ইসলামের ধংসাত্নক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে কিছু কথা

পৃথিবীর যে কোন জায়গাতেই বুদ্ধ মূর্তি, কালি-দুর্গা-গণেশের মূর্তি মুসলমানদের হাতে ভাংচুরের ইসলামী অথেনটিক সোর্স রয়েছে। কাজটি পুরোপুরি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এবং নির্দেশে করা হয়। ইসলাম কিন্তু অন্যের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসও করে। তাহলে অন্যের পুজার মূর্তি ভাঙা কি করে ইসলাম সম্মত হয়? কি খুব জটিল মনে হচ্ছে না? আসলে খুবই জলের মত সহজ জিনিসকে জটিল করে তুলেছে ইসলামের তাকিয়াবাজী কৌশলের কারণে। আপনি যখনই একদল মূর্তি ভাংচুরকারীর কাজকে সামনে নিয়ে আসবেন তখন ওমনি কিছু লোক এসে সাফাই গাইতে শুরু করবে, ইসলাম অন্যের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, যারা এমনটা করেছে তারা ইসলাম না জেনেশুনেই করেছে ইত্যাদি।

আসল সত্যটা হচ্ছে ইসলামে কেবল তাদেরই ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে যাদের নবীদের উপর কিতাব নাযিল হয়েছিলো। অর্থ্যাৎ সেমিটিক ধর্মের অনুসারী যাদের নবী আছে তাদেরকেই ইসলাম আহলে কিতাব বলে। এদের মুসলমানদের কাছে বশ্যতা শিকারবসত নির্দিষ্ট শর্ত মেনে ধর্ম পালনের অধিকার আছে। তবে এ জন্য তাদের জিজিয়া কর দিতে হবে। তারা মুসলমানদের যে রাষ্ট্রে বসবাস করবে সেই রাষ্ট্রের মালিক তারা নয়। মুসলমানরাই সেরাষ্ট্রে ভালমন্দের বিধাতা। জিজিয়া এবং বিশেষ শর্তের ভিত্তিতে তারা কেবল মুসলমানদের কাছ থেকে নিরাপত্তা ভোগ করবে। কিন্তু নুন্যতম এর ব্যতয় ঘটলে মুসলমানরা তাদের উপর যে কোন প্রতিশোধ নিতে পারবে। ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা বা নিযুক্ত কাজি সেই বিচার করে দিবেন। অর্থ্যাৎ ইসলামের যে রাষ্ট্র চিন্তা তাতে কেবলমাত্র আহলে কিতাবীদের স্থান শর্ত সাপেক্ষে মিলতে পারে। বুঝাই যাচ্ছে প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলে ইহুদী-খ্রিস্টানরা হবে মুসলমানদের দয়ায় তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। কড়জোরে জিজিয়া দিয়ে তাদের নতমস্তকে মুসলমানদের দেশে বাস করতে হবে।

তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রে হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈনদের কি হবে? সাফ কথা হচ্ছে, তাদের জন্য ইসলামের পক্ষ থেকে কোন সুখবর নেই। ইসলাম মতে তাদের ইসলাম গ্রহণ করে নিজেদের রক্ষা করা ছাড়া আর কোন গতি নেই। নয়ত মুসলমানদের হাতে তাদের গর্দান যাবে। তাদের সম্পত্তি গণিমত হবে। তাদের নারীরা গণিমত হয়ে মুসলমানদের হেরেমে চলে যাবে। গণিমত হওয়া থেকে অবশ্য আহলে কিতাব মানে ইহুদী-খ্রিস্টানদেরও নিস্তার নেই। কারণ এই পৃথিবী হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূলের। কাজেই এখানে থাকা সমস্ত সম্পত্তি কেবল মুসলমানদের।

নবীজি ইহুদী-খ্রিস্টানদের কিছু ছাড় দিলেও, তাদের গির্জা উপসনালয় টিকে থাকতে দিলেও কোন পৌত্তলিক প্যাগন মন্দির ও মূর্তি আস্ত না রাখতে আদেশ দিয়ে গেছেন। তার চাচাতো ভাই ও জামাতা আলীকে এই সংক্রান্ত নির্দেশ সম্বলিত সহি হাদিস রয়েছে। নবী বলেছেন, ‘আলী, যখনই কোন মূর্তি দেখবে, তা ভেঙ্গে টুকরো না করে ছাড়বে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা, ১৬৯৬)। অপর হাদিসে আয়েশা বলেন, রাসূল (ছা:) স্বীয় গৃহে প্রাণীর ছবিযুক্ত কোন জিনিসই রাখতেন না। দেখলেই ভেঙ্গে চূর্ণ করতেন (বুখারী, মিশকাত হা, ৪৪৯১, হা, ৪২৯২)।

