লিখেছেন পুতুল হক
মুসলমান-প্রধান দেশের মানুষ হল সেই অভাগা, যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে অপরের করদরাজ্যে বাস করতে চায়। কোথাকার কোন জলার দেশের মানুষ আমরা, কিন্তু চলতে চাই সৌদি রাজার অধীনে।
আল্লাহর নামে আরব জাতীয়তাবাদের কাছে আমরা নিজেদের জাতিসত্তা বিসর্জন দিই।
আমাদের ভাষা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের সৌন্দর্য আর শিক্ষাকে ঘৃণা করি, কাছে টেনে নিই আরবদের ভাষা, ইতিহাস, সৌন্দর্য আর শিক্ষাকে।
বুঝে না বুঝে আরবি লেখা কাগজের টুকরোকে চুমু খাই পরম ভক্তি ভরে আর বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে অবহেলা করি। আমাদের বাপ-দাদা চোদ্দ পুরুষ বাংলায় কথা বলেছে, হেসেছে, কেঁদেছে, আজ সে ভাষা আমাদের আপন ভাষা না।
সারা বিশ্বের মুসলমান এক খলিফার অধীনে থাকবে। খলিফা নিশ্চয়ই রাশিয়া, চীন বা ভারত কিংবা বাংলাদেশ থেকে আসবে না। ইসলামের ইতিহাস বলে, মদিনার কাউকে মক্কার মুসলমান খলিফা হিসেবে মেনে নেয়নি, সেখানে অন্য দেশের কেউ খলিফা হবে, পাগলেও এই চিন্তা করবে না। তুর্কি কিংবা ইরানের ইসলামী রাজত্ব তাই অ-ইসলামী খেতাব পায়। অন্যদেশের মুসলমান খলিফা হবে – এটা অনেক দূরের কথা, কারণ একমাত্র মক্কা ছাড়া অন্য কোনো অঞ্চলের মুসলমান ‘আসল মুসলমান’ নয়।
ইসলামী আইনের পক্ষে সাফাই গাওয়ার অর্থ আরব সাম্রাজ্যবাদের কাছে স্বেচ্ছায় নতি স্বীকার করা। পনেরশ বছর আগের মক্কার শাসন ব্যবস্থার নাম ইসলামী আইন। পৃথিবীর মানচিত্রে ক্ষুদ্র একটি মরু অঞ্চল মক্কা, সেখানকার কয়েকটি বেদুঈন গোত্রের চালচলন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনের নাম ‘জিহাদ’।
এতে ঐশ্বরিক ফ্লেভার দেয়া হয়েছে, কারণ সে-যুগের জ্ঞানবিজ্ঞানে পিছিয়ে-পড়া মানুষকে অন্ধবিশ্বাস দ্বারা বেশি এবং সহজে তাড়িত করা যেত। যতদিন সম্ভব মুসলমানরা যেন শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকে, সেজন্য ইসলামকে তাদের জন্য মনোনীত জীবনবিধান করা হয়েছে। এই জীবনবিধান তাদের শিখতে বারণ করে, গান গাইতে বারণ করে, প্রশ্ন করতে বারণ করে, নাচতে বারণ করে, সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতাকে বারণ করে।
ইসলামের নামে পৃথিবীতে মুসলমান বলে একটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করা হয়েছে, যাদের চিন্তা-চেতনা আটকে থাকে সপ্তম শতাব্দীতে। মুসলমান সপ্তম শতাব্দীর আগের পৃথিবীকে জানতে চায় না, সপ্তম শতাব্দীর পরের পৃথিবীকে মানতে চায় না। স্বেচ্ছাপরাধীন এই সম্প্রদায় আরব রাজার অধীনে একটি পরাধীন পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করাকে ধর্ম বলে মানে।