১) একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিমের চোখে হযরত মুহাম্মদ আসলে কেমন?
২) একজন মুক্তমনা নাস্তিকের চোখে হযরত মুহাম্মদ আসলে কেমন?
১) ব্যখ্যাঃ
একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিমের দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদের হযরত মুহাম্মদ ছাড়া ভিন্ন কিছু হওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ কোরআন-হাদিস অনুসারে, আল্লাহ পাক মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই হযরত মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন মানব জাতির জন্য সর্বশেষ এবং শ্রেষ্ঠ বার্তাবাহক হিসেবে। স্বভাবতই তিনি হযরত মুহাম্মদকে সেই সব গুণাবলী দান করেছেন, যার দ্বারা হযরত মুহাম্মদ আসলে হযরত মুহাম্মদে পরিণত হয়েছে। এমনকি ছোট বেলাতে তার বুক দুইভাগ করে ক্বলব পরিষ্কার করার কথাও জানা যায়, যার কারণে সে পাপ-মুক্ত হয়েছিল। সেই সব গুণাবলী যদি আল্লাহ পাক রাম শাম যদু মধু নামক ব্যক্তিকেও প্রদান করতেন, সেও হযরত মুহাম্মদ হয়ে যেতেন। তাই ইসলাম অনুসারে হযরত মুহাম্মদের বিন্দুমাত্র কোন কৃতিত্ব বা ভূমিকা বা গুরুত্ব নেই, সবই আল্লাহ পাকের করুণা এবং ইচ্ছা মাত্র। হযরত মুহাম্মদ আল্লাহ পাকের ইচ্ছা পালন ছাড়া বিশেষ কিছুই করেন নি।
২) ব্যাখ্যাঃ
অন্যদিকে একজন মুক্তমনা নাস্তিকের দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ নিতান্তই দোষে গুণে ভরপুর একটি মানবিক সত্ত্বা। তার যা গুণ রয়েছে সেগুলোও তার, তার যা দোষ রয়েছে তাও তারই। এখানে ঐশ্বরিক কোন ব্যাপার স্যাপার নেই। তিনি তার সারা জীবন ব্যয় করেছেন তৎকালীন প্রথা এবং প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। এই সংগ্রামে তার উপরে নানা ধরণের অত্যাচার হয়েছে, নানা সময়ে তিনি নিজেও অত্যাচার করেছেন, বিধর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করতে হয়েছে, এমন সব কাজ করতে হয়েছে যা সমালোচনার যোগ্য, কিন্তু তারপরেও তার কিছু কাজ অবশ্যই সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। মানব সভ্যতায় যদি সবচাইতে প্রভাব-বিস্তারকারী মানুষগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়, তার নাম সবার উপরের দিকেই থাকবে। তার যা অর্জন তা তার দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল, তার যা ভাল কাজ তা তার মানবিক বোধ থেকে উৎপন্ন। অপরদিকে তার যা খারাপ, সেগুলোও তারই। তার যা অমানবিকতা, হত্যা লুণ্ঠন গনিমতের মাল ভোগ অথবা যৌন-জীবন, এগুলোও তারই কাজ। গুণের দায় ঈশ্বরের বা দোষের দায় শয়তানের নয়, রক্ত মাংসের মানুষের দোষ ত্রুটি গুণাবলী সবই সেখানে উপস্থিত।
>> অর্থাৎ একজন মুক্তমনা নাস্তিকই সত্যিকার অর্থে হযরত মুহাম্মদের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম। একজন ধর্মান্ধ মুসলিম শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদের গুণাবলী সম্পর্কে জেনে আল্লাহ পাকের অসীম করুণার জয়গান করতে পারে, কারণ ওসবে হযরত মুহাম্মদের কোন অবদান নেই-তিনি তো উছিলা মাত্র। একজন মুক্তমনা নাস্তিকই হযরত মুহাম্মদকে ইতিহাসে তার বস্তুনিষ্ঠ জায়গা দিতে পারে। ভাল মন্দ মিলিয়েই। একজন মানুষ হিসেবে।