ইনসেস্ট-লিপ্ত বিভিন্ন ধর্মের দেব-দেবীরা – ২

লিখেছেন সূফি বরষণ
হিন্দু ধর্মে ইনসেস্ট:
এবার দেখি, পুরাণ কী বলে।

ব্রহ্মা তার কন্যা স্বরস্বতির রুপে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে সঙ্গম ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। স্বরস্বতি তার পিতার হাত থেকে বাচার জন্য ভুমির চারদিকে ছুটে বেড়াতে লাগলেন কিন্তু ব্রহ্মার হাত থেকে বাচতে পারলেন না। তারা স্বামী-স্ত্রী রুপে ১০০ বছর বাস করলেন এবং সয়ম্ভুমারু ও শতরুপা নামক এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম দিলেন। সয়ম্ভুমারু ও শতরুপাও স্বামী স্ত্রী রুপে বসবাস করতে লাগলেন। (Aitreay Brahman III : 33 // Satapatha Brahman 1 : 4 : 7 : 1ff // Matsy Puran III : 32ff // Bhagabati Puran III : 12 : 28ff)

আবার,অহল্যা,গৌতম মুনরি স্ত্রী,সদ্য সড়বাতা (গোসল) এবং আর্দ্র (ভেজা) বস্ত্র পরিহিতা অবস্থায় আশ্রমে প্রত্যাবর্তন কালে পথিমধ্যে গৌতম শিষ্য দেবরাজ ইন্দ্রের সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। আর্দ্র বস্ত্রের মিথ্যা আবরণকে ভেদ করে উদগত যৌবনা অহল্যার রূপলাবণ্য বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে উঠায় ইন্দ্রদেবের পক্ষে ধৈর্য ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তিনি গুরুপত্নী অহল্যার সতীত্ব হরণ করেন। ত্রিকালজ্ঞ গৌতম মুনির কাছে একথা অজ্ঞাত থাকে না। তার অভিশাপে অহল্যা প্রস্তরে পরিণত হয়। আর ইন্দ্রদেবের সারা দেহে সহস্র যোনির উদ্ভব ঘটে। সুদীর্ঘকাল পরে ত্রেতাযুগে ঈশ্বরের অবতার রূপে শ্রীরাম চন্দ্র আবির্ভূত হন, তার পদস্পর্শে অহল্যার পাষাণত্ব অপনোদিত হয়। (পঞ্চ পুরাণ, ষষ্ঠ খণ্ড, ৬৯০ পৃষ্ঠা, মহাভারত, কৃত্তীবাসী রামায়ণের আদিকাণ্ডের ৬৫১ পৃষ্ঠা)
এবার আরও কিছু দেব-দেবীর যৌনতার বর্ণনা।

