পাকিস্তান দর্শন, সমর্থন ও জাহানারা ইমাম

ফেইসবুক ইউজারদের মধ্যে যারা ছোটবেলায় ‘ডায়াপার’ পরেছে সেই প্রজন্ম জাহানারা ইমামকে কতটুকু জানে সেই বিষয়ে আমার ঘোরতোর সন্দেহ আছে। উনাকে ধারণ করা তো অনেক পরের বিষয়। এই প্রজন্ম হয়ত তাজউদ্দিনকেই ‘ভারতের দালাল’ বলতে কুন্ঠিত হবে না!

তো, ভারত যেহেতু চোর, তারা চোট্টামী ছাড়া ক্রিকেটে জিততে পারে না, বাংলাদেশ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হতে পারছে না যেহেতু ভারতের চোট্টামীর কারণে কাজেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিশ্চয় আপনি পাকিস্তানকে সমর্থন জানাবেন?

যদি আপনি যথেষ্ঠ ভন্ড হোন তাহলে আপনার উত্তর হবে আপনি ফাইনালে কাউকেই সমর্থন জানাবেন না! কিন্তু ইমারন খান যুগের উইলস এশিয়া কাপ, শারজা কাপের সময় ৯৯.৫০ ভাগ বাংলাদেশী পাকিস্তান ভক্তরা কি ডাইনোসারের মত বিলুপ্ত হয়ে গেছে? ইমরান খানের একটা ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায় যেখানে তিনি বাংলাদেশ সফর নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছেন, স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে হাজার হাজার বাংলাদেশী যেভাবে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল তাতে তিনি ইমোরশনাল হয়ে পড়েছিলেন…।

যদি রাজনীতি টানেন তাহলে পাকিস্তানের হয়ে একটা কথাও আপনি বলে যুত করতে পারবেন না। যদি ধর্ম টানেন তাহলে বাংলাদেশ থেকে কতজন মুসলমান হজের পরে ভারতে তীর্থ করতে যায় তার পরিসংখ্যানটা আগে খোঁজেন! তবু ভারতকে সমর্থন না জানানোর অনেকগুলো যুক্তি দাঁড় করানো যায়। কিন্তু পাকিস্তানকে সমর্থন জানানোর একটিও যুক্তি নেই। কিন্তু ভালোবাসা তো যুক্তি মানে না। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ভালোবাসে! এটাই তিতা সত্য। ফালানী, তিস্তা… এসব উছিলার কি প্রয়োজন?

পাকিস্তান আমার কাছে একটা আইডোলজি। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের প্রতি আমার কোন ঘৃণা নেই। পাকিস্তানী কোন খেলোয়ারের প্রতিও কোন বিদ্বেষ নেই। আমি শচীন টেন্ডুলকার ও ওয়াশিম আক্রামের ভক্ত ছিলাম। তাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল নিঁখাদ ক্রিকেটীয়। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে সমর্থন করিনি কখনো দুটো কারণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাকিস্তানীদের ভূমিকা আর ‘পাকিস্তান আইডোলজি’-কে সমর্থন না করা। যে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রেরণায় ‘পাকিস্তানের’ জন্ম, যে বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক দর্শনে ‘পাকিস্তানের’ জন্ম আমি তাকেই ঘৃণা করি, মানুষকে নয়। পাকিস্তানকে সমর্থন জানালে দ্বিজাতি তত্ত্বকেই সমর্থন জানাতে হয়…।