মোহাম্মদের অনুসারীরা কেন মোহাম্মদের পিছনে ঘুরত তার কিছু নমুনা তুলে না দিলে ইসলামের মাহাত্ম সঠিক জানা যাবে না। প্রাথমিক মক্কার জীবনে ১২ বছরের মত ইসলাম প্রচার করার পরেও তেমন সাফল্য আসে নি। অথচ যেই উনি মদিনাতে হিজরত করলেন ওনার সাফল্য আকাশ চুম্বী। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে ব্যখ্যার দাবী রাখে।
মোহাম্মদ মদিনাতে হিজরত করার আগে তার কিছু অনুসারী মদিনাতে হিজরত করে। তো ওখানে যাওয়ার পর তাদের কোন কর্ম সংস্থান হয় না, মদিনাবাসিরাও গরীব তাদেরকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ্য তাদের নেই। আবার মদিনাবাসীদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ করার কোন অভিজ্ঞতাও তাদের নেই। এমতাবস্থায় মদিনাতে আসার পর মোহাম্মদ চিন্তা করতে থাকে কিভাবে এসব লোকজনের ভরণ পোষন করা যায়। সাথে সাথে তার মাথায় চলে আসে একটা বুদ্ধি (কুবুদ্ধি?)। সেটা হলো মদিনার পাশ দিয়ে চলে গেছে বানিজ্যপথ, মক্কার লোকজন সে পথে সিরিয়ার সাথে বানিজ্য করত। মূলত: সিরিয়া থেকে তারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মক্কাতে আমদানী করত। মোহাম্মদের মনে হলো- মক্কার লোকদের এ বানিজ্য কাফেলাতে হানা দিয়ে তাদের মালামাল লুন্ঠন করা হতে পারে উপার্জন করার সবচাইতে মোক্ষম উপায়। মোহাম্মদ নিজেও সেই ছোট বয়েস থেকে বেশ কয়েকবার এ পথে বানিজ্য কাফেলার সাথে সামিল ছিল। মক্কার বানিজ্য কাফেলার ওপর আক্রমনের অজুহাতও আছে। তা হলো মদিনায় হিজরত কারী মক্কাবাসীদেরকে কুরাইশদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা এই বলে যে- কুরাইশরা তাদেরকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবে প্রথম দিকের বানিজ্য কাফেলা আক্রমনে মোহাম্মদ ও তার মক্কার সাঙ্গ পাঙ্গরাই যোগ দিত, মদিনাবাসীরা যোগ দিত না। সেই তৎকালেও মদিনাবাসীদের একটা ন্যূনতম নীতিবোধ ছিল তা হলো-আক্রান্ত না হলে কাউকে বিনা কারনে আক্রমন করা যায় না বা নিরীহ বানিজ্য কাফেলা আক্রমন করে তাদের মালামাল লুটপাট করা যায় না।কিন্তু মোহাম্মদ ও তার দল বলের এ ধরণের কোন নীতি ছিল বলে দেখা যায় না। ব্যপক ভাবে প্রচার করা হয় যে মক্কাতে মোহাম্মদকে কুরাইশরা খুব অত্যাচার করত, কিন্তু বাস্তবে অত্যাচার নয়, কুরাইশরা তাদের ধর্মকে প্রকাশ্যে অপমান করার জন্য মাঝে মাঝে মোহাম্মদকে অপমান করত। ইতিহাস তো বটেই এমনকি হাদিসেও তার প্রমান পাওয়া যায়। যেমন-
মুহাম্মদ ইবনে মুছান্না এবং মুহাম্মদ ইবনে বাশশার বর্ণনা করেছেন…. আব্দুল্লাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ সিজদায় ছিলেন এবং তাঁর আশে পাশে কতিপয় কুরাইশ ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। এমন সময় ওকবাহ ইবনে আবু মুআইদ উটনীর নাড়ীভুড়ি নিয়ে আসল এবং তা রাসুলুল্লাহ এর পিঠের উপর নিক্ষেপ করল। যাতে তিনি তাঁর মাথা তুলতে পারলেন না। তারপর ফাতিমা এসে তাঁর পিঠের উপর হতে সেগুলি সরাইয়া দিলেন এবং যে ব্যক্তি এই কাজ করেছে তাকে অভিসম্পাত করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ বললেন, হে মাবুদ!আপনার উপরেই কুরাইশদের আবু জেহেল ইবনে হিশাম, ওতবাহ ইবনে রাবীয়া, শায়বাহ ইবনে রাবীয়া, ওকবা ইবনে আবু মুআইত, উমাইয়া ইবনে খালাফ এদের বিচারের ভার সমর্পিত। তবে বর্ণনাকারী শো’বা শেষের দুটি নামের কোনটি রাসুলুল্লাহ বলেন তাতে সন্দেহ প্রকাশ করেন।……………. মুসলিম, বই নং-১৯ হাদিস নং- ৪৪২২
