপস্থাপিকাদের হিজাব পড়তে দেখা যায়। এই মাসে টিভি চ্যানেলগুলিকে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচারে মনোযোগী হতে দেখা যায়। ঈদের আগের দিন থেকে শুরু করে ঈদের দশম দিন পর্যন্ত চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

* সেহরির আগে মুসলমানদের ঘুম থেকে উঠানোর জন্য প্রতি মসজিদের মাইকে চলে অনবরত অত্যাচার। সেহরির আগে মুসলমানরা দল বেঁধে রাস্তায় হট্টগোল করে থাকে, সব দরজায় আঘাত করে ঘুমন্ত মানুষকে জাগানোর চেষ্টা করে থাকে, সেই বাড়ি হিন্দুর হোক অথবা খ্রিস্টানের।

* রমজান মাস ঈদের শপিং এর মৌসুম বলা যেতে পারে। ধর্ম পালনে ততটা মনোযোগী না হলেও ঈদের ড্রেসের প্রতি বেশি মনোযোগী দেখা যায়। অনেকে ঈদে পছন্দের জামা না পেয়ে আত্মহত্যাও করে থাকে। ঈদের পোশাকের পছন্দের ক্ষেত্রে হিন্দু দেশ ইন্ডিয়ার বিভিন্ন নায়ক নায়িকাদের পোষাকের প্রাধান্য বেশি থাকে।

* রোজা থাকাটা এক ধরনের স্টাইলে পরিনত হয়। রোজা রেখে সারাদিন মিথ্যা বলে, কুকর্ম করে, মানুষকে ঠকিয়ে ইফতার করলেও কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু কেউ রোজা না রাখলে তাকে কটু কথা শুনতে হয়।

* রাস্তায় কাপড় দিয়ে ঘেরা অনেক রেস্টুরেন্ট দেখা যায়। রোজা না রাখা মুসলমানরা চুপি চুপি সেখানে গিয়ে খাবার খেয়ে থাকেন। অনেক এলাকায় জোর করে দিনের বেলায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে রাখা হয়।

* অফিস আদালতে কাজ কর্ম তেমন হয়না বললেই চলে। সবাই দেরি করে অফিসে আসেন, ক্লান্তির কারনে খুব বেশি কাজ করেন না, তার উপর নামাজ পড়ার কারনে কাজে বিরতি দিতে হয়, বাসায় ইফতারি করার জন্য সবাই খুব তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হয়ে যান।

* শুধু এই মাসেই মুসলমানদের ধর্মভীরু হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈদের দিন থেকেই আবার যেই লাউ সেই কদু।

রোজা নামক উৎসবের সার্থকতা কোথায়, যেখানে লাখো লাখো গরিব মানুষ প্রতিদিন রোজা রাখছে অনিচ্ছাসত্ত্বেও। ঈদে তো দূরে থাক, শীতে পড়ার মত একটি কাপড় যাদের জুটছেনা। যারা ইফতারি করছে দুইদিনের বাসি পান্তাভাত দিয়ে অথবা শুধু মুড়ি দিয়ে।

যেই গরিবদের কষ্ট উপলব্ধি করার লক্ষ্যে রোজার উৎপত্তি, তা কি আদৌ পালন হচ্ছে, নাকি চলছে ১ মাস দিনের বেলায় না খেয়ে ইফতারিতে ভুরিভোজনের উৎসব।

”জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনা নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাড়?”