ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত লেখাচুরির অভিযোগটা নিয়ে অন্তত বছর খানেক আগেই সবাই জানতেন। এখন কেন এটা আলোচনায় আসছে? কারণ গদি বদল হয়েছে। সাবেকি গদিনসীনদের অনেকেই বিপদে আছেন, তাল সামলাতে তারা ব্যতিব্যস্ত। নুতন একদল তাদের জায়গাগুলো দখল করতে নেমেছেন– সংক্ষপে ঘটনা এই। ফলে আগে যে চুরিটা ছিল ছিল আড্ডায় তামাশার বিষয়, এখন তা রীতিমত বিচারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
কুম্ভীলকবৃত্তির বিষয়ে যদি কোন ধারাবাহিক নীতির প্রতিফলন হতো এই আলাপ, আনন্দিত হতাম। কিন্তু এটা যদি প্রতিশোধ নেয়ার মাধ্যম হয়, বুঝতেই পারছেন, তা হবে একটা অসুখের ঊপসর্গ মাত্র। অসুখটা বহু আগেই জাঁকিয়ে বসেছে, গ্রাস করেছে। সেটা হলো ছাত্রাবাস, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট, ঠিকাদারী কিংবা ফুটপাথের মতই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দখলের বস্তু হবার যোগ্য।
ফলে আশঙ্কা এই যে, বিচার হবে না। প্রতিহিংসা পুরণের চেষ্টা হবে। অধঃপতনের কারণে শুধু বিএনপিকে ‘সাইজ করায় ঘটনা সীমিত নেই, এখন কামড়াকামড়ি নিজেদের ভেতরই। বিচার করতে গেলে তো গবেষণাপত্রটির সম্পাদক ও অন্যান্যদেরও কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই কারণে মামুন-তারেক-বাবর এরা প্রতিসিহংআর শিকার হয়েছেন, বিচারের মুখোমুখি হননি। কেননা বিচার করতে গেলে তো আমলাতন্ত্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সম্ভবত এক্ষেত্রে প্রতিহিংসাও পুরোপুরি চরিতার্থ হবে না। কারণ আক্রান্তরাও ঘরেরই লোক, তাদেরও তো মামা খালু সুহৃদ স্বজনেরা ক্ষমতায় আছেন। তারা সেই খুঁটিগুলোকে ব্যবহার করবেন। এরও ফল হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরর দাপট আরও বাড়বে। যাতায়াত ও দেনদরবার বাড়বে। প্রচুর সালিশ আর আপোষরফাও চলবে, বাড়বে।
কম আছে নাকি এখন? অবুঝ প্রশ্ন হবে। সেরের ওপর যেমন সোয়াসের আছে, তেমনি দাপটের ওপর আছে দাপটতর। আর…
আর, যেটা আাড়ালে ছিল, সেইটা দিনের আলোয় এসেছে– কোন কিছুই পবিত্রস্থান না, যদি টাকা কামাবার উপায় তাকে নিয়ে থাকে। মোহটা যদি ঘুচে গেছে আগেই, আড়ালটাও পুরোপুরি ঘুচুক।
এটা মেরুদণ্ডহীনতার সংস্কৃতিকে আরও জোরদার করবে। বাকি সকলের কুম্ভীলকবৃত্তি তো এখনও তামাশারই বিষয় হয়ে আছে, থাকবে। সামাজিক ভূমিকায় অতিরিক্ত আগ্রাসী যারা, যাদেরই একটু ঝুঁকি বেশি নিতে হয়। হয় এসপার নয় ওসপার। বাকিরা নিরাপদ মোসাহেবিতে সশ্রদ্ধ মধ্যপন্থা বেছে নেয়ার সংস্কৃতিতে আরও পোক্ত হবার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেয়ে যাবেন। এর বাইরে অল্প কিছু মানুষ আছেন, যাদের জন্য শিক্ষকতা, ভাবা, ভাবানো একটা তাড়নার মতো, তাদের কথা আলাদা।