ফরিদপুরের রাজাকার নুরু মিয়া, যার নামে ফরিদপুরের একটি রাস্তার নাম করা হয়েছে এবং যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই মোশাররফ হোসেনের এর পিতা তার কথা গতকাল ফেসবুকে লেখার সাথে সাথে গুটি কয়েক চেতনায় তুমুল আঘাত লাগে। আমার সেসব বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীরা আমাকে বোঝাবার প্রবল চেষ্টা চালায় যে, রাজাকার আর শান্তি কমিটিতে থাকলেও উনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তার নামে রাস্তা বানানো খুবই ঠিক একটা কর্ম। কি আর বলি বলেন… গতকাল এসব দেখে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে ওকালতি আমি পড়েছি, যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আমি গবেষনা করছি, করেছি। কালকে একবার ভাবছিলাম বসে যে যদি বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ছাড়া নতুন একটা সরকার আসে এবং আওয়ামীলীগের ছত্র ছায়া রয়েছে এমন রাজাকার-আলবদর দের বিচার করে তবে আজকে জামাত বি এন পি জেমন ত্রাহি রব করে উঠছে, এক্সাটলি একই কাজটা আওয়ামীলীগের কিছু সমর্থক, কর্মীরা করবে। এক নুরু সেই নুরু না, এই কথাগুলো আমি সেদিন আওয়ামীলীগের বন্ধুদের কাছ থেকেই শুনতে পাব আসলে। একটা রাজাকার বাহিনীর সদস্য, ফরিদপুর শান্তি কমিটির সদস্য সেই লোক ওই গ্রুপে থাকার কারনেই প্রাইমা ফেসি লায়াবল। কারন এটা একটা ক্রিমিনাল সংগঠন। সেই লোক কতটুকু অপরাধ করেছেন, তার অপরাধের ধরন কেমন ছিলো বা আদৌ ছিলো কিনা এটা তদন্তের পর বের হবে। কিন্তু রাজাকার দলে, শান্তি কমিটিতে থাকার পরেও যখন তাকে সহী বাবার সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়া হয় তখন আমি বিষ্মিত হয়ে উঠি। শুধু মাত্র আওয়ামীলীগের পরিবারের সাথে কানেকশান আছে বলেই আজ এই সার্টিফিকেট দিচ্ছেন কিছু মানুষ। যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি…
নীচে যে ছবিটি দিয়েছি এটা পাব্লিক ছবি। ইন্টারনেট থেকে পেয়েছি। এই ছবিতে বসে থাকা অংশে একেবারে ডানে যেই ব্যাক্তি বসে আছেন তার নাম মুসা। আর দাঁড়িয়ে থাকা অংশে চশমা পরা ২য় জন হচ্ছেন শেখ ফজলে ফাহিম। আওয়ামীলীগ নেতা শেখ সেলিমের ছেলে। দৈনিক জনকন্ঠের “সেই রাজাকার” বইয়ে আমি পড়েছি এই লোককে নুলা মুসাও নাকি ডাকা হয় ফরিদপুরে। ইনি হচ্ছেন আমাদের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিমের বেয়াই। একাত্তর সালে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন সহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের নানান শাখায় তিনি অপরাধ করেছেন বলে ডা এম এ হাসানের লিখিত সেই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী গ্রন্থে আমরা তা দেখতে পাই এবং দৈনিক জনকন্ঠের মাধ্যমে প্রকাশিত “সেই রাজাকার” গ্রন্থেও আমরা তা পাই একেবারে ডিটেইলস বর্ণনা সহ। যদিও এই মুসা আজ নিজেকে প্রিন্স পরিচয় দেয় এবং সে একজন ধনকুবের।
উপরে উল্লেখিত বই গুলো থেকেই আমি জানতে পেরেছি যে মুসার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শহরের মদনগোপাল আংগিনার চন্দ্রকান্ত নাথ, গৌরগোপাল আংঙ্গিনার বিজয় মজুমদার,টেপা খোলার কবির আহমেদ চৌধুরী,গুড় বাজারের শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ দুলাল, খোদাবক্স রোডের অপরেশ সাহা, ভোম্বল সাহা, বৈদ্যনাথ সাহাকে খুন করে এই পাকি হানাদার বাহিনী এই নুলা মুসার সহযোগিতায় একাত্তরে এই নুলা মুসা যে একাই তার সব অপকর্ম করেছে নগরকান্দায় তা নয় । তার লুটপাটের সহযোগী হিসেবে যাদের নাম খুবই উল্লেখযোগ্য , তারা হলো , মজিদ বিহারী ,আবুল বিহারী ,কালু বিহারী, চান্দা, ভেটকা, আয়নাল, আইয়ূব, অনু,পান্নু, চন্দন,রবি,হাম্মাদ মৌলানা সহ অনেক পাকি দোসর । নিত্যানন্দ কবিরাজ, সুখেন্দু রায়,মুক্তিযোদ্ধা আজাদ সিদ্দীকি অহিভূষন পোদ্দার, ধীরেন সাহা, চন্দ্রকান্ত পোদ্দার সহ আরো অনেক নিরীহ মানুষের বাসায় আজকের ডক্টর প্রিন্স মুসা বিন শমশের আগুন ধরিয়ে দেয় । এই লাহিড়ীপাড়া,ওয়ারলেস পাড়া,শোভারামপুর সহ বিভিন্ন এলাকার নির্যাতিত মানুষের মুখে মুখে আজও সেই নির্যাতনের গল্প আর মুসার বিভিষীকাময় সে গল্প রূপকথার গল্পকেও হার মানায় তার দুই সময়ের কর্মকান্ডে ।
আমার হাতে ওই দুইটি বই ছাড়া যেহেত আর কোনো প্রমান নেই এবং যেহেতু এই ব্যাক্তির অপরাধ আদালতে প্রমাণিত নয়, তাই আমি এই ব্যাক্তির নামে কোনো মন্তব্য করব না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আজ এতটা বছর কেন কোনো তদন্তের নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই? তিনি আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতার বেয়াই বলেই কি? প্রশ্নটা রেখে গেলাম…