সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গল্প

লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
খাগড়াছড়ির রিচাং ঝর্ণায় এক বাঙালির লাশ পাওয়া গেছে।
এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত যা হয়, এবারও তা-ই হয়েছে। যথারীতি দলবল মিলে সেখানকার সেটলার মুসলমান বাঙালিরা আদিবাসীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। ব্যাক-আপ দেবার জন্য অবশ্যই সেনাবাহিনী আর রাষ্ট্রীর প্রশাসন আছেই। আদিবাসী বন্ধুদের শেয়ার করা নানা পোস্ট থেকে যেটা জানতে পারলাম: নানা স্থানে বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্নভাবে আদিবাসীদের ওপর হামলাও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের একটা পত্রিকাও এ ব্যাপারে কোনো রিপোর্ট করেনি এখন পর্যন্ত।
সমতলে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ওপরে নির্যাতনের খবরগুলোও এদেশে ঢেকে রাখা হয়। এতে নাকি সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়বে! কিন্তু আদিবাসীদের ওপর এই নির্যাতনের খবর এই দেশের ঈমানদার মিডিয়া কোন কারণে চেপে যাচ্ছে? আদিবাসীরা তো আর সারাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই যে, আমাদের দেশের গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীদের মতে মিডিয়াতে খবর এলেই সাম্প্রদায়িকতা আরও ছড়িয়ে পড়বে। কোন কারণে তাহলে মিডিয়া এবং রাষ্ট্রের সত্যকে এভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা?

উত্তর খুবই সহজ: নির্যাতন হবে, নির্যাতন চলছে, নির্যাতন চলবে। কিন্তু সেটা কাক-পক্ষীকেও জানতে দেওয়া হবে না। সংসদে সরস্বতী পূজার খবর ফলাও করে প্রচার করে হবে। বিশেষ বিশেষ দিবসে পত্রিকার প্রথম পাতায় সুন্দর সুন্দর আদিবাসী মেয়েদের নৃত্যরত ছবি আসবে:
উত্তন পেগে মেগে মেগে,
মেগুলো দেবা তলে,
মর পরানান জে’দ মাগে,
তারা ল’গে ল’গে….
‘সাংরাই’ উৎসবে আদিবাসী মেয়েদের জল ছিটানোর ছবি আসবে। সমতলের বাঙালিরা বসে বসে আদিবাসী মেয়েদের ছবি দেখবে। বহির্বিশ্বের মিডিয়াতেও এই খবরগুলো আসবে। পৃথিবী জানবে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কতো ভালো আছে। সে-দেশের সংসদেও তাদের পূজা হয়। বাংলাদেশের আদিবাসীরা কতো ভালো আছে। তাদের কী সুন্দর সুন্দর নৃত্যরত মেয়েদের ছবি আসে। এমপি, মন্ত্রী আর আর্মি অফিসারেরা বসে বসে দেখে। সে-দেশে শুধু সম্প্রীতি আর সম্প্রীতি… শুধুই সম্প্রীতি… সম্প্রীতি… সম্প্রীতি।
আর আড়ালে থেকে যাবে ৩০% (প্রায়) সংখ্যালঘু থেকে ৮%-এ নেমে আসার বাস্তবতা। আড়ালে থেকে যাবে আদিবাসীদের সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগের, নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার গল্প। কোনো রূপকথা নয়, নিখাদ সত্যি গল্প।
ওদিকে পাহাড়ের পরে সমতলে পঞ্চগড়ে মন্দিরের পুরোহিতকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা (!)। ভারতে কোনো মুসলিম নির্যাতিত হলে তা কিন্তু উগ্র হিন্দুরা করে, মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন উগ্র বৌদ্ধরা করে, তবে বাংলাদেশে অমুসলিমদের ওপর, আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন চালায় এলিয়েন দুর্বৃত্তরা।
এতক্ষণ রাশিরাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গল্প শোনালাম! এবার ভাষা দিবসে বাংলা অভিধানে যোগ হওয়া পুরনো শব্দের নতুন অর্থ জানাই।
দুর্বৃত্ত: দেশের অমুসলিমদের ওপর হামলা করে, নির্যাতন চালায় যে-সব মুসলিম।
জঙ্গি মুসলমান: যেসব মুসলমান লেখা সহ্য করতে না পেরে কোপায়।
সহী মুসলমান: যারা কোপায় না, তবে জঙ্গিরা কোপানোর পর ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে।
মডারেট মুসলমান: আমি মদ খাই, গাঁজা খাই, মাথার ওপরে কাপড় মানে হিজাব দিনদিন বাড়লেও পোশাকের নিচের দিকে কাপড় দিনদিন কমে, আমরা প্রেম করি, টুকটাক হাম্মিটাম্মিও খাই বিয়ের আগে, তবে, প্লিজ, আপনি লিখুন, তবে আমার অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে নয়।