লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
কাকের সাথে আমাদের দেশের মানুষের স্বভাবের একটা বড় মিল আছে। কাক নাকি মাংস চুরি করে সেই মাংস ঠোঁটে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। তারপর ভাবে, সে নিজে যেমন চোখ বন্ধ করে বসে আছে, তেমনি সারা পৃথিবীও চোখ বন্ধ করে বসে আছে। কেউ তার চুরি করা মাংস দেখতে পাচ্ছে না।
আমাদের দেশের মানুষেরও ঐ একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটা আছে। সবাই চোখ বন্ধ করে সুখে থাকতে চায়।
– বিদেশী নাগরিক হত্যা; আইএস-এর দায় স্বীকার।
– শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা; আইএস-এর দায় স্বীকার।
জনতার প্রতিক্রিয়া কী? তাঁদের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে – এই দেশে কোনো আইএস নেই। কোনো জঙ্গি সংগঠন নেই। তাঁরা একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে ফেলবেন: “সবই জামাত-বিএনপি আর স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র।”
এবার কাকের মত চোখ বন্ধ করে ভাবেন যে, এই দেশের কোনো ত্রুটি নেই। এখানে সাম্প্রদায়িকতা নেই, মৌলবাদ নেই, জঙ্গিবাদ নেই। প্রতিদিন যা হচ্ছে, সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এবার নাকে তেল দিয়ে ঘুমা।
কিন্তু খবরদার! এই দেশ নিয়ে কোনো সত্য আলোচনা-সমালোচনা করা যাবে না। দেশপ্রেমিক মানুষ সব। আমার মা’কে (দেশকে) নিয়ে কিছু বলছিস তো… (কান্নার ইমো হবে)
এই দেশে আইএস কিংবা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন থাকা অসম্ভব হবে কেন?
– এই দেশে কি আগে জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠন ছিল না?
– জেএমবি কি সারা দেশে এক সাথে সফলতার সাথে বোমা হামলা করতে সক্ষম হয়নি?
– জেএমবি কি ঝালকাঠিতে আদালত প্রাঙ্গনে বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যা করেনি? চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করেনি?
– আইএস আসার আগে থেকেই এই দেশে হিজবুল্লাহ তাহবীর, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এসব জঙ্গি সংগঠন নেই?
জঙ্গি সংগঠন একট দেশে বিস্তার করতে কী কী প্রয়োজন হয়? – ধর্মীয় উগ্রতা, গোঁড়ামি, নিজের ধর্ম ছাড়া সকল বিধর্মী কিংবা ধর্মে অবিশ্বাসী সবাই শত্রু এমন মনোভাব। বাংলাদেশে তার কোনটা নেই?
অনলাইনে কেউ নবী নিয়ে বাজে কথা লিখেছে বললেই মুসলমানেরা গিয়ে কোনো যাচাইবাছাই না করে পাক্কা একটা গ্রাম ধ্বংস করে দিতে পারে। যেমন: কুমিল্লার হোমনা, পাবনার সাঁথিয়া, রামু, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো।
তো এমন মানসিকতা যে দেশের মানুষের, সে দেশের মানুষের খালি মাথায় গোবর ঢুকিয়ে দিয়ে আইএস বানাতে খুব কঠিন হওয়ার কথা কি? আমি ব্রেইন ওয়াশ বলি না, কারণ ওয়াশড হতে গেলে মাথায় কিছু ব্রেইন থাকতে হয়। এদের মাথায় তো কিছুই নেই। তাই ফাঁপা মাথায় গোবর সেটআপ আমার মতে পারফেক্ট।
এই বাংলাদেশের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আইএস-এ যোগ দিতে গেছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ইউরোপের নাগরিকেরা আইএস-এ যোগ দিয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে আফগানিস্তানে তালেবানের সাথে যোগ দেওয়ারও উদাহরণ আছে। তো সেই দেশে আইএস তাদের কাজ শুরু করবে, এটা খুব অস্বাভাবিক হবে কেন?
একজন নাস্তিককে কুপিয়ে খুন করা হলো। তারপর এই দেশের ধর্মভীরু সাধারণ মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া কী হয়? – কোনো মানবিকতা আসে না, মায়ামমতা আসে না। তারা ঈদের চাঁদ দেখার মত খুশি হয়। দেশের ৮০% মুসলমানই এই খুনের মৌন সমর্থক। এটা কী ধরণের ধর্মান্ধতা? কেমন গোঁড়ামি?
ধর্মীয় উগ্রতা আছে, গোঁড়ামি আছে, মানুষ খুন করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার মনোভাবও আছে। তো এমন একটি দেশে আইএস-এর শুভাগমন (!) খুব অসম্ভব হবে কেন? তবুও এসব চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন নেই। চোখ বন্ধ করে বলে ফেলুন সব মিডিয়ার কারসাজি। জামাত-বিএনপির ষড়যন্ত্র। নিজের দেশপ্রেমিক ইমেজ আরো বেড়ে গেল মানুষের কাছে। নে বাবা, এবার নাকে তেল দিয়ে ঘুমা! কাউয়ার মতো সুখে থাক।