দেখা যাচ্ছে কুরাইশরা স্রেফ অপমান করার জন্যই মোহাম্মদের ওপর উটের নাড়ীভুড়ি ফেলেছিল। তাকে খুন করার প্রচেষ্টা তো দুরের কথা শারিরীকভাবে কষ্ট দেয়ার কথাও তারা চিন্তা করত না।কিন্তু কেন কুরাইশরা মোহাম্মদকে অপমান করত? এর জন্য তারা নাকি মোহাম্মদ দায়ি? কুরাইশরা কাবা’র মধ্যে তাদের দেব দেবীদেরকে পূজা করত, কথিত আছে সেখানে ৩৬০ বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি ছিল। সেটাই ছিল তাদের পূর্ব পুরুষদের ধর্ম। কথা বার্তা নাই হঠাৎ করে মোহাম্মদ এসে দাবী করলেন- আল্লাহ নাকি তাঁর কাছে নিয়মিত বানী পাঠায় ও নতুন এক ধর্ম ইসলাম প্রচার করার কথা বলেছে। ভাল কথা, যুক্তির খাতিরে ধরে নেয়া গেল মোহাম্মদের ধর্ম হলো সত্য ধর্ম, কিন্তু তাই বলে এটা কেমন কথা সেই ধর্ম তাকে কুরাইশদের উপসণালয়ের মধ্যে গিয়ে করতে হবে? শুধু তাই নয়, সেই কাবা ঘরে ঢুকে মোহাম্মদ কুরাইশদের দেব দেবীদের সম্পর্কে নানা রকম কটুক্তি সহ অপমানও করতেন। কুরাইশরা ঠিক এ জিনিসটাই পছন্দ করত না। তাদের বক্তব্য ছিল- মোহাম্মদ তার আবিষ্কৃত ধর্ম প্রচার করুক কোন সমস্যা নেই কিন্তু সেটা তিনি নিজস্ব পরিমন্ডলে গিয়ে করুক গিয়ে। বর্তমানে কোন মসজিদে গিয়ে যদি কেউ খৃষ্টান বা বৌদ্ধ বা হিন্দু ধর্ম প্রচার করে, কোন মুসলমান সেটা সহ্য করবে ? সহ্য করা তো দুরের কথা হয়ত বা সাথে সাথে সব মুসলমানরা তার কল্লা কেটে ফেলবে। অথচ মোহাম্মদ কি করতেন? ঠিক এ কাজটাই করতেন তার মক্কার প্রাথমিক জীবনে। তিনি কুরাইশদের উপাসনালয় কাবা ঘরে ঢুকে তার ইসলাম প্রচার করতেন ও কুরাইশদের ধর্মকে অপমান করতেন। তাহলে কুরাইশরা সেটা সহ্য করবে কেন ? উপরোক্ত হাদিসেই দেখা যাচ্ছে মোহাম্মদ কোথায় বসে সিজদা দিচ্ছেন। তার প্রচারিত ধর্ম ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হয়, আর আল্লাহই যদি তা প্রেরন করে থাকে, তাহলে সেটা কেন তাকে অন্যদের উপসনালয় জোর করে দখল করে করতে হবে? সর্বশক্তিমান আল্লাহ ইচ্ছা করলে মোহাম্মদ সেটা তো তার বাড়ীতে বসে বা তার নিজস্ব পরিমন্ডলে বসে অথবা অন্যদের উপসনালয় দখল না করেই করতে পারতেন। আবার সেই আল্লাহই কিন্তু মোহাম্মদের মুখ দিয়ে বলছে-
তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে এবং আমার ধর্ম আমার জন্যে। কোরান, কাফিরুন- ১০৯:০৬
আল্লাহ যদি উপরোক্ত কথা বলেই থাকে তাহলে মোহাম্মদ কেন কুরাইশদের উপসনালয়ে ঢুকে সিজদা করেন, কেন তাদের দেব দেবীকে কটুক্তি করেন, অপমান করেন? এটা কি মোহাম্মদের নিজের প্রচারিত ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ নয় ? মোহাম্মদ কেন তার ধর্ম পালন করার জন্য নিজের মত করে উপসনালয় বানিয়ে নেন না ? তিনি কুরাইশদের ধর্মকে কটুক্তি করবেন অথচ কুরাইশরা তাঁকে কিছু বলতে পারবে না। এটা কি মামা বাড়ীর আবদার নয়? অথচ শত শত বছর ধরে প্রচার করা হয়েছে কুরাইশরা মোহাম্মদকে অত্যাচার নির্যাতন করেছে যেখানে মোহাম্মদ ছিলেন একেবারেই নিষ্কলুষ। কিন্তু হাদিস থেকে প্রমানিত যে মোহাম্মদই বরং আগ বাড়িয়ে কুরাইশদেরকে উত্তেজিত করেছে তাকে অপমান ও গঞ্জনা করতে। কিন্তু কস্মিনকালেও কুরাইশরা মোহাম্মদকে প্রানে মেরে ফেলতে চায় নি। উল্টো দেখা যায় কুরাইশরা ছিল উদারপন্থি ও পরমত সহিষ্ণু। যেমন-
When the apostle openly displayed Islam as Allah ordered him, his people did not withdraw or turn against him, so far as I have heard, until he spoke disparagingly of their gods. When he did that, they took great offence and resolved unanimously to treat him as an enemy. (Ibn Ishaq/Hisham 167)
The Meccans] said they had never known anything like the trouble they had endured from this fellow. He had declared their mode of life foolish, insulted their forefathers, reviled their religion, divided the community and cursed their gods (Ibn Ishaq/Hisham 183).
