কুরআন যে সত্য কিতাব নয়, এটি যে মুহম্মদের প্রতারণপূর্ণ সুচতুর কৌশলের অংশমাত্র, এ বিষয়ে মুহম্মদ পূর্ণমাত্রায় সচেতন ছিলেন বিধায় এই আয়াতে মুহম্মদ নিজেই নিজেকে আশ্বস্ত করার জন্য আলোচ্য আয়াতটির অবতারণা করেন।
এ ছাড়াও মুহম্মদ ইহুদিদের নিকট নিজের অসৎ উদ্দেশ্যকে সততার মোড়কে উপস্থাপনের প্রয়াসে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়া মুহম্মদি আয়াতের শরণাপন্ন হন। যেমন:
ইহার পূর্বে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ। আর এই কিতাব ইহার প্রত্যায়নকারী, আরবী ভাষায়, যেন ইহা জালিমদেরকে সতর্ক করে এবং যাহারা সৎকর্ম করে তাহাদেরকে সুসংবাদ দেয়। [সূরা আহ্কাফ : ১২ আয়াত]
এই আয়াতের মাধ্যমে মুহম্মদ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থের প্রতি পুনঃসমর্থন ব্যক্ত করেন ও তাদেরকে এই মর্মে আশ্বস্ত করেন যে, তার আনীত গ্রন্থ কুরআন তওরাত-ইঞ্জিলেরই আরবি সংস্করণ। আর এই আরবি গ্রন্থ কুরআনের বদৌলতেই মুহম্মদ আরব ভূখণ্ডসহ সারা বিশ্বে সেমেটিক ধর্ম সমূহের সোল এজেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই ইহুদি-খ্রিষ্টানসহ সকল মানুষের প্রতি দায়িত্ব বর্তেছে মুহম্মদ ও মুহম্মদি কুরআনকে যথাক্রমে সত্য নবী ও সত্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার।
কিন্তু ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীগণ মুহম্মদ ও মুহম্মদি কুরআনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ উত্থাপন করেন। অভিযোগটি হলো, কুরআনে বাইবেলের যে-সমস্ত বর্ণনা স্থান পেয়েছে, তা মূলত বাইবেল থেকে চুরি করেছেন মুহম্মদ। তারা মুহম্মদকে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক ঠাওরাতে থাকেন। কিন্তু মুহম্মদের কুরআনে বাইবেলকে স্বীকৃতি প্রদান ও কুরআনের সত্যতা নিরূপণে বাইবেলের ওপরে নির্ভর করা হলেও বাইবেলের বিভিন্ন বর্ণনা চুরি করে কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয় কুরআনে। বস্তুত বাইবেলের বিভিন্ন বর্ণনাসমূূহ চুরি করে কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ইহুদিদের অভিযোগ এড়াতে মুহম্মদ একটি সূক্ষ্ম কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ‘লওহে মাহফুজ’ নামের এক অতি লৌকিক বিষয়কে কুরআনের যাবতীয় বর্ণনার উৎস হিসেবে দাবি করেন, যা ছিল মুহম্মদের স্বীয় চুরি আড়াল করার এক ছদ্ম প্রয়াস। তাই মুহম্মদ নিজের প্রতারণার অনুকূলে মুহম্মদি আয়াত নাজিল করে ইহুদিদের অভিযোগ এড়ানোর চেষ্টা করেন নিম্নোক্ত ভাবে। যেমন:
বস্তুত ইহা সম্মানিত কুরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ। [সূরা বুরুজ : ২১-২২]
এ বিষয়ে কুরআনে আরও বলা হয়:
শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের; আমি ইহা অবতীর্ণ করিয়াছি আরবী ভাষায় কুরআন, যাহাতে তোমরা বুঝিতে পার। ইহা তো রহিয়াছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে; ইহা মহান, জ্ঞানগর্ভ। [সূরা যুখরুফ : ২-৪]
কুরআনের এই সকল দাবির মাধ্যমে মুহম্মদ প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন, বাইবেলের বর্ণনাসমূহ যা কুরআনে বিবৃত হয়েছে, তা মুহম্মদ বাইবেল থেকে চুরি করে কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করেননি। ওই সকল বর্ণনা কুরআনের মাতৃগ্রন্থ বা লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে। মুহম্মদের আনীত কুরআন আল্লাহর নিকটে সংরক্ষিত সেই অতি লৌকিক গ্রন্থেরই নকল সংস্করণ, যা ইহুদিদের উত্থাপিত অভিযোগেরই পরোক্ষ স্বীকারোক্তি। এক্ষেত্রে কুরআনের প্রসবকর্তা মুহম্মদের ভূমিকা প্রমাণ করে, তিনি চোর হলেও ঈমানদার ছিলেন। তাই চুরির লজ্জা ঢাকতে প্রত্যক্ষ স্বীকারোক্তি না দিয়ে পরোক্ষ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মন গলাতে এবং নিজের প্রতি ও নিজের আনীত কুরআনের প্রতি সমর্থন পেতে মুহম্মদের নানামাত্রিক প্রয়াস ও মুহম্মদি আয়াত নাজিলের প্রেক্ষিতে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, মুহম্মদের আনীত কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকলেও তাদের ধর্মগ্রন্থসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে মুহম্মদের অশেষ আগ্রহ বিদ্যমান। যে কারণে মুহম্মদি কুরআনে বনি ইসরাইলদের ধর্মগ্রন্থ সমূহের প্রতি প্রত্যয়নসূচক একাধিক আয়াতের অবতারণা করা হয়েছে।
বিধায় কুরআনের এমন অবস্থান থেকে আমরা বুঝতে পারি, মুহম্মদি কুরআনের সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহ বা ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থসমূহ খুবই প্রয়োজনীয় উপাত্ত, যার প্রতি স্বয়ং আল-কুরআনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন:
উহারা বলে, ‘সে তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন ? উহাদের নিকট কি আসে নাই সুস্পষ্ট প্রমাণ যাহা আছে পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে? [সূরা তাহা : ১৩৩ আয়াত]
এ ছাড়াও বলা হয়েছে:
ইহা তো আছে পূর্ববর্তী গ্রন্থে – ইবরাহীম ও মূসার গ্রন্থে। [সূরা আলা : ১৮-১৯ আয়াত]
তাই কুরআনের সত্যতা নির্ণয় এবং কুরআনের মাতৃগ্রন্থ লওহে মাহফুজের অনুসন্ধান করতে আমরা কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কুরআন ও পূর্ববর্তী গ্রন্থ হিসেবে বাইবেলের তুলনামূলক পাঠ বিশ্লেষণে উপনীত হব।
এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়টির সূচনা করা হবে বাইবেলে বর্ণিত মূসার নেতৃত্বে বনি ইসরাইলগণের মিশর দেশ থেকে বেরিয়ে আসার পরবর্তী ঘটনা থেকে।