২০১৭ সালে হেফাজতের অন্যায্য দাবির সামনে ঝুকে যায় আওয়ামীলীগ সরকার। হেফাজতের চাপের মুখে তারা জেনারেল শিক্ষাক্রম থেকে বাদ দিয়ে দেয় কিছু সেক্যুলার লেখা, যা মানুষকে ভাবতে শেখায়। এর মধ্যে ছিল হুমায়ুন আজাদের কবিতা বই। অত্যন্ত আলোকিত একটি কবিতা ছিল এটি।
বই
‘হুমায়ুন আজাদ’
যে-বই জুড়ে সূর্য ওঠে
পাতায় পাতায় গোলাপ ফোটে
সে-বই তুমি পড়বে।
তোমায় শেখায় বাসতে ভালো
সে-বই তুমি পড়বে।
যে-বই তোমায় দেখায় ভয়
সেগুলো কোন বই-ই নয়
সে-বই তুমি পড়বে না।
যে-বই তোমায় অন্ধ করে
যে-বই তোমায় বন্দী করে
সে-বই তুমি ছুঁবেই না।
এই কবিতায় কার কী সমস্যা থাকতে পারে। লাইন বাই লাইন বিশ্লেষন করলে যদি কিছু বুঝা যায় আর কি।
যে-বই জুড়ে সূর্য ওঠে
পাতায় পাতায় গোলাপ ফোটে
সে-বই তুমি পড়বে।
হুমায়ুন আজাদ বলছেন বইয়ের কথা। যে বই জুড়ে সূর্য ওঠে- মানে যে বই আমাদের মনোজগতকে আন্দোলিত করে, জ্ঞানের সূর্য ওঠায় আমাদের মনে, সে বইয়ের কথা।
পাতায় পাতায় গোলাপ ফোটে- অর্থ হচ্ছে নতুন লব্ধ জ্ঞান হচ্ছে ফুলের মত, যেখান থেকে সুবাস ছড়ায়। গোলাপের সুবাসকে যেমন আটকে রাখা যায় না, তেমনি জ্ঞানের সুবাসকে আটকে রাখা যায় না। হুমায়ুন আজাদ আমাদের সে বই-ই পড়তে বলছেন।
যে-বই জ্বালে ভিন্ন আলো
সে-বই তুমি পড়বে।
জ্ঞানের পরম্পরাই হচ্ছে ভিন্ন কিছু জানা। সমসাময়িক জ্ঞান বা conventional wisdom-কে যদি আমরা প্রশ্নই না করতে পারি তাহলে দেখা যাবে আমরা বাস করছি হাজার বছর পূর্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বানানো সমাজের উপর। তখনকার নৈতিকতার উপর। সেটা কারো জন্যেই ভাল হবে না। যদি গ্যালেলিও conventional wisdom মেনে নিতেন তাহলে হয়ত আমরা এখনো বাস করতাম পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বে। যদি নিউটন মেনে নিতেন যে গ্রহরা সূর্যের চারপাশে ঘোরে কারণ গড তাদের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন স্ফটিকের ঘেড় দিয়ে তাহলে মানুষ চাঁদে যেতে পারত না। যদি আইনস্টাইন নিউটনের কথা মেনে নিতেন যে মহাকর্ষের রহস্য গডের অন্যতম কর্ম, তাহলে আমরা গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং, গ্রাভিটেশনাল ওয়েভের মত চিত্তাকর্ষক জিনিস জানতে পারতাম না।
Conventional wisdom এর ক্ষতি সম্পর্কে জানার জন্য একটা উদাহরণ দেই। মধ্যযুগে ইউরোপে ধরে নেয়া হয়েছিল রোগশোকের জন্য দায়ী ডাকিনীবিদ্যা। এর ফলে অনেক নিরীহ নারী এবং কিছু পুরুষকেও প্রাণ হারাতে হয়েছিল। তবে সেটি থেমেছিল জার্ম থিওরি অফ ডিজিজের কারণে।
তোমায় শেখায় বাসতে ভালো- বই মানুষকে ভিন্নতাকে জানতে ও ভালবাসতে শেখায়। সাধারণ রান্নার বইয়ের কথাই ধরুন। রান্নার বইতে যে সব ইনগ্রেডিয়েন্টসের কথা থাকে সেগুলোর সব কিন্তু স্থানীয় না। ধরেন টমেটো বা আলু, এগুলো এসেছে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে। প্রথমবার যখন আলু ফ্রান্সে নিয়ে আসা হয় ফরাসিরা আলু খেতে চায় নি কারণ আলু মাটির নিচে জন্মায়। পরে রাজপরিবারের নির্দেশে অভিজাতরা আলু খাওয়া শুরু করে, এবং ম্যারি এন্টিওনেত আলুর তৈরি ড্রেস পরেন।
যদি এই দ্বিধা দূর না করা হত তাহলে কি আলু এত জনপ্রিয় হত? ভিন্নতাকে ভালোবাসাই হচ্ছে এই জগতে শান্তিতে থাকার একমাত্র উপায়।
যে-বই তোমায় দেখায় ভয়
সেগুলো কোন বই-ই নয়
সে-বই তুমি পড়বে না।
এখানেই মনে হয় হেফাজতের মূল সমস্যাটা। পুরা ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না অবস্থা!