একারনেই মক্কাতে কুরাইশদের পাশাপাশি কিছু খৃষ্টান ও ইহুদিও বাস করত ও তারা কোন রকম সাম্প্রদায়ীক সংঘাত ছাড়াই শান্তিপূর্নভাবে একসাথে বাস করত। অথচ মোহাম্মদ হঠাৎ করে এসে তাঁর ইসলাম প্রচার করে সমাজে একটা বিশৃংখলা সৃষ্টির পায়তারাই শুধু করলেন তাই নয়, কুরাইশদের ধর্মীয় উপসনালয়ে যখন তখন ঢুকে সেটাকে নিজের মত করে ব্যবহার করা শুরু করলেন অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মত কায়দায় তার সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী চাচা আবু তালিবের ছত্রছায়ায়। এভাবে মোহাম্মদের মক্কা জীবনের দশ বছর অতিক্রান্ত হলো, তখনও তার কিবলা ছিল প্যলেস্টাইনের মসজিদুল আকসা, এর পর তিনি মদিনাতে হিজরত করলেন, সেখানে প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত হলো- তখনও কিবলা ছিল মসজিদুল আকসা, হঠাৎ মোহাম্মদ ঘোষণা করলেন অত:পর কাবা ঘরই হলো মুসলিমদের কিবলা কারন এটাই নাকি আল্লাহর প্রথম ঘর যা আদম তৈরী করেছিল। অথচ ইতোপূর্বেকার কোন কিতাব যেমন তৌরাত, গসপেল কোথাও একথা উল্লেখ নেই। এ ছাড়াও এ দাবী যদি সত্য হয় তাহলে মোহাম্মদের আগেকার নবীদের কিবলা কেন মসজিদুল আকসা ছিল? কেন আল্লাহর প্রথম ঘর কাবা তাদের কাছে কিবলা ছিল না যখন মোহাম্মদ দাবী করছেন তিনি ধারাবাহিকতার সূত্রে ইব্রাহিম, মূসা, ইসা ইত্যাদি নবীর পরে সর্বশেষ নবী ? কাবাকে কিবলা বানানোর পিছনে গুরুত্বপূর্ন কারন ছিল।
প্রথমত: মোহাম্মদ বুঝতে পেরেছিলেন খৃষ্টান ও ইহুদিদেরকে মিষ্টি কথায় তার ইসলামে টানা যাবে না, এমতাবস্থায় খৃষ্টান ও ইহুদি অধ্যুষিত হাজার মাইলেরও বেশী দুরত্বের মসজিদুল আকসাতে মুসলমানদের যাওয়াটা খুব নিরাপদ নয়, সীমাহীন কষ্টসাপেক্ষও বটে।
দ্বিতীয়ত: ইসলাম যেহেতু মোহাম্মদের প্রবর্তিত ধর্ম আর মদিনাতে যাওয়ার পর তার অনুসারীর সংখ্যা বেশ বৃদ্ধিও পেয়েছে তাহলে নিজেদের মত করে কিবলা বানানোতে কোন অসুবিধা নেই।
তৃতীয়ত: মোহাম্মদের সবচেয়ে প্রভাবশালী অনুসারী আবু বকর ও ওমর দুজনেই চাইত কাবা ঘর যেন তাদের কিবলা হয়। মোহাম্মদ মনে মনে কাবাকে কিবলা বানানোর স্বপ্ন দেখলেও একার সিদ্ধান্তে তা করতে সাহস পাচ্ছিলেন না মনে হয়, অত:পর প্রভাবশালী দুজন অনুসারীর ইচ্ছার কথা জানতে পেরে কাবাকে কিবলা বানাতে তার আর দেরী হয় নি।
এ বিষয়ে এ হাদিসটি দেখা যেতে পারে-
আল বারা বর্নিত- নবী বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে ষোল বা সতের মাস নামাজ পড়তেন কিন্তু তিনি ইচ্ছা করতেন মক্কার কাবা ঘর হবে কিবলা। তাই আল্লাহ ০২: ১৪৪ আয়াত নাজিল করলেন এবং তিনি কতিপয় সাহাবী সহ আসরের নামাজ পড়লেন কাবার দিকে মুখ করে। সহি বুখারি, বই – ৬ ০, হাদিস-১৩
সুতরাং কাবাকে কিবলা বানানোতে কোন সমস্যা তো দেখা যায় না।
বিষয়টি এপর্যন্ত হলেও কথা ছিল। ইসলামে মূর্তিপূজা তো দুরের কথা মূর্তি গড়া বা প্রানীর ছবি আঁকাকেও অমার্জনীয় অপরাধ ও কুফরী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অথচ মোহাম্মদ কিন্তু সেই প্রথম থেকেই মূর্তি ভর্তি কাবা ঘরে বসে মক্কার দশ বছর ধরে তার আল্লাকে ডেকেছেন, তার অনুসারীরাও তাকে অনুসরণ করেছে, মদিনায় গিয়ে কাবা ঘরকে কিবলা বানানোর পরেও মোহাম্মদ প্রায় সাড়ে ৮ বছরের বেশী কাল মূর্তি ভর্তি কাবাকে তার কিবলা বানিয়ে সেদিকে মুখ করে নামাজ পড়েছেন মোহাম্মদ সহ সকল মুসলিম, তাতে তাদের কোন অসুবিধা হয় নি। অত:পর তিনি যখন মক্কা দখল করেন তখন উক্ত কাবা ঘর থেকে সকল মূর্তি সরিয়ে ফেলেন, কিন্তু সেই বিখ্যাত কাল পাথরটা সরান নি, বরং তার সামনে গিয়ে মাথা নত করে , চুমু খেয়ে তার প্রতি হিন্দুদের মত পূজা করেছেন, যা দুনিয়ার সকল মুসলিমরা এখনও করে থাকে। এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হলে বলা হয় এটা নাকি পূজা নয়। আজব কথা! যে কায়দায় কাল পাথরটাকে সম্মান দেখানো হয় তাকে যদি পূজা বলা না হয় তো কাকে পূজা বলে ? সেই সময়ে আরবরা মোহাম্মদের ইসলাম প্রচারকে যে বাধা দিত না, তা দেখা যায় হাদিসেও-
