লিখেছেন সমকোণী বৃত্ত
প্রিয় ঈশ্বর, শুধু আপনিই কী জীবনভর আমাদেরকে চিন্তা ও কর্মের মাঝে রাখবেন? আমাদেরও তো দায়িত্ব আপনাকেও একটু চিন্তায় রাখা, কর্মের মাঝে রাখা। এতে আপনার মন ও শরীর উভয়ই ভাল থাকবে। তাছাড়া, অলস মস্তিষ্ক তো শয়তানের আখড়া।
তাহলে শুরু করা যাক।
১. মহামান্য ঈশ্বর, ধরুন, আমার সামনে কেউ বাজে একটা গান বাজাচ্ছে। আমার শুনতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু ঐ লোকটির গানটি পছন্দ, তাই আমি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লোকটিকে বলিনি গানটি বদলাতে। গানটি সে শুনবে, কিন্তু আমি শুনবো না, এমন উপায় আমার কাছে আছে। যেমন, আমি কানে তুলো দিয়ে রাখতে পারি কিংবা একটু দূরে সরে গিয়ে গানটি শোনা থেকে বিরত থাকতে পারি।
কিন্তু ঈশ্বর মশাই, আপনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা। আপনি সব কিছুই শোনেন। ভাল, মন্দ কোনো কথাই আপনার শোনার বাইরে থাকে না। তো কেউ বাজে গান বাজাচ্ছে বা আপনাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে, কিন্তু আপনার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গালি শুনতেই হবে, কেননা আপনি সর্বশ্রোতা। আবার মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছে দেওয়ার দরুণ আপনি মানুষের ওপর জোর করে তা থামাতেও পারবেন না। হয়ত রেগে গিয়ে পরে তাকে শাস্তি দেবেন, কিন্তু গালি তো শুনতেই হলো।
মানুষের স্বাধীন ইচ্ছের কথা ঠিক রেখে এবং আপনার সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা গুণটি বজায় রেখে সেই বাজে গান বা গালি শোনা থেকে আপনি কীভাবে রক্ষা পেতে পারেন, ভাবতে থাকুন…
২. আপনি সর্বত্র বিরাজমান হওয়ার দরুণ আপনি নারী-পুরুষের (এমনকি সমলিঙ্গের) মধুর মিলনের মাঝেও উপস্থিত থাকেন। এরকম লজ্জার জিনিস ছাড়াও অনেক কুচ্ছিত জিনিসও আপনাকে দেখতে হয়।
আমরা চাইলেই এসব দেখা থেকে বিরত থাকতে পারি, কিন্তু কোনোকিছুই আপনার দৃষ্টিসীমার বাইরে না থাকার কারণে আপনাকে তা দেখতেই হয়। আপনি কতটা নিরুপায়, ভেবে দেখেছেন কি?
৩. মহামান্য ঈশ্বর, ধরুন, একটা ঘরে কেউ বদবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ছেড়ে দিলো। আমরা, মানুষেরা, আমাদের হাত দিয়ে নাক মোবারক চেপে ধরে এই বদবায়ুর দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে পারি।
কিন্তু কোনোকিছুই আপনার উপলব্ধির বাইরে না থাকার কারণে আপনাকে বদবায়ুর গন্ধও নীরবে সইতে হয়। আপনি সর্বব্যাপী হওয়ার কারণে সেই ঘরেও ছিলেন এবং কোনোকিছুই আপনার অভিজ্ঞতার বাইরে না থাকায় সেই বদবায়ুর গন্ধেরও অভিজ্ঞতা আপনার আছে।
কী হবে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক হয়ে, যদি বদবায়ুর দূর্গন্ধের মত নির্মম অভিজ্ঞতা থেকেও রেহাই না পাওয়া যায়? আপনি কতটা অসহায়, তা কি ভেবে দেখেছেন?