ইছলামে স্নেহ ও কাম

লিখেছেন জর্জ মিয়া

ছোটবেলায় প্রায়ই দেখতাম প্রত্যেকটা বাড়িতে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কেউ মারা গেলে হয় এই মিলাদ, কেউ জন্ম নিলে হয় এই মিলাদ, আবার কারো আয়-উন্নতি না হলেও মিলাদের আয়োজন করা হয়। কিছুদিন আগে একটা ভিডিও চোখে পড়েছে, সেখানে একজন ইছলামী বক্তা যার নাম – ছিফাত হাছান। যে বক্তা স্পষ্টই বলে ছিলো, এসব করলে আদতে কোনো ফায়দা নেই। যার যার দোয়া তার তার কম্মেই লাগে। কারো বাবা-মা’র জন্য দোয়া কোন হুজুরকে দিয়ে করানোর থেকে বেশি কার্যকরি হবে ঐ মা-বাবার পুত্র দোয়া করলে সেটা। কথা হচ্ছে এই বক্তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, ইছলাম মা-বাবাকে অধিকতর মূল্যায়ন করেছে প্রমাণ করা। এ ধরনের চেষ্টাটা আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। অথচ এদিকে ৮ জানুয়ারীর খবরে প্রকাশ: প্রকাশ্যে নিজের মাকে হত্যা করলো আইএস সদস্য। ঐ সদস্য কেন তার মাকে হত্যা করেছে, এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ঐ মুছলিমের মা তার আইএস সদস্য পুত্রকে আইএস ছাড়তে বলেছিলেন। তার মা মনে করতেন, এটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, সেই সঙ্গে আইএস নির্মূল হয়ে যাওয়ার বিষয়েও তার সন্তানকে সতর্ক করেছিলেন। আর এসব কারণেই তার মা কে হত্যা করেছে ঐ মুছলিম সন্তানটি। ২১ বছরের আলি সাকার তার মা ৪৫ বছরের লিনা আল-কাশেম রাকাকে পোস্ট-অফিসের কাছে কয়েকশ মানুষের সামনে হত্যা করে। এখন কথা হচ্ছে, কে আসলে ইছলামের প্রকৃত সৈনিক? কে আসলে ইছলাম সঠিকভাবে পালন করছে? এই আইএস সদস্য, নাকি উক্ত বক্তা ছিফাত হাছান?

অন্যদিকে বিবিসিও জানিয়েছে, বিগত ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি অন্তত দু’হাজার মানুষকে প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে, গলা কেটে অথবা পাথর মেরে হত্যা করেছে। কাজেই হাদিস-কোরানের আলোকে প্রশ্ন তোলা যায়, কে তবে ইছলামের আসল কাণ্ডারি? আইএস, নাকি এসব ছিফাত হাছানেরা?
শুনতাম, আল্যার নবী ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে খুবই আদর ও স্নেহ করতেন। নবীজির শিশুপ্রীতির ব্যাপারে যারা এখনো সন্দেহ করেন, তারা হয়তো জানেন না যে, শিশু আয়েশাকে স্নেহ করতে গিয়ে তিনি তার সাথে ঊরু-সঙ্গমে (বিশদ জানতে thighing in islam লিখে গুগল করুন) লিপ্ত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়েছে ইছলামী গ্রন্থগুলোকে তথ্যসূত্র হিসেবে ধরে। সেখানেও বুখারি, আল তাবারি সহ আরও হরেক ইছলামী রেফারেন্স দেয়া আছে। আরও দেখা যেতে পারে ঐতিহাসিক বানু কুরাইজা গোত্রের ওপরে মোহাম্মদি হামলার ইতিহাস। যেখানে দ্বীনের নবীজি নিজে সকল পুরুষকে হত্যা ও নারী শিশুদেরকে মালে গনিমত করার আদেশ দিয়ে নিজেও ভোগ করেছেন।… যাহোক, তাঁর শিশুস্নেহ প্রসঙ্গে আসি। এই কথাটা শুধু শুনেই গেছি আমরা, দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তো প্রশ্ন আসতে পারে: নবী মরে গেছে, তার স্নেহ পাওয়া এখন কী করে সম্ভব? বলবো, অবশ্যই সম্ভব। তার একটা মতবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সারা বিশ্বে। যে মতবাদের ধারক ও বাহকগন নবীজির সমস্ত কিছুই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকেন। দৈনন্দিন কাজ, এমনকি হাগা-মুতাও বাদ যায় না এ চর্চার তালিকা থেকে। কাজেই তার কর্মকাণ্ড সমাজে প্রশংসার দাবিদার যদি হয়েই থাকে, তাহলে সমাজের সকল কিছুতেই একটা মোহাম্মদি প্রভাব থাকবে, যা স্বাভাবিক। এখন একটু দেখতে পারি শিশুদের বেলায় কীভাবে সেসব চিত্র ফুটে উঠেছে বর্তমান কালেই।
আমরা দেখি, প্রায়শই অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপরে ইছলামী সৈনিকদের হামলা। যার কিয়দংশ অবশ্য এই বঙ্গদেশেও বিস্তৃত। যেখানে দেদারসে লুটপাট চালানো হয় “মালাউন” সম্প্রদায়দের ওপরে। বসতবাড়ি জ্বালানো, বেদখল, ধর্ষণ – সবই চলে। আমরা খোলা চোখে সেই বানু কুরাইজার চিত্রই দেখতে পাই পুনরায়। বিশেষ কোনো ভিন্নতা নেই। ছহি মুহাম্মদি চর্চা তো এটাই, নাকি?
আর এ কারণেই আমরা দেখতে পাই পেশোয়ারে হামলা, যেখানে শিশুদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে। জঙ্গিযুদ্ধে প্রাপ্ত মেয়েদেরকে বিক্রি করা হয়েছে। যারা করেছে, তারা প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিয়েছে আল্যার আদেশ ও দ্বীন কায়েম করার উদ্দেশ্যেই তাদের এই অপারেশন চালানো।
অবিশ্বাসী, ধর্ম অস্বীকারকারীদেরকে যে ভাবেই হোক, হত্যা করতে হবে, এটা আল্যাই বলেছেন। বিশেষ কারণ যেমন, ব্লগ লেখা, বই লেখা ইত্যাদির প্রয়োজন নেই। আপনি নাস্তিক, এই একটা কারণই যথেষ্ট ইছলামী সৈনিকদের হাতে প্রাণ খোয়াতে।
এর কারণ উদ্ধৃত করা যায় কোরান থেকেই, “অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাদেরকে ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে চলে গিয়েছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।” (সূরা ৬১-৬২) অথবা “যার ওপর যবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব ও তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি।” (সূরা ১৬:১০৬)
এমন অসংখ্য কোরানিক আয়াতের ওপরে ভর করেই সমস্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে বর্তমানের ইছলামী সৈনিকরা। মাঝে মাঝেই খবরে আসেন এদেশের সম্মানী হুজুররা। তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয় নানা সময়ে নবীর তরিকা-আকিদা-সুন্নত পালনের দায়ে। শিশু বালিকাকে বিয়ের কারণে গ্রেফতারও করে এদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ এই হুজুরেরা ছহি সুন্নার চর্চাটাই করেন, যা নবীজি তার জীবদ্দশায় করে গিয়েছেন। এখানে একটা প্রশ্ন রাখতে হচ্ছে: ইছলামী মতে স্নেহ ও কাম দুইই কি এক জিনিস? অভিন্ন হলে সেটা কীভাবে?