ইসহাক ইবনে ইব্রাহিম হানজালি, মুহাম্মদ ইবনে রাফে এবং আবদ ইবনে হুমাইদ বর্ণনা করেন, উসামাহ ইবনে যায়েদ বলেন যে রাসুলুল্লাহ একটি গাধায় সওয়ার হলেন যার উপর বসার গদির নীচে একটি ফদকের তৈরী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পিছনে উসমাহ কে বসালেন। বনূ হারেছ ইবনে কজরায় গোত্রের আবাস এলাকায় অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাদাহকে তিনি দেখতে যাচ্ছিলেন। তা বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা ছিল। এমন একটি মজলিসের নিকট দিয়ে যেতেছিলেন, যে মজলিসে মুসলমান, মুশরিক, মূর্তিপূজারী ও ইহুদি সব সস্প্রদায়ের লোক ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও ঐ মজলিসে ছিল এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাও ছিলেন। কাফেলার সওয়ারীদের পায়ের ধুলায় মজলিসকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। এতে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই চাদর দিয়ে তার নাক ঢাকিয়া বলল, আপনারা আমাদের মাঝে ধূলা উড়াইবেন না। রাসুলুল্লাহ তাদেরকে সালাম করে যাত্রা বিরতি করলেন এবং বাহন হতে অবতরণ করে তাদেরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। আর তাদের সামনে কুরআন পাঠ করলেন। তখন আব্দল্লাহ ইবনে উবাই বলে উঠিল, আপনি যা বলতেছেন তা সত্য হলেও আপনি আমাদেরকে কষ্ট না দিয়ে উত্তম ব্যবস্থা হল, আপনি আপনার বাসস্থানে চলে যান। সেখানে আমাদের মধ্যকার যে ব্যাক্তি আপনার নিকট যাবে তাকে আপনি উপদেশ দান করবেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের এই মজলিসে আপনি যেমন ইচ্ছা দাওয়াত দিন আমরা তা পছন্দ করি। আমাদের তা পছন্দনীয়। তখন মুসলমান, মুশরিক ও ইহুদির মধ্যে পরস্পর ঝগড়া ও কলহের সৃষ্টি হলো। এমন কি একটি তুমুল সংঘর্ষ সৃষ্টির উপক্রম হল।………… সহি মুসলিম, বই-১৯, হাদিস-৪৪৩১
মুহাম্মদ ইবনে রাফে ইবনে শিহাব সূত্রে এই সনদে অনুরূপ হাদিস রেওয়াত করেছেন, তবে এতে বাড়াইয়া বলেছেন যে, ইহা আব্দুল্লাহর ইসলাম গ্রহনের আগেকার ঘটনা। সহি মুসলিম, বই-১৯,হাদিস-৪৪৩২
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ যখন ইসলাম গ্রহন করে নি তখন কি সুন্দর ভাবে মোহাম্মদকে বলছে যে মোহাম্মদের কাছে যে স্বাধিনভাবে যাবে তার কাছে মোহাম্মদ ইসলাম প্রচার করতে পারে। এছাড়া সে অত্যন্ত ভদ্র ভাবে বলছে ধুলা দিয়ে যেন তাদেরকে কষ্ট না দেয়া হয় কারন তারা একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে মজলিসে কথাবার্তা বলছে।কিন্তু দেখা গেল মোহাম্মদের সাগরেদ মুসলমানটি কতটা অন্যের প্রতি উদাসিন ও একগুয়ে, সে বলছে- ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের এই মজলিসে যেমন ইচ্ছা দাওয়াত দিন আমরা তা পছন্দ করি।।, সেখানে মুসলমান ছাড়াও যে অন্য লোকজন রয়েছে সে ব্যপারে তার কোন সম্মানবোধ নেই, তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে সম্মান দেখানোর কোন তাগিদও তার মধ্যে দেখা যায় না।ইসলাম মানুষকে কতটা বিবেকবোধ রহিত করে তোলে ও অন্যের অধিকার ও স্বাধিনতার প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে এটা তার একটা নমুনা। ঠিক আজকের দিনেও অধিকাংশ মুসলমান ঠিক উক্ত রকম মনোভাব পোষন করে থাকে ও তারা অন্য ধর্মের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন করে না। যাহোক, মক্কাতে প্রভাবশালী কুরাইশগন মোহাম্মদের উদ্ভ্রান্ত কাজ কারবার দেখে তাকে তারা একটা উন্মাদ, পাগল বা যাদুকর বলে উপহাস করত, যেমন-
তারা বললঃ হে ঐ ব্যক্তি, যার প্রতি কোরআন নাযিল হয়েছে, আপনি তো একজন উম্মাদ। কোরান, ১৫:০৬
অতঃপর তারা তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে এবং বলে, সে তো উম্মাদ-শিখানো কথা বলে। কোরান, ৪৪:১৪
একটা বিষয় মোহাম্মদ সম্পর্কে খুব বেশী প্রচলিত তা হলো তিনি হলেন- আল আমিন অর্থ সত্যবাদী। কিন্তু খোদ কোরানই তা অস্বীকার করে যেমন-
আর যদি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে বল, আমার জন্য আমার কর্ম, আর তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদের দায়-দায়িত্ব নেই আমার কর্মের উপর এবং আমারও দায়-দায়িত্ব নেই তোমরা যা কর সেজন্য। কোরান, ১০: ৪১
তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণকেও তো মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। আল্লাহর প্রতিই যাবতীয় বিষয় প্রত্যাবর্তিত হয়। কোরান, ৩৫:৪
তার মানে স্পষ্টত:ই কুরাইশরা মোহাম্মদকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করত। তারা বিশ্বাস করত মোহাম্মদ যে দাবী করছে আল্লাহ তার কাছে ফিরিস্তা পাঠিয়ে দিয়ে বার্তা দিয়ে যাচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। যেকারনেই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলত যা কোরানেও দেখা যাচ্ছে।শুধু তাই নয় তারা তাকে যাদুকরও বলত। যেমন-
যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা বলে, তোমাদের বাপ-দাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বাধা দিতে চায়। তারা আরও বলে, এটা মনগড়া মিথ্যা বৈ নয়। আর কাফেরদের কাছে যখন সত্য আগমন করে, তখন তারা বলে, এতো এক সুস্পষ্ট যাদু। কোরান, ৩৪:৪৩
যুক্তির খাতিরে অনেকে বলতে পারে আল্লাহ কোরানে এটাকে উপমা হিসাবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে বিষয়টি আসলে তা নয়। তার কারন মোহাম্মদকে কুরাইশরা সত্যবাদী হিসাবে জানলে তিনি আল্লাহর বানীর নামে যা বলতেন সবাই তাকে বিনা বাক্য ব্যয়ে বিশ্বাস করত। এমনকি তাকে মিথ্যাবাদী বলা হতে পারে ভেবে তিনি প্রথম সূরা আলাক নাজিল হওয়ার পর প্রায় তিন বছর যাবত তা নিজের পরিবারের কাছে ছাড়া অন্যের কাছে বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছিলেন। এর মধ্যে আর কোন আয়াত বা সূরা নাজিলও হয় নি। অনেক ভেবে চিন্তা করে অত:পর তিনি প্রকাশ্যে দাবি করলেন যে তিনি আল্লাহর রসুল। বলাবাহুল্য, সাথে সাথেই মক্কাবাসীরা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যাস্ত করল। তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা শুরু হলো। সেটাই স্বাভাবিক। কোন গ্রামে কোন একজন লোক এভাবে হঠাৎ যদি কিছু দাবি করে তাহলে সেটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা হলো যখন মোহাম্মদ প্রকাশ্যে কুরাইশদের দেব দেবী সম্পর্কে অপমানকর বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। তখন তারা তাকেও নানা ভাবে অপমান করত। এর পরেও কিন্তু মোহাম্মদকে কুরাইশরা তাকে শারিরীক নির্যাতন বা খুন খারাবির কথা চিন্তা করে নি। শুধুমাত্র মোহাম্মদ যখন গোপনে গোপনে মদিনাবাসীদের সাথে আঁতাত করে মক্কা দখলের পায়তারা করছিলেন তখন মক্কাবাসীরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। তবে এ ঘটনা বানোয়াট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী কারন মদিনাবাসীরা ছিল নিরীহ ও সংখ্যায় অনেক কম, তাদের অত সাহস ছিল না মোহাম্মদের পাল্লায় পড়ে শক্তিশালী মক্কাবাসীদের বিরুদ্ধে দাড়ানোর, সেটার দরকারও ছিল না। তাই মনে হয় এ ঘটনাটা বানান হয় শুধুমাত্র মোহাম্মদের চরিত্রকে অলৌকিক দেখানোর জন্য, কারন তিনি নাকি আল্লাহর সহায়তায় অলৌকিকভাবে সকলের চোখকে ধুলো দিয়ে রাতের বেলাতে পালিয়ে মদিনায় চলে গেছিলেন। আসল ব্যপার হলো – ততদিনে তার প্রথম বিবি খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা গেছে, তার ওপর ছাতা ধরার কেউ ছিল না। মক্কায় খুব অল্প মানুষ তার ইসলাম গ্রহন করেছে। ইতোমধ্যে শয়তানের আয়াতের মাধ্যমে মক্কাবাসীদের সাথে একটা আপোষ রফা করার পরেও তা অস্বীকার করে মক্কাবাসীদেরকে চুড়ান্ত রকম ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। ফলে তার পক্ষে তখন মক্কাতে থাকা নিতান্ত অসম্ভব ছিল। তাই হয় তার ইসলাম প্রচার বন্দ করতে হতো না হলে তাকে অন্যত্র গিয়ে তা প্রচারের চেষ্টা ছাড়া গতি ছিল না। অনেক চিন্তা ভাবনা করেই তিনি অবশেষে মদিনাতে তার ভাগ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এ ধরনের বিষয়কে অতি রঞ্জিত করার জন্য ও মানুষের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টির জন্যই পরবর্তীতৈ কোন এক সময় তাকে হত্যা প্রচেষ্টা ও অলৌকিক ভাবে মক্কা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী সাজানো হয় বলেই মনে হয়।