যে বই তোমাকে ভয় দেখায়– কোরান জুড়ে ভরা আছে দোযখের বর্ননা, কীভাবে মানুষকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মত পোড়ানো হবে, কীভাবে মানুষকে ফণীমনসা খাওয়ানো হবে, কীভাবে জিভ ছিড়ে নেয়া হবে, কীভাবে মানুষকে তার অপরাধের শাস্তি দেয়া হবে এসবই আছে কোরানে। শিশুমনে এই ভয় জাগানো হয় যেন তারা এই কাল্ট না ছাড়ে।
নবী এক রাতে পুরা মহাবিশ্ব ঘুরে এসে বলেছে দোযখে নারী বেশি থাকবে। এই ভয়ও তাদের দেখানো হয়েছে।
তো হেফাজত জানে কোরান মানুষকে ভয় দেখায়, ইসলাম ধর্মের মার্কেটিং হচ্ছে ভয় দিয়ে করা। হুমায়ুন আজাদ সেটাকে ধরিয়ে দেওয়া মূল সমস্যা না, কোরান মূল সমস্যা? প্রশ্ন রেখে গেলাম।
যে-বই তোমায় অন্ধ করে
যে-বই তোমায় বন্দী করে
সে-বই তুমি ছুঁবেই না।
ইসলাম ধর্ম মানুষকে অন্ধ করে। ধর্ম এবং ধার্মিকদের ভুলকে অগ্রাহ্য করতে শিক্ষা দেয় ধর্ম।
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন,
المسلم أخو المسلم لا يظلمه ولا يسلمه من كان في حاجة أخيه كان الله في حاجته. ومن فرج عن مسلم كربة فرج الله عنه بها كربة من كرب يوم القيامة ومن ستر مسلما ستره الله يوم القيامة
এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে না তার উপর যুলম করতে পারে আর না তাকে শক্রর হাতে তুলে দিতে পারে। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয় আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি কষ্ট দূর করে দেয় এর বিনিময়ে আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তার কষ্টসমূহ থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।
সত্য জেনেও সত্য গোপন করার শিক্ষা খোদ আল্লাই দিয়েছে হেফাজতকে। তাই তারা একই নিশ্বাসে বলতে পারে ইসলাম শান্তির ধর্ম কিন্তু আল্লাকে অপমান করলে কল্লা ফেলে দেব। আল্লা বলেছে-
তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না, কিন্তু সেসব কসমের ব্যাপারে ধরবেন, তোমাদের মন যার প্রতিজ্ঞা করেছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী ধৈর্য্যশীল।সূরা বাক্কারা, ২:২২৫
এছাড়াও-
“আল্লাহর ইচ্ছায়, যদি আমি কোন ব্যাপারে শপথ করি আর পরে দেখি এর চেয়ে ভাল কিছু আছে তখন আমি যেটা ভাল মনে করি সেটাই করি আর তখন পূর্বেকার শপথ রক্ষার কোন দরকার মনে করি না। সহি বুখারী, বই – ৬৭, হাদিস-৪২৭”।
এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও চক্রান্ত করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম চক্রান্তকারী। সূরা আল ইমরান, ৩:৫৪
এবং কাফেররা প্রতারনা করেছে আর আল্লাহও প্রতারনা করেছেন। বস্তুত: আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম প্রতারক। ৩: ৫৪
Bukhari (84:64-65) – Speaking from a position of power at the time, Ali confirms that lying is permissible in order to deceive an “enemy.”
Bukhari (52:269) – “The Prophet said, ‘War is deceit.’”
Muslim (32:6303) – “…he did not hear that exemption was granted in anything what the people speak as lie but in three cases: in battle, for bringing reconciliation amongst persons and the narration of the words of the husband to his wife, and the narration of the words of a wife to her husband (in a twisted form in order to bring reconciliation between them).”
তো হেফাজত যে মিথ্যাচার করছে, এবং আপাতঃদৃষ্টিতে মেনে নিচ্ছে কোরান একটা ভীতিকর আর ঘৃণায় পূর্ন, অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ গড়ার বই- এটা তাদের আল্লাই শিখিয়ে দিয়েছে।
Bukhari (50:369) – Recounts the murder of a poet, Ka’b bin al-Ashraf, at Muhammad’s insistence. The men who volunteered for the assassination used dishonesty to gain Ka’b’s trust, pretending that they had turned against Muhammad. This drew the victim out of his fortress, whereupon he was brutally slaughtered despite putting up a ferocious struggle for his life.