মক্কা (বর্তমান গবেষণায় দেখা যাচ্ছে স্থানটা আসলে জর্ডানে) দখলের পর মুহাম্মদ কুরাইশ প্যাগনদের এই শর্ত দিয়েছিলো যে তারা যদি বিনাশর্তে ইসলাম গ্রহণ করে তবে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। নচেৎ তাদের কল্লার মালিক হবে মুসলমানরা। এই শর্তে যারা মানতে চায়নি তাদের রক্তে খালিদ বিন ওয়ালীদের সারা শরীর ভিজে গিয়েছিলো। ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবার পর ইহুদী খ্রিস্টানদের তখনো আশেপাশে অস্তিত্ব থাকলেও একজনও প্যাগন পৌত্তলিকের চিহৃ ছিলো না। তবে ইহুদী খ্রিস্টানদের বিষয়েও ইসলাম কখনই খুব প্রসন্ন ছিল না। সহি হাদিসে আছে মৃত্যুর আগে তার শেষ অছিয়ত ছিলো সাহাবীদের উদ্দেশ্যে, ‘আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বহিষ্কার করবে’ (বুখারী-২৮২৫)। আরেক জায়গায় নবী বলেছেন, ইহুদী ও নাসারাদের আরব থেকে বের করে দেব, এখানে মুসলিম ছাড়া কেউ থাকবে না (আবুদাউদ-৩০২০)।

ইসলাম পুরোপুরি দলিল নির্ভর ধর্ম। দেখবেন ধার্মীক মুসলমান সব সময় বলবে কুরআন হাদিসে এটা নেই- ওটা আছে। মুসলমানদের অমুসলিমদের ঘৃণা করতে বলা হয়েছে- এটাও দলিল নির্ভর। কুরআন নির্দেশ দিচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রেøর আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ ৯:২৮। এই আয়াতের তাফসির করে ইবনে কাথির বলেছেন যে, এই আয়াত দ্বারা এটাই প্রতিয়মাণ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মুশরিকদের সাথে মুসাফাহা করবে সে যেন তার হাতটি ধুয়ে নেয়, কারন ২৮ নং আয়াত বলছে মুশরিকরা হলো অপবিত্র।…’(ইবনে কাথিরের তাফসির, খন্ড-৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১শ পৃষ্ঠা নং-৬৭৪)।

ধর্ম যেহেতু অপরিবর্তনশীল কাজেই ইসলামের এই সকল নির্দেশ তার অনুসারীদের কাছে তাত্ত্বিকভাবে আজো জাগ্রত। ইসলামের হাতে পৃথিবী ক্ষমতা চলে আসলে সে তাই করবে যা কুরআন হাদিসে বলা আছে। যেহেতু মানুষকে দাস বানাতে ইসলাম নিষেধ করেনি বরং নিজেই দাস ব্যবসা করেছে, নারীদের যৌনদাসী করেছে, মূর্তি পুজারীদের হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছে- তাত্ত্বিকভাবে এখনো এইসব ভয়ংকর মানবাধিকার বহির্ভূত নির্দেশনা একজন ধার্মীয় মানুষের অন্তরে লুকায়িত থাকে। বাংলাদেশে মুসলমানরা ৯০ ভাগ। কাজেই এখানে যে মন্দির আর মূর্তিতে হামলা হবে এটাই বাস্তব। মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের একটা ছোট ওয়াজের ভিডিও দিচ্ছি যেখানে তিনি বুখারীর সেই মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশ দিচ্ছেন। এই কাজগুলো ওয়াজের মত ধর্মীয় জলসাতে ঘটে। পৃথিবীর আর কোন ধর্মালয়ে এভাবে বিধর্মীদের বিষয়ে বিষেদাগার করতে দেখা যায় না। অন্তত ধর্মীয় অথেনটিক সোর্স ধরে।