ইসলামি বিশ্বে মোহাম্মদের নিকটাত্মীয় যারা তার সাহাবী ছিল তাদের সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণা প্রচার ও পোষণ করা হয়।মানুষ সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই বিশ্বাস করে ও তাদের আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করে। এখন তাদের মধ্যে দু একজনের সম্পর্কে জানা যাক।
মুহাম্মদ ইবনে রাফে বর্ণনা করেছেন… আয়শা হতে বর্ণিত ফাতিমা রাসুলুল্লাহ-এর সম্পদ হতে তার প্রাপ্য মীরাছ এর দাবী করে আবু বকর এর নিকট পাঠালেন, যা আল্লাহ তালা রাসুলুল্লাহ কে মদীনা ও ফিদাক এর ফাই এবং খায়বারের অবশিষ্ট এক-পঞ্চমাংশ হতে প্রদান করেছিলেন।তখন আবু বকর বললেন, রাসুলুল্লাহ বলে গিয়েছেন, আমাদের নবীদের পরিত্যক্ত সম্পদে কোন মীরাছ বন্টন করা হবে না। কেননা আমাদের রাখিয়া যাওয়া সকল কিছু ছদকা হয়ে যাবে।মোহাম্মদ এর পরিবারবর্গ তা হতে ভরণ পোষণ গ্রহণ করবে। আমি আল্লাহর শপথ করে বলতেছি, মুহাম্মদ এর আমলে ছদকাহর যে ব্যবস্থা জারী ছিল, তা আমি পরিবর্তন করব না। এই ব্যপারে আমি সেই কাজই করব যা রাসুলুল্লাহ করে গিয়েছেন। অতএব আবু বকর ফাতিমা কে তা হতে মীরাছ প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। যার ফলে ফাতেমা রাগান্বিত হয়ে আবু বকর এর সাথে সংস্রব ত্যাগ করলেন। তিনি মৃত্যূ পর্যন্ত তার সাথে আর কোন কথাই বলেন নাই। রাসুলুল্লাহ এর মৃত্যুর পর ফাতিমা ছয়মাস কাল জীবিত ছিলেন। তারপর তিনি প্রাণত্যাগ করলেন। তার স্বামী আলী ইবনে তালিব তাকে রাত্রেই দাফন করলেন এবং ফাতিমা এর মৃত্যূর সংবাদ পর্যন্ত আবু বকর কে জানালেন না। আলীই তার জানাজার নামাজ পড়লেন। ফাতিমা এর জীবিত কাল পর্যন্ত আলী এর প্রতি মানুষের একটি বিশেষ শ্রদ্ধা এবং মর্যাদাবোধ ছিল; কিন্তু ফাতিমা এর মৃত্যুর পর লোকদের মধ্যে যেন কেমন অন্য ভাব পরিলক্ষিত হতে লাগল। আলী আবু বকর এর সাথে সম্প্রীতি স্থাপন কল্পে তার নিকট বায়াত গ্রহণের ইচ্ছা করলেন। কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তিনি বায়াত গ্রহণ করেন নাই।তিনি আবু বকরের নিকট লোক মারফত খবর পাঠালেন যে, আপনি আমার সাথে একাকী সাক্ষাত করুন।অন্য কাউকেও সাথে আনবেন না। কেননা তিনি ওমরের আগমনকে ভাল মনে করেন নি। ওমর আবু বকরকে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি কিছুতেই তার নিকট একাকী যাবেন না।কিন্তু আবু বকর বললেন, আমি কোন আশংকা করছি না যে তিনি কোন ঘটনা ঘটাবেন। আল্লাহর কসম! আমি একাকীই যাব। শেষ পর্যন্ত তিনি তার নিকট গমন করলেন। আলী কালেমায় তাশাহহুদ এবং তাওহীন ও রেসালাতের সাক্ষ্য পাঠ করলেন। তার পর বললেন, হে আবু বকর! আপনার মর্যাদা এবং আপনার প্রতি আল্লাহর প্রদত্ত সম্মান ও নিয়ামতের কথা আমরা বিশেষভাবে অবগত।আল্লাহ তালা আপনাকে যে বস্তু দান করেছেন তাতে আমরা মোটেই ঈর্ষাতুর নই, কিন্তু আপনি আমাদেরকে উপেক্ষা করে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। রাসুলুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার কারনে আমরা মনে করতাম যে, আমাদেরও কিছু অধিকার আছে। ……………………..বরং আমরা মনে করতাম যে , খেলাফতের মধ্যে আমাদেরও কিছু অংশ রয়েছে, কিন্তু আবু বকর আমাদেরকে এড়াইয়া এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তজ্জন্য আমরা মনোক্ষুন্ন হয়েছিলাম।…..অত:পর আলী আবু বকরের নিকট বায়াত গ্রহণ করলেন…. মুসলমানগন আবার আলীর নিকট যাতায়াত শুরু করল। সহি মুসলিম, বই-০১৯, হাদিস-৪৩৫২
উপরের হাদিস থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে ফাতিমা আবু বকরের উপর এতটাই রেগে গেছিল যে মৃত্যূ পর্যন্ত সে আর তার সাথে দেখা করে নি। একই সাথে আলীও আবু বকরের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি। প্রশ্ন হলো- ফাতিমা ও আলী ওরা কি জানত না যে মোহাম্মদ মারা যাওয়ার আগে কি বিধান দিয়ে গেছেন? তারা কি জানত না যে, মোহাম্মদ মরার আগে তার সব সহায় সম্পত্তি সদকাহ হয়ে যাবে- এ বিধান করে গেছেন? তা যদি জেনে থাকে তাহলে তারা আবু বকরের কাছে সদকাহ হয়ে যাওয়া সম্পত্তি ফেরত চায় কিভাবে? এর পর আবু বকর যখন তাদেরকে জানাল যে মোহাম্মদের করে যাওয়া বিধান তার পক্ষে লংঘন করা সম্ভব নয়, তখন তাদের আবু বকরের ওপর রাগান্বিত হওয়ার অর্থই হলো তারা নবীর বিধানকে অস্বীকার করছে। এছাড়া উক্ত হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে, নবীর সাথে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার( আলী হলো মোহাম্মদের মেয়ে ফাতিমার স্বামী, আবার মোহাম্মদের আপন চাচাত ভাইও) সম্পর্কের কারনে আলী আশা করেছিল নবীর মৃত্যূর পর সে খলিফা হবে, কিন্তু তা হয় নি, সে কারনে তার রাগ আবু বকরের ওপরও। ইতোমধ্যে আবু বকর তার ক্ষমতা আস্তে আস্তে কুক্ষিতগত করে ফেলেছে, লোকজন তাই আলীর সাথে যোগাযোগ বন্দ করে দিয়েছে। আলী ঘটনাসমূহ পর্যবেক্ষন করে প্রমাদ গুনল আর তাই নিজ উদ্যোগে আবু বকরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে এগিয়ে আসল। কারন তার মনে হলো আবু বকর তো বৃদ্ধ মানুষ যে কোন সময় মারা যেতে পারে, আলী তখনও প্রায় তরুন সুতরাং ক্ষমতার বলয়ের মানুষের কাছ থেকে দুরে থাকা বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে না। উক্ত হাদিসে এটাও দেখা যাচ্ছে যে দীর্ঘদিন যাবত আলী , আবু বকরের কাছে বায়াতও নেয় নি অর্থাৎ আনুগত্য স্বীকার করে নি যা প্রকারান্তরে একটা বিদ্রোহের সামিল। তো এই হলো ফাতিমা ও আলীর চরিত্র যারা নবীর দান করে যাওয়া সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য লালায়িত ছিল। এছাড়া এ ঘটনা থেকে এটাও বোঝা যায় যে মোহা্ম্মদের মৃত্যুর পর পরই আমাদের সেই মহান সাহাবি বৃন্দ যাদের নামে গোটা মুসলিম সমাজ অজ্ঞান হয়ে যায়, তারা ইসলাম নয়, বরং ক্ষমতার লোভে নিজেদের মধ্যে রেষারেষি শুরু করে দিয়েছিল। আরও দেখা যাচ্ছে মোহাম্মদের প্রধান চার সাহাবীদের মধ্যে বনি বনাও ভাল ছিল না মোহাম্মদের মৃত্যুর পর, যেমন বলা হচ্ছে- আলীকে ওমর বিশ্বাস করছে না, সে আবু বকরকে একাকী আলীর সাথে সাক্ষাত করতে নিষেধ করছে। ওমরের বিশ্বাস আবু বকর একাকী গেলে আলী তাকে খুনও করে ফেলতে পারে। ওদিকে আলীও ওমরকে বিশ্বাস করতে পারে নি, তাই আবু বকরকে একাকী আসতে জোর দিয়েছে। আলী যে ক্ষমতার দাবীদার সেটাও কিন্তু সে প্রকাশ করতে ভোলেনি, তাই বলছে-কিন্তু আপনি আমাদেরকে উপেক্ষা করে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। রাসুলুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার কারনে আমরা মনে করতাম যে, আমাদেরও কিছু অধিকার আছে। অধিকাংশ মানুষ এসব ঘটনা জানে না, জানতে চায় না, তাদেরকে কেউ জানায়ও না। এমনকি আজকের যুগেও এ ধরনের মানুষ বিরল যারা তাদের পূর্ব পুরুষদের দানকৃত মালামাল আবার ফেরত চাইতে পারে। আর সারা মুসলিম জাহান তাদের চরিত্র নিয়ে গর্ব করে। শুধু তাই নয় এর পরের হাদিস দেখা যাক,
ইবনে নুমাইর, যুহাইর ইবনে হরব এবং হাসান হুলওয়ানী বর্ণিত, আয়শা বলেন যে রাসুলের কন্যা ফাতিমা রাসুলের ওফাতের পর তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির মীরাছের অংশ দাবী করলেন। তখন আবু বকর বললেন, রাসুল এরশাদ করেছেন আমাদের নবীদের সম্পত্তিতে কেউ ওয়ারিশ হবে না। আমাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি হবে ছদকাহ স্বরূপ। আয়শা বলে রাসুল এর ইন্তেকালের পর ফাতিমা ছয়মাস জীবিত ছিলেন। তিনি আবু বকরের নিকট তার প্রাপ্য অংশ দাবী করেছিলেন যা রাসুল খায়বার, ফিদাক ও মদীনার দান হতে পরিত্যাগ করে গিয়েছেন। আবু বকর তাকে তা প্রদান করতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন আমি এমন কাজ করব না যা রসুল করতেন। আমি ভয় করছি যে , তার কোন কাজ পরিত্যাগ করলে পথভ্রুষ্ট হয়ে যাব। তবে মদীনার দানের মাল ওমর তার খেলাফত আমলে আলী ও আব্বাসকে প্রদান করেছিলেন কিন্তু আলী একাকীই তা দখল করে নিয়েছিলেন। আর খায়বার ও ফিদাকের সম্পদ ওমর নিজের দায়িত্বে রেখে দিলেন এবং বললেন তা ছিল রাসুলুল্লাহর প্রয়োজন পূরণের জন্য এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন কাজে ব্যয় করার জন্য। সহি মুসলিম, বই-০১৯, হাদিস-৪৩৫৪
উক্ত হাদিস মোতাবেক দেখা যাচ্ছে, ক্রমশ: আলী নিজের প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে এবং আবু বকরের মৃত্যুর পর ওমরের কাছ থেকে ছদকাহ হয়ে যাওয়া সম্পত্তি ফেরত নিয়ে নেয়। আরও দেখা যায়, আব্বাসকে ফেরত দেয়া সম্পদ জোর করে আলী নিজের দখলে নিয়ে নেয়। তো এ হলো মোহাম্মদের সবচেয়ে প্রিয় পাত্র, তার মেয়ের স্বামী ও আপন চাচাত ভাই আলী( আলী হলো মোহাম্মদের আপন চাচা আবু তালিবের পূত্র)এর চরিত্র।
সহি মুসলিম, বই-০১৯, হাদিস-৪৩৫২ হাদিস মোতাবেক দেখা যাচ্ছে মোহাম্মদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তার পরিবার বর্গের জন্য ভরণ পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বাদ দিয়ে বাকীটা সদকাতে পরিনত হবে। অথচ এর পরেই বলা হচ্ছে-
আয়শা হতে বর্ণিত, আল্লাহর নবী যখন মৃত্যূ বরণ করেন তখন তার লৌহ বর্মটি এক ইহুদীর কাছে কিছু বার্লির বিনিময়ে বন্দক ছিল। সহি বুখারী, বই-৫২, হাদিস-১৬৫
আমর বিন আল হারিথ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ মারা যাওয়ার সময় তার কিছু অস্ত্রপাতি, একটা সাদা খচ্চর ও খায়বারে এক খন্ড জমি ছাড়া আর কিছু রেখে যান নি। সহি বুখারি, বই-৫২, হাদিস-১৬০
যে ব্যাক্তি প্রতি নিয়ত যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত গনিমতের মাল প্রাপ্ত হচ্ছেন যার সম্পত্তি আছে মদিনা, খায়বার ও ফিদাকে যা তিনি মৃত্যূর আগে ছদকাহ করে দিয়ে যান, তিনি মারা যাওয়ার সময় তার ঘরে কিছুই নেই সামান্য বার্লি বা কিছু অস্ত্রপাতি ছাড়া।অথচ তখনও তার হেরেম খানায় কমপক্ষে ৯ টি স্ত্রী জীবিত। তো যে ব্যক্তি তার বর্মটিকে বন্দক দিয়ে সামান্য কিছু বার্লি যোগাড় করে খানাপিনা করেন সেই ব্যক্তি ৯ জন স্ত্রীর ভরণ পোষণ কিভাবে করতেন? এটা কি বিশ্বাস্য? নাকি মোহাম্মদের চরিত্র মাহাত্মকে উচু করে দেখানোর একটা উদগ্র প্রচেষ্টা এটা ? বানিজ্য কাফেলা বা বিভিন্ন গোষ্ঠির বসতিতে আতর্কিতে আক্রমন করে যেসব সম্পদ পাওয়া যেত তাকে বলে গণিমতের মাল। এ গণিমতের মালের এক পঞ্চমাংশ ছিল মোহাম্মদ ও আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।
আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্নীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। কোরান,৮: ৪১
এই না হলে আল্লাহর রসুল! মোহাম্মদের আগ পর্যন্ত কোন নবীকে এভাবে আয়াত নাজিল করে লুট পাটের মালামালের অংশ দাবী করতে দেখা যায় নি। অবশ্য তাদের অত স্ত্রীও ছিল না একমাত্র নবী সোলায়মান ছাড়া, তার নাকি কয়েক শত নারী ছিল হেরেমে কিন্তু সে তো নাকি রাজা ছিল, সুতরাং তার আয়াত নাজিল করে লুটপাটের মালামালের অংশ দাবী করার দরকারও ছিল না। ঈশা নবী তো বিয়েই করে নি তাই তার সংসার প্রতিপালনেরও কোন দায় ছিল না। তার তো অবস্থা ছিল যেখানে রাত সেখানেই কাত। আমাদের মহানবীর কপাল খারাপ, তার এক সাথে নয়টা বউ বেঁচেছিল, অথচ তার আয়ের কোন উৎস ছিল না। এত বড় একটা সংসার চালাতে তার অনেক সম্পদ দরকার। সরাসরি যুদ্ধ লব্ধ মালামাল থেকে কোন কিছু নিলে সমালোচনা হতে পারে ভেবে মোহাম্মদ সেটাকে আল্লাহ থেকে আয়াত নাজিল করে বিষয়টাকে সহজ করে নিলেন। তো প্রশ্ন হলো মোহাম্মদের সম্পদ লাগে তার বিশাল পরিবার চালাতে, আল্লাহর সম্পদ লাগে কোন কাজে?মোহাম্মদের আল্লাহ কি এতটাই অসহায় আর নি:স্ব যে তাকে যুদ্ধ লব্ধ মালামালের ভাগ নিতে হয় ? তো আল্লাহ সে সম্পদ দিয়ে কি করবে? খুব সহজেই বোঝা যায়, আল্লাহর নাম করে যা পাওয়া যাবে তাও মোহাম্মদের নিজের দরকার তার অতি বিশাল পরিবার প্রতিপালনে। দ্বীনের নবীর প্রতি আল্লাহর দয়ার শেষ নাই।খালি দয়া নেই বাংলাদেশের গরিব মুসলমানদের জন্য। অথচ আবার একটু পরেই হাদিসের মাধ্যমে মোহাম্মদের দীন হীনতার কথা প্রচার করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে- যখন তিনি মারা যান তখন আয়শার ঘরে সামান্য কিছু বার্লি ছাড়া আর কিছু ছিল না, সেটাও নাকি জোগাড় করা হয়েছিল কোন এক ইহুদির কাছে নিজের বর্ম বন্দক দিয়ে। অবশ্য বাকী সব স্ত্রীদের ঘরে কি ছিল সেটা কোথাও বলা হয় নি।