লিখেছেন জর্জ মিয়া
পর্ব ১
মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে একই ব্যক্তি কী করে হয়ে গেলেন এমন ক্ষমতালোভী, নারীলিপ্সু, যুদ্ধবাজ একজন নেতা তথা ধর্মপ্রচারক? ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বনি কুয়ানুকা, ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে বনি নাদির আর ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে বনি কুরাইজা নামের ইহুদি গোত্রকে আক্রমণ করে তাদের হত্যা করেন। বনি কুয়ানুকার ইহুদিদের সাতশ জনকে এক সকালের মধ্যে হত্যা করতে সচেষ্ট হন, আর বনি কুরাইজার প্রায় আটশ থেকে নয়শ লোককে আক্ষরিক অর্থেই ‘কচুকাটা’ করেন, এমনকি তারা আত্মসমর্পণ করার পরও। হত্যার ভয়াবহতা এতোই বেশি ছিলো যে, ক্যারেন আর্মস্ট্রং-এর মতো লেখিকা, যিনি মুসলিম সমাজের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় হিসবে গণ্য হন, তিনি পর্যন্ত মুহম্মদের কর্মকাণ্ডকে নাৎসি ভয়াবহতার সাথে তুলনা করেছেন। খাইবার দখলের পর মুহম্মদ (দঃ) সাফিয়া নামের ১৭ বছরের সুন্দরী ইহুদি নারীকে অধিগ্রহণ করেন এবং তা করেন তার বাবা-মা, ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজনকে হত্যার পরপরই। রায়হানাকে অধিগ্রহণ করেন বনি কুরাইজা দখলের পর।
বহু ইসলামী স্কলার মনে করেন, মদিনায় নাজিল হওয়া জঙ্গি ও অমানবিক আয়াতগুলো আসলে আগে মক্কায় নাজিলকৃত শান্তিময় আয়াতগুলোকে বাতিল করে দেয়। মদীনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সহী বুখারি এবং কোরানের অনুবাদক ডঃ মুহম্মদ খান পরিষ্কর করেই বলেন, “আগে বিধর্মীদের সাথে লড়াই নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো, কিন্তু পরে সেটা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়।”
জালালুদ্দিন সুতি আরো পরিষ্কার করে বলেন, “মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর (সুরা ৯:৫) – এই আয়াতের মাধ্যমে আগেকার সকল পরমতসহিষ্ণু নির্দেশকে বাতিল করা হয়েছে।”
হানিফা দর্শনে প্রভাবিত ছিলেন আরও একজন। তিনি খলিফা ওমরের চাচা জায়েদ বিন আমর । তিনিও পৌত্তলিক পরিবারেই জন্মগ্রহন করেছিলেন, পরবর্তীতে আব্রাহামীয় দর্শনে কনভার্ট হন এবং পুরো রমজান মাস তিনি “হেরা গুহা” নামক স্থানে উপাসনায় মগ্ন থাকতেন। যা পরবর্তীতে মোহাম্মদ অনুসরণ করেন। এমনকি হাদিস থেকেও জানা যায়, ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নবী মোহাম্মদ তখন পৌত্তলিক দেব-দেবীদের উপাসনা করতেন, কোরবানি দেয়া মাংস রান্না করে জায়েদের জন্য নিয়ে যেতেন তার সাথে খাওয়ার জন্য। তখন এই জায়েদ বিন আমরই মুহাম্মদকে তিরস্কার করতেন পৌত্তলিকতার কারনে। একেশ্বরবাদ চর্চার পরামর্শ দিতেন নিয়মিত। (বুখারি, খণ্ড ৭, বই ৬৭, হাদিস ৪০৭)
চার্বাকদের মতই ছিলো এদের আচরণ। পার্থক্য শুধু নিরীশ্বর- ও একেশ্বরবাদে। হানিফ দলের লোকেরাও একটা সময় এই ‘পৌত্তলিকতার ওপরে প্রকাশ্যে অনাস্থা প্রকাশ করে বসে। যার কারণে কাবার দায়িত্বে থাকা কোরাইশদের সঙ্গে বিবাদের রোষে পড়েই অনেক হানিফাকেই তখন দেশান্তরী হতে হয়। মোহাম্মদের পৌত্তলিকতার থেকে বেরিয়ে একেশ্বরবাদী চর্চার সব থেকে বড় সাহায্যকারী হলেন এই জায়েদ বিন আমর ও ওয়ারাকা বিন নওফল। “ওয়ারাকা বিন নওফল নিজে তৌরাত, জবুর ও ইঞ্জিল বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং তিনি ইঞ্জিলের আরবী অনুবাদক।” (বুখারী, খণ্ড ৬, বই ৬০, হাদিস ৪৮৭ এবং খণ্ড ১, বই ১, হাদিস ৩)
এখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে, মোহাম্মদের নবীগিরি কোনো অলৌকিকতা নয়। তিনি ছিলেন তৎকালীন ধর্ম বিষয়ে জানাশোনা এবং একেশ্বরবাদ থেকে প্রভাবিত, যিনি তাঁর মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইছলাম’ নামে। মোহাম্মদ ইছলাম প্রতিষ্ঠায় তাঁর জীবদ্দশায় প্রায় শতাধিক যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, বদরের যুদ্ধ প্রথম যুদ্ধ।
