প্রশ্নবিদ্ধ মেধাতালিকাঃ ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষা , পর্ব ১
বাংলাদেশে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের সমাপনী পরীক্ষা, পড়াশোনা শেষ করে চাকরীতে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যেসব পরীক্ষা দিতে হয় তার সবই পাবলিক পরীক্ষা বলে গন্য করা হয়। আমাদের সবার জীবনই এ চক্রের ভেতর দিয়ে একবার করে ঘুরে আসতে হয়েছে। যাদের এসব পরীক্ষা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই মানে যা আশা করেছিল তাই ফল হিসেবে পেয়েছিল তারা খুবই ভাগ্যবান। কিন্তু এদের সংখ্যা খুবই নগন্য।
যে কোন পাবলিক পরীক্ষায় আমরা ধরে নেই-
১। খাতাটি সঠিকভাবে মুল্যায়ন করা হয়েছে
২। পরীক্ষকের ভুলত্রুটি নিরীক্ষকের হাতে সংশোধন করা হয়েছে
৩। ভেতরে পাওয়া নম্বর ঠিকভাবে খাতার উপরে লেখা হয়েছে।
৪।সঠিকভাবে নম্বর যোগ করা হয়েছে
৫। প্রাপ্ত নম্বরের উচ্চক্রম অনুসারে মেধাতলিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
৬। পরীক্ষার ফলাফলের পর সঠিক ব্যাক্তিটিই পুরস্কৃত হচ্ছে।
কিন্তু না বাংলাদেশে তেমনটি হচ্ছে না।
আসুন আমরা দেখি ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও তার প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে প্রদত্ত বৃত্তি দেয়ার ক্ষেত্রে কি ঘটেছিল।
তথ্য অধিকার আইনে দেশের একটি উপজেলার বৃত্তিপ্রাপ্ত ছেলেদের প্রাপ্ত নাম্বার জানতে চাই। সেই সাথে যারা বৃত্তি পেতে পারত কিন্তু পায়নি তেমন সম্ভাবনাময় কয়েকজনেরও নাম্বার এবং উত্তরপত্র দেখতে চাই। তথ্য কমিশনে পরপর তিন শুনানী শেষে কমিশনাররা বুঝতে পারেন দুর্নীতির মাত্রা ভয়াবহ। যেখানে আমরা সবার তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম সেখানে তিনবার শুনানী শেষে আমাদের মাত্র দুইজনের (দৈব চয়নের ভিত্তিতে) তথ্য দিতে আদেশ দেয়া হয়। দুর্নীতির ভয়াবহতা রোধে তথ্য কমিশন মাঝে মাঝেই এ কাজ করে। বিস্তারিত এখানে
সেই দুইজনের তথ্যেই বেরিয়ে আসে অনিয়ম, গাফিলতি ও দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র।
রোল নং ২৭২৭ বৃত্তি পেয়েছে তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা (৯৬), ইংরেজি(৭২), গনিত (৯৫), বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (৯৬), ইসলাম ধর্ম (৯৫) ও বিজ্ঞান (৯৮) সর্বমোট ৫৫২।
অপরদিকে রোল নং ৫৪৭৩ বৃত্তি পায়নি তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা (৮৬), ইংরেজি(৮৮), গনিত (৯৬), বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (৮৭), ইসলাম ধর্ম (৯২) ও বিজ্ঞান (৯৫) সর্বমোট ৫৪৪।
এখানে লক্ষ্যনীয় ব্যাপার, বৃত্তিপ্রাপ্ত রোল নং ২৭২৭ জিপিএ ৫ পায়নি, আর তাদের দুজনের নম্বরের ব্যবধান ৮।
প্রাপ্ত ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে –
১। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রোল ২৭২৭ বাংলায় পেয়েছে ৯১ কিন্ত তাকে দেয়া হয়েছে ৯৬। তাহলে প্রকৃত নম্বর হয় ৫৫২-৫=৫৪৭। বাংলা পুরো উত্তরপত্র পাবেন এখানে,
আগ্রহীরা যোগ করে দেখতে পারেন।
২। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রোল ২৭২৭ কে ইংরেজিতে একটি প্রশ্নে ঘষামাঝা করে দুই নাম্বার বাড়ানো হয়েছে। ৫৪৭-২=৫৪৫।
৩। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৪(গ) নং উত্তরে বৃত্তিপ্রাপ্ত রোল ২৭২৭ প্রশ্নের সাথে অসামঞ্জস্য উত্তর লেখার পরেও ৩ পেয়েছে। [৫৪৫-৩=৫৪২]।
অপরদিকে একই প্রশ্নের উত্তরে ৫৪৭৩ রোল নম্বরধারী সঠিক উত্তরদিলেও শুন্য পায়। [৫৪৪+৩=৫৪৭]।
বৃত্তিপ্রাপ্ত রোল ২৭২৭ এর মোট নম্বর দাঁড়ায় ৫৪২।
বৃত্তিহীন রোল ৫৪৭৩ এর মোট নম্বর দাঁড়ায় ৫৪৭। গনেশ পুরো উলটে গেছে।
বৃত্তিপ্রাপ্ত ২৭২৭ এর বাংলা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার উত্তর পত্র।
বৃত্তিহীন ৫৪২৭ এর বাংলা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার উত্তর পত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বৃত্তিহীন রোল নং ধারী ৫৪৭৩ এর স্কুলের ক্লাস পজিশন ৩। তার আগে আরো দুইজন মেধাবী শিক্ষার্থী আছে যারা বৃত্তি পায়নি। অপরদিকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী পরে আরো প্রায় ৩০ জনের মত আছে।
তাহলে উপসংহারে আসা যায় যে,
১। খাতা ঠিক মত মুল্যায়ন হয় না।
২। নিরীক্ষক পুর্ননিরীক্ষন করে না
৩। নম্বর ঘষামাজা করা হয়
৪। পছন্দের প্রার্থীদের বেশি নম্বর দেয়া হয়, অপছন্দের প্রার্থীদের কম নম্বর দেয়া হয়
৫। অযোগ্যপ্রার্থী পুরস্কৃত হচ্ছে
৬। দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা ও ইচ্ছাকৃতভাবে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়।