১. যম ও যমী, যমজ ভাই-বোন। সূর্যদেবের ঔরসে ও উষাদেবীর গর্ভে তারা জন্মলাভ করে। যমী একদিন যমকে বলে, “তোমার সহবাসের জন্য আমি অভিলাষিনী, গর্ভাবস্থা হতে তুমি আমার সহচর। বিধাতা মনে মনে চিন্তা করে রেখেছেন যে, তোমার ঔরসে আমার গর্ভে আমাদের পিতার এক নাতি জন্মাবে। তুমি পুত্রজন্মদাতা পতির ন্যায় আমার শরীরে প্রবেশ কর।” (ঋকবেদ মন্ডল-৯, সুক্ত ১০) সেই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে হিন্দুরা প্রতি বছর ‘ভাইফোঁটা’ নামক এক উৎসব পালন করে। ঐদিন যম আর যমীর অনুপ্রেরণায় হিন্দু ছেলেরা তাদের আপন বোনকে নিয়ে কল্পনা করে আর ভাবে, “ইশ! আমার বোনটাও যদি যমীর মত হত…”
২. রাম ও সীতাকে আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই জানি। কিন্তু বৌদ্ধ দশরথ জাতক অনুযায়ী – রাম ও সীতা হল ভাই-বোন, পরে তাদের মধ্যে বিবাহ হয়। “দশরথ জাতক” অনুযায়ী রামের জনক রাজা দশরথ ও জননী রাণী কৌশল্যার মধ্যে ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল, তথাপি তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছিল। ঋগ্বেদ-এ দেখা যায়, দম্ভ নিজ বোন মায়াকে, লোভ নিজ বোন নিবৃত্তিকে, কলি নিজ বোন নিরুক্তিকে বিয়ে করেছিল।
৩. শুধু ভাইবোন নয়, হিন্দু ধর্মে এমনকি মা-ছেলে, পিতা-কন্যার বিয়েতেও কোনো নিষেধ নেই। ঋগ্বেদ-এ উল্লেখ আছে – পূষণ তার বিধবা মাকে বিয়ে করে দ্বিধিষূ অর্থাৎ বিধবার স্বামী হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র মৎস পুরাণে বর্ণিত আছে – ঈশ্বর ব্রহ্মা নিজ কন্যা শতরূপার প্রতি প্রণয়াশক্ত হন এবং হিন্দুদের আদি মানব মনুর জন্ম হয় তাদের মিলন থেকেই।
৪. পঞ্চপাণ্ডবের নোংরামি সবাই জানেন, তারপরও মনে করিয়ে দেই। পঞ্চপাণ্ডব ছিল পাঁচ ভাই। এক বাজিতে জিতে পাঁচ ভাইয়ের একজন (অর্জুন) দ্রৌপদীকে লাভ করেছিল। দ্রৌপদীকে বাড়ি এনে পাঁচ ভাই মাতা কুন্তিকে আহবান করে বলল, “এসো, দেখে যাও, কী এনেছি।” মাতা কুন্তি না দেখেই উত্তর করল, “যা এনেছিস, পাঁচ ভাই মিলে ভাগ করে খা।” মাতার আদেশ মোতাবেক পাঁচ ভ্রাতাই দ্রৌপদীকে বিয়ে করে ভাগ করে খেয়েছিল।
৫. হিন্দু মেয়েদের আদর্শ হল সীতা। সীতা নাকি সতি নারীর আদর্শ। সেই আদর্শের আসল রূপ দেখুন: “সীতা স্বইচ্ছায় রাবনকে করলেন দেহ দান, আর রাবন সীতাকে করলেন বীর্য দান। তাই সীতার গর্ভে রাবনের বীর্যে দুজন জমজ সন্তানের জন্ম হয় যাদের নাম হলঃ ‘লব’ আর ‘কুশ’।” [রামায়ন ২:১৯-২১]
৬. ইসলামে ৪টা বিয়ে জায়েজ, আর এটা নিয়ে হিন্দুদের সে কী আস্ফালন! অথচ হিন্দুদের দেবতা কৃষ্ণ ১৩০০০ মতান্তরে ১৬০০০ টা বিয়ে করছিলো! এত্তগুলো বিয়ে করেও তার খায়েস মেটেনি, তাই সে মামী রাধিকার দিকেও হাত বাড়িয়েছিল। রাধিকা ধর্ষণের সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই আজ গাওয়া হয় “কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে…”
৭. ‘অপবিত্র নারীর উচিত শান্তচিত্তে শিবের (কামরূপের) উপাসনা করা। অতঃপর তার উচিত কোন ব্রাহ্মণের নিকট নিজেকে সমর্পণ করা এরূপ ভেবে যে ‘ইনিই কামরূপে যৌনতৃপ্তি লাভের উদ্দেশ্যে এসেছেন।’ এবং ঐ আবেদনময়ী নারীর উচিত ব্রাহ্মণের সকল মনঃকামনা পূর্ণ করা। তের মাস যাবৎ তার এই পন্থাতেই ঘরে আগত (যৌনতৃপ্তি লাভের নিমিত্তে) যে কোনো ব্রাহ্মণকে সম্মান দেখানো উচিত আর এতে সম্ভ্রান্ত নারী এমনকি বেশ্যাদের জন্যও কোন পাপ নেই।” (সূত্রঃ মৎস্য পুরাণ ৭০:৪০-৬০, মহাভারত ৩:২:২৩)
৮. সরস্বতী-পুরাণ বলে, ঊর্বশীকে দেখে স্বমেহন (কবিরাজি বাংলায় হস্তমৈথুন) করতেন ব্রহ্মা। তাঁর শুক্রাণু জমা হত একটি পাত্রে। সেই পাত্রে জন্ম হয় ঋষি অগস্ত্য এবং অগস্ত্য জন্ম দেন সরস্বতীর। এই সূত্র অনুযায়ী, সরস্বতী ব্রহ্মার নাতনি। আবার অন্য সূত্র বলে, ব্রহ্মার শুক্রাণু থেকে সরাসরি জন্ম হয় সরস্বতীর। কিন্তু আত্মজার রূপ দেখে মুগ্ধ হন প্রজাপতি। তিনি তাঁর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করতে চান। জন্মদাতার কামনা থেকে বাঁচতে পালিয়ে যান সরস্বতী। কিন্তু শেষ অবধি হার মানতে হয় ব্রহ্মার কামনার কাছে। ব্রহ্মা এবং সরস্বতী স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকেন পদ্মফুলে। প্রায় ১০০ বছর ধরে। তাঁদের পুত্রের নাম ‘স্বায়ম্ভুব মনু’ এবং কন্যা ‘শতরূপা’; কিন্তু এরপরেও ব্রহ্মার বিকৃত যৌনকামনা কমেনি। এতে বিদ্যা এবং জ্ঞানের দেবী সরস্বতী অভিশাপ দেন ব্রহ্মাকে। বলেন, দেবতাদের মূলস্রোতে থাকবেন না প্রজাপতি ব্রহ্মা। অর্থাৎ তিনি পূজিত হবেন না। সত্যি, হিন্দু দেবতাদের মূলধারার মধ্যে পড়েন না ব্রহ্মা। তাঁর রাজস্থানের পুষ্কর ছাড়া তাঁর মন্দির এবং অর্চনা বিরল। কূপিত হয়ে সরস্বতী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। দেবী থেকে রূপান্তরিত হন নদীতে। অতঃপর তারাও দু’জন দু’জনের সাথে সহবাস করে এবং তাদের মিলনের ফলে ব্রহ্মা দুজন দৌহিত্র ও দুজন দৌহিত্রা লাভ করেন। (মৎস্য পুরাণ ৩:৩২; ভগবত পুরাণ্ ৩:১২-২৮)