এটাও সত্য নয়। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে ইয়াসরীব হিজরতের ৯ মাসের মাথায় এক কোরায়েশ কাফেলার ওপরে হামলা করেন মোহাম্মদ। তবে এই হামলার নেতৃত্বে মোহাম্মদ ছিলেন না। উল্লেখ্য যে, সে যুদ্ধে মুছলমানরা সফল হতে পারেনি। আমাদেরকে বোঝানো হয় যে, মোহাম্মদ যতগুলো যুদ্ধ করেছেন, তার সবই নাকি আত্মরক্ষার্থে! এটাও ডাঁহা মিথ্যে। যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, তার প্রায় সবই হয়েছে অর্থ-সম্পদ লুটপাটের জন্য। বদরের যুদ্ধের আগেও ক্রমাগত হামলা পরিচালনা করা হয়। যার মধ্যে বোয়াতের হামলা, কাহারের হামলা , ওয়াদ্দানের হামলা, সাহওয়ানের হামলা, নাখালার হামলাগুলো উল্লেখযোগ্য।
এখন মনে প্রশ্ন জাগে, তবে এ হামলাগুলোর কথাগুলো ইছলামী স্কলাররা চেপে যান কেন? উত্তর: হয় তেমন বিশেষ সুবিধে করতে না পারাই এই হামলাগুলোর ব্যাপারে চেপে যাওয়ার মূল কারণ।স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন জাগে তখন মনে। মোহাম্মদকে তো কখনো কোরাইশরা বা অন্য কোনো শত্রুপক্ষ আক্রমণ করেনি। তাহলে কেন মোহাম্মদ এতগুলো যুদ্ধ করছেন? যেমন বলা যায়, বনি মোত্তালিক গোত্র অথবা সিরিয়া থেকে বাণিজ্য করে বাড়ি ফেরা কোরায়েশ বণিক দল তো মদিনা আক্রমন করেনি। তাহলে কেন মোহাম্মদ তাদের ওপরে চোরাগোপ্তা হামলা চালালেন? আসলে সম্পদ আহরণই এই হামলাগুলোর মূল কারণ। আসলে এগুলোকে যুদ্ধও বলা ঠিক হবে না। পেছনে থেকে হামলা, রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা কোনো যুদ্ধ নয়। এগুলো স্রেফ ডাকাতি!
ইছলাম ধর্মে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হয় – অন্য ধর্মের সাথে কোনোরকম বন্ধুত্ব নয়। অবিশ্বাসীদের সুযোগ পেলেই হত্যা করতে হবে। সে ধর্মের অনুসারীরা জঙ্গি তথা ইছলামী সন্ত্রাসী হবে না – এটা ভাবাই তো বোকামি। ইছলাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তরবারি আর অন্যের সম্পদ লুট করে। – এই সত্যটা আমাদের জানতে দেয়া হয় না। কৌশলে-চতুরতায় এড়িয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য আমার মনে হয়, আমাদের অঞ্চলের ইছলামের খেদমতকারীদের কয়জনই বা জানেন এসব?
খ্রিষ্টান, ইহুদি ও পৌত্তলিকতার মিশেলে এক ধরনের জগাখিচুড়ির নাম এই ইছলাম। যেমন, হজ্ব তেমনই এক পৌত্তলিক রীতি। কালো পাথরে চুমু খাওয়া, মুযদালিফায় রাত্রি যাপন, জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করা – এগুলো সবই ছিলো পৌত্তলিক রীতি। সেলাইবিহীন ঢিলেঢালা বস্ত্র পরিধান, কালো পাথরকে চুমু খাওয়া কিংবা স্পর্শ করা, সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ানো, আরাফাতে অবস্থান এবং শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপের প্রথা ইসলাম-পূর্ব যুগেও আরবে প্রচলিত ছিল এবং সামান্য কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে এগুলো বজায় রেখেছেন মোহাম্মদ তাঁর ধর্ম ইছলামে। পৌত্তলিক আরবরা কাবা ঘরকে প্রদক্ষিণকালে লাত, ওজ্জা, মানতসহ আরও অনেক গোত্র দেবতার নাম উচ্চারণ করত। যেমন, “হে মানত, আমি তোমার আদেশ পালন করতে প্রস্তুত” (লাব্বায়েকা) এবং দেবদেবীর নাম ধরেও উচ্চারিত হতো। ইছলামে এই ধরনের সম্মোধনের রীতি আল্লাহকে সম্বোধন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে এবং তা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায়, ‘লাব্বায়েকা আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক!’ পৌত্তলিক আরবরা অনেক সময় নগ্ন হয়ে কাবা ঘরকে প্রদক্ষিণ করত। মোহাম্মদ তা নিষিদ্ধ করে সেলাইবিহীন বস্ত্র পরিধানের রীতি প্রচলন করেন।
কালো পাথরে চুমো খাওয়া প্রসঙ্গে খলিফা ওমর বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চিতরূপে জানি, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।” [বুখারি (ইফা), অধ্যায়: ২২/ হজ্ব (হাজ্জ), হাদিস ১৫১০]