নির্বাচনী ইশতেহারে যৌন সংখ্যালঘুদের জায়গা হবে কি?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আর এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই খুব শীঘ্রই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এই ইশতেহারে জনগণের উদ্দেশ্যে নানা প্রতিশ্রুতি দেন রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও নির্বাচনে জয় লাভ করার পরে এই সব ইশতেহার তারা বেমালুম ভুলে যান। তবুও এই ইশতেহার জনগণের জন্য কিছুটা প্রাপ্তিই বলা চলে। কিন্তু এই সামান্য প্রাপ্তিটুকুও জুটে নি বাঙালী যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য।
মৌলবাদীদের ভয়ে কিংবা নিজেদের সংকীর্ণ চিন্তাধারার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দলই যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আগত নির্বাচনী ইশতেহার উপলক্ষে যৌন সংখ্যালঘুদের নিয়ে কোন রকম প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো ধর্মবাদী দলগুলো ক্ষমতায় আসলে যৌন সংখ্যালঘুদের উপরে আরও কঠোর শাস্তির বিধান আসতে পারে। যা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে রুপ নিতে পারে।
প্রগতীশীল দাবিদার দলগুলোও ভোটের লোভে সাময়িক মুফতি হয়ে উঠেছে। ফলে সব দিক থেকে যৌন সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ধর্ম নিরপেক্ষ আদর্শে উদ্বোদ্ধ হয়ে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল। যৌন সংখ্যালঘুরাও এই সংগ্রামী মানুষের তালিকায় ছিল। যদিও প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ করা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু যৌন সংখ্যালঘুরা যে ছিল না তা কখনই বলা যায় না। আর বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কারণে সকল নাগরিকের মানবাধীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তা না হয়ে বরং বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানপন্থী অপশক্তিগুলোর মাধ্যমে এ দেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যার রেশ বর্তমানেও কাটেনি।
একজন নাগরিকের অধিকার খর্ব হলে তার দায় রাষ্ট্ররে উপরেই বর্তে, সেখানে লক্ষ লক্ষ যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধীকার খর্ব হচ্ছে আর তার দায় এড়িয়ে যাওয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক নয় কি? তাই সকল যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কিছু দাবি তুলে ধরা হলঃ
১. নির্বচনী ইশতেহারে যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
২. যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গিকার ব্যক্ত করতে হবে।
৩. সংসদে যৌন সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন দিত হবে।
৪. যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. মহান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ৩৭৭ ধারাটি অতিসত্তর বাতিল করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. যৌন সংখ্যালঘুদের প্রতি ভীতি প্রদর্শনকারী ও জীবন নাশের হুমকি প্রদানকারী জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. নারী, পুরুষ এবং শিশু ধর্ষণে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে।
উপরোক্ত আট দফা দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অব্যাহত রাখা এবং সকল নাগরিকের মানবাধীকার রক্ষার জন্য আসন্ন নির্বাচনে আংশগ্রহণকারী সকল দলের প্রতি অনুরোধ করা হল।