১২ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫

লেখকঃ মুক্তি
শুভ জন্মদিন বন্ধু….
গুল্লু, তোমাকে অনেক মিস করি ৷ বিশ্বাস হয় না এখনো যে তুমি নেই ৷ খুব মন খারাপ লাগে, কেন তোমার সাথে আরো বেশি যোগাযোগ রাখিনি…নিজেকে নিয়ে, নিজের জীবন আর জীবনের বিভিন্ন চড়াই-উতরাই নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম গত দুই বছর…তুমি এর মধ্যে কথা বলতে চেয়েছিলে, আমি বলেছিলাম, “বিবিধ যন্ত্রণার মধ্যে আছি…যখন আবার ভালো থাকবো, তখন কথা বলবো…”…মন ভালো হবার আগেই তোমাকে চলে যেতে হলো…কেমন অদ্ভূত লাগে এই জীবন, চলে যাওয়ার পর একটু যদি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতো…কত না-বলা-কথা প্রিয়জনদের, কাছের বন্ধুদের বলার থাকে…একটু যদি বলা যেত! খুব স্বার্থপর লাগে নিজেকে, ঠিকই তো আছি…খাচ্ছি-দাচ্ছি ঘুরে বেড়াচ্ছি…ছোট কষ্ট আর ছোট সুখ নিয়ে অকারণ উতলা হচ্ছি…আর যে মানুষটা নেই, সে তো নেই…আর আসতে পারবে না গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন-এ, যেতে পারবে না পেরু-তে অথবা ফ্লোরেন্সে…কথা বলতে পারবে না কারো সাথে…মুগ্ধতা, ভালোবাসা, আর গর্বের সাথে বলতে পারবে না তার প্রিয় বন্যা আর তৃষার কথা…
মনে আছে গুল্লু, আমার হাইকিং-এর একটা ছবি-তে তুমি কমেন্ট করেছিলে, ২৫শে ফেব্রুয়ারী-তে, “কোক-এর এড এ নামসো নাকি, মুক্তি , ভাল লাগছে কিন্তু!” (February 25 at 5:38am, arizona time) …..আমি উত্তরে লিখেছিলাম, “Hiking করতে গিয়ে coke খেলে খবরই ছিল, গুল্লু! বলতে পারো পানির অ্যাড… And thank you ” এর মাত্র ২৬ ঘন্টা পরে আমার বন্ধুকে ভয়ঙ্করভাবে মেরে ফেলা হলো ৷ ওই ছবিগুলো চোখ থেকে মন থেকে কিছুতেই সরেনা….তোমার ভীষণ খোলা হাসিমাখা মুখের ছবি…সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হবার স্মৃতি; তার পাশেই বন্যার হাহাকার…পাশে তোমার পড়ে থাকার ছবি ৷ যারা তোমাকে মেরেছে, তারা জানে না কত মানুষের অপরিসীম ঘৃণা কষ্ট তাদের আজীবন আমরণ দগ্ধ করবে…

ভালো কিছু লিখবো ভেবেছিলাম গুল্লু, কিন্তু শুধু মন খারাপের কথাই লিখছি ৷ আচ্ছা, ছোটবেলার কথা বলি ৷ ছোটবেলা থেকে আমরা সামনাসামনি বিল্ডিং-এ থাকতাম, আমি ১৪/ই, গুল্লু ১৩/জি…গুল্লু বারান্দায় বসে থাকতো অনেক সময়…চোখাচোখি হলেই সেই খোলা হাসি! একদম ছোটবেলা থেকে অনেক বছর….১২ বছর…একই স্কুল-এ একই সেকশন-এ ছিলাম আমরা…প্রিয় উদয়নে নার্সারী থেকে এসএসসি পর্যন্ত একসাথে ৷ ফুলার রোড-এর আর ব্রিটিশ কাউন্সিল-এর সামনের ফুটপাথে আমাদের গান আর আড্ডায় মাঝে মাঝে দূর থেকে হেটে আসতো গুল্লু…এমনিতে একটু চুপচাপ ছিল…কিন্তু খুব স্মার্ট আর witty …আর সবসময় হাসি থাকতো ওর মুখে…কয়েকদিন আগেও আমি আরিফকে বলছিলাম, সেই চুপচাপ গুল্লু যে এত চিন্তাভাবনা করে, এত ভালো লিখবে, এত বড় লেখক হবে, আমি কখনো ভাবিনি! আমার বন্ধু কত বড় লেখক! ২০১২-তে ওর ৪-টা বই পাঠিয়েছিল আমাকে, আমি আমার কবিতার বইটাও পাঠিয়েছিলাম ওকে… কিছুদিন আগে ওর ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটা আমাকে পাঠাতে বলেছিলাম, ও পাঠিয়েছিল, বলেছিল পড়ে যেন ওকে জানাই, কেমন লেগেছে….বলেছিলাম, “নেক্সট টাইম বন্যার বই না পাঠালে খবর আছে তোমার!” iPad -এ Transliteration App ব্যবহার করে বাংলা লেখার কথা ওই আমাকে শিখিয়েছিল; লেখালেখির ব্যাপারে আমাকে active করতে চেয়েছিল আরো ৷ ২০১৪ অগাস্ট-এ কথা হচ্ছিল ফেইসবুক-এ, ওর মেয়ে তৃষা Johns Hopkins University তে undergrad program এ ভর্তি হয়েছে, এসব নিয়ে…বলছিলো, “মেয়েটা দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেল…” যখন জানতে চেয়েছিলাম তৃষা কি পড়বে, লিখেছিলো, “Trisha got admitted to JHU, but she has not decided her major yet. Initially she thought to concentrate on bioengineering, but now she has a wide range starting from biology, engineering to law . She is little bit a ‘lovy dovy’ type girl. If she would be able to write poems just sitting under a tree, I guess she would do so happily throughout her entire life. Unfortunately there is no major on that subject, you know! JHU has a very flexible course curriculum, which suits her personality. So we will be curiously watching where eventually she ends up …”
তৃষা, কি major সিলেক্ট করলে তুমি? গুল্লুর মেসেজ-টা এখানে কপি করলাম তৃষা, তোমার মুখে যেন একটু হাসি আসে আজকে, তাই…

গুল্লু তুমি লিখেছিলে, “জানোই তো … একদিন ঝড় থেমে যাবে পৃথিবী আবার শান্ত হবে, ধরণী আবার উঠবে হেসে ! কি বল !”
সবই হবে হয়তো, কিন্তু তোমাকে পাবোনা বন্ধু ৷
ভালো থেকো, বন্ধু, যেখানেই থাকো…
শুভ জন্মদিন
-মুক্তি