মোহাম্মদ ও ইসলাম , পর্ব-১৩

ইসলাম ও কোরান কে বুঝতে হলে সেই সময়কার আরবী, বিশেষ করে মক্কা মদিনার আর্থ সামাজিক অবস্থা, কোন কোন ক্ষেত্রে আয়াত নাজিল হতো এবং কোরানের মধ্যে আয়াতের বিধান রহিত করন( Abrogation) বিষয়ে সম্যক ধারনা থাকতে হবে। এসব কিছু না জেনে কোরান পাঠ করলে প্রকৃত তথ্য জানা তো দুরের কথা, প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা ১০০% । এ নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য সেগুলো।

অনেক গুলো ফ্যাক্টর ছিল সেই ১৪০০ বছর আগেকার মক্কা মদিনায় কেন ও কিভাবে ইসলাম প্রচার সম্ভব হয়েছিল ও অত:পর কিভাবে ইসলাম চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে অনেক লেখা লেখি আছে তবে এ নিবন্ধে মূলত: কোরান হাদিস কিভাবে পড়তে হয় ও তার অর্থ বুঝতে হয় সে সম্পর্কে বিশেষভাবে আ লোকপাত করা হবে।কোরানের আয়াত কত রকম, কোথায় সেগুলো নাজিল হয়েছিল, নাজিলের পটভূমিকা কি ছিল এসব ভালমতো না জানলে যে কেউ কোরান পড়ে ভুল বুঝতে পারে, হতে পারে প্রতারিত।যেমন- নিচের বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত আয়াত দুটি-

দ্বীন নিয়ে কোন বাড়া বাড়ি নাই। সূরা-বাকারা, ০২: ২৫৬ ( মদিনায় অবতীর্ণ)
তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে এবং আমার ধর্ম আমার জন্যে। কোরান, কাফিরুন- ১০৯:০৬ ( মক্কায় অবতীর্ণ)

কি সুন্দর একটি আয়াত ।ঠিক শান্তির মৃত সঞ্জিবনী সূরা প্রবাহের মত।যিনি কোরানের আয়াতের প্রকরণ, নাজিলের পটভূমিকা জানেন না, তিনি অতি সহজে ইসলামকে চুড়ান্ত রকম শান্তির ধর্ম হিসাবে বুঝে ফেলতে পারেন উক্ত আয়াত দুটি পড়ে।কিন্তু উক্ত আয়াত দুটি যে পরে বাতিল হয়ে গেছে অন্য আয়াত দ্বারা এ কথা জানে খুব কম মানুষ।তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতগন যারা ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধ পরিকর, তারা সদা সর্বদা উক্ত আয়াত দুটি আউড়ে গেলেও ঘুনাক্ষরেও তারা একথাটি বলে না যে , পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে নজিল হওয়া আয়াত দ্বারা উক্ত শান্তির আয়াত সমূহ বাতিল হয়ে গেছে।এ নিবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয় এই আয়াত বাতিলকরন কি ও কোন্ কোন্ আয়াত বাতিল হয়ে গেছে সে সব নিয়ে আলোচনা করা। প্রথমেই দেখা যাক্ বাতিল করনের কোরানিক সমর্থন আছে কি না। তবে তার আগে বাতিলকরন বা Abrogation কি জিনিস সেটার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ননা দেয়া যাক।বাতিল করন বা Abrogation হলো – ইসলামের প্রাথমিক যুগে (প্রধানত: মক্কায়) নাজিল কৃত নানা রকম আয়াত ( সাধারনত বিধি বিধাণ সম্পর্কিত) পরবর্তীতে মদিনায় অবতীর্ণ নতুন ও উন্নততর আয়াত দ্বারা রদ হয়ে যাওয়া।আরবিতে বলে আল নাসিক ওয়াল মানসুক- al-nāsikh wal-mansūkh (الناسخ والمنسوخ, “the abrogating and abrogated [verses]”). । আল নাসিক হলো- যে আয়াত দ্বারা বাতিল হয় বা Abrogating verse, এবং ওয়াল মানসুক হলো- যে আয়াত বাতিল হয়ে গেছে বা Abrogated Verse. এর সমর্থনে যে সব আয়াত কোরানে আছে তা নিম্নরূপ-

এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না। সূরা নাহল, ১৬: ১০১, মক্কায় অবতীর্ণ

আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন এবং মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে। সূরা রাদ, ১৬: ৩৯, মক্কায় অবতীর্ণ।

আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? সূরা বাক্কারা, ২: ১০৬ মদিনায় অবতীর্ণ ,

ইসলামের প্রাথমিক যুগের আয়াত সমূহ যে পরবর্তী যুগে নাজিল হওয়া আয়াত দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে তার বহু উল্লেখ হাদিসেও আছে , যেমন-

বুখারী, ভলিউম-৬, বই-৬০, হাদিস-৬৮ : ইবনের উম বর্নিত- যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান( ২:৮৪) পরবর্তীতে নাজিল হওয়া আয়াত দ্বারা বাতিল হয়ে যায়।

একই বক্তব্য নিচের হাদিসে-

Bukhari, Volume 6, Book 60, Number 69:
Narrated Marwan Al-Asghar: A man from the companions of Allah’s Apostle who I think, was Ibn ‘Umar said, “The Verse:–“Whether you show what is in your minds or conceal it….” was abrogated by the Verse following it.”
মুসলিম, বই-০০৩, হাদিস- ০৬৭৫: আবু আল আলা বি আ ল সিকখির বর্নিত- আল্লাহর রসুল কিছু বিধান অন্য বিধান দ্বারা রদ করে দেন, যেমন করে কোরান তার কিছু অংশ অন্য অংশ দ্বারা রদ করে।

এরকম আরো উদাহরন নিচে দেয়া হলো-

Bukhari , Volume 6, Book 60, Number 285: Narrated Al-Qasim bin Abi Bazza: That he asked Said bin Jubair, “Is there any repentance of the one who has murdered a believer intentionally?” Then I recited to him:–
“Nor kill such life as Allah has forbidden except for a just cause.” Said said, “I recited this very Verse before Ibn ‘Abbas as you have recited it before me. Ibn ‘Abbas said, ‘This Verse was revealed in Mecca and it has been abrogated by a Verse in Surat-An-Nisa which was later revealed in Medina.”

Muslim, Book 043, Number 7173:
Sa’id b. Jubair reported: I said to Ibn Abbas: Will the repentance of that person be accepted who kills a believer intentionally? He said: No. I recited to him this verse of Sura al-Furqan (xix.):” And those who call not upon another god with Allah and slay not the soul which Allah has forbidden except in the cause of justice” to the end of the verse. He said: This is a Meccan verse which has been abrogated by a verse revealed at Medina:” He who slays a believer intentionally, for him is the requital of Hell-Fire where he would abide for ever,” and in the narration of Ibn Hisham (the words are): I recited to him this verse of Sura al-Furqan:” Except one who made repentance.”
Muslim, Book 004, Number 1433:
Anas b. Malik reported that the Messenger of Allah (may peace be upon him) invoked curse in the morning (prayer) for thirty days upon those who killed the Companions (of the Holy Prophet) at Bi’r Ma’una. He cursed (the tribes) of Ri’l, Dhakwan, Lihyan, and Usayya, who had disobeyed Allah and His Messenger (may peace be upon him). Anas said: Allah the Exalted and Great revealed (a verse) regarding those who were killed at Bi’r Ma’una, and we recited it, till it was abrogated later on (and the verse was like